কলকাতা, 19 সেপ্টেম্বর: দু'বছর কেটেছে করোনায় ৷ পুজোপ্রেমীরা সেভাবে মশগুল হতে পারেননি পুজোর আনন্দে ৷ আর এবার করোনার প্রকোপ কাটিয়ে বাঙালি যে পুজোয় মেতে উঠবে তা বলাই বাহুল্য ৷ হাতে গোনা মাত্র আর ক'টা দিন। তারপরেই বাংলার এবং বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজো (Durga Puja 2022)। তাই যাঁরা ঠাকুর দেখতে বেরোবেন তাঁদের সুবিধার কথা মাথায় রেখেই এবার সারারাত চলবে বেসরকারি বাস (Bus Service) ৷ যদিও এক্ষেত্রে একটি শর্ত রয়েছে ৷ বেসরকারি বাস মালিকদের সংগঠন জানিয়েছে, যদি বর্ধিত ভাড়ায় হাত না পড়ে (Whole Night Bus Services During Durga Puja) তাহলে পুজোর সময় সারারাত পরিষেবা দিতে কোনও অসুবিধা নেই তাদের ৷
কয়েকটি বেসরকারি বাস সংগঠন সারারাত বাস চালাতে রাজি হলেও একাংশের বেসরকারি বাস মালিক পক্ষ সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে জ্বালানির খরচ সামাল দিয়ে সারা রাত পরিষেবা দেওয়া বাতুলতা মাত্র । গত দুই বছর করোনা আতঙ্কে মানুষজন উপভোগ করতে পারেনি এই উৎসব। তাই এবার পুজোর অনেক আগে থেকেই একাধিক রাস্তায় ভিড় বেড়েই চলেছে। তাই সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্যই এই বছর এহেন ব্যবস্থা নিয়েছে পরিবহন কর্তৃপক্ষ। পুজোর চারটে দিন পর্যাপ্ত সংখ্যার বাস পথে নামানো হবে যা চলবে নির্দিষ্ট রুটে। তবে ট্রাফিকের থেকে যে রুটগুলিতে নো এন্ট্রি বা বাসের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে সেই রুটগুলি এড়িয়ে বাকি রুটে সারাদিন এবং সারারাত বাস পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন: পুজোর চার দিন মেট্রো চলবে ভোর চারটে পর্যন্ত
অন্যদিকে, বেসরকারি বাস মালিক সংগঠনের একাংশ জানিয়েছে যে দুর্গাপুজোর সময় সারাদিন-সারারাত পথে যাত্রী থাকবে তাই বাসও চলবে। এই বিষয়ে অল বেঙ্গল বাস ও মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, "2019 সাল পর্যন্ত পুজোর দিনগুলোতে অর্থাৎ ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত চব্বিশ ঘণ্টা বেসরকারি বাস চলত। কিন্তু গত দুই বছর তাতে ছেদ পড়েছিল। এবছর আবার পুরনো ছন্দ ফিরেছে জনজীবন। তাই রাস্তায় যাত্রী থাকলে বাসও থাকবে। বর্তমানে যে ভাড়াতে বেসরকারি বাস চলছে তাতে যদি কোনও রকম ছেদ পড়ে তাহলে বাসের সংখ্যা অবশ্যই কমবে। তবে সংগঠনের পক্ষ থেকে কোন বাস মালিককে বর্ধিত ভাড়া নেবে কি নেবে না সেই বিষয়ে কোনও নির্দেশ দেওয়া হবে না। কারণ জ্বালানি খরচ, যন্ত্রাংশের খরচ, গাড়ি মেরামতের খরচ বহন করে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হবে তাঁদেরও।"
তিনি আরও বলেন, "সরকারের তরফে ভাড়া নিয়ে আমাদের কাছে যদি কোনওরকম নির্দেশ আসে তাহলে আমরা সেক্ষেত্রে পরিষেবা হয়তো চালিয়ে যেতে পারব না। কারণ এটা মাথায় রাখতে হবে যে 2018 সালের পর বেসরকারি বাসের ক্ষেত্রে আর ভাড়া বাড়েনি। বেসরকারি পরিবহণের ক্ষেত্রে এক টাকাও দিতে হচ্ছে না সরকারকে, উলটে তারা রাজস্ব পাচ্ছেন। বেসরকারি পরিবহনের বর্তমানে রুগ্ন অবস্থা। এই বিষয় নিয়ে তাদের চিন্তা ভাবনা করতে হবে।"
আরও পড়ুন: বাস-অটোচালকদের অশান্তিতে বন্ধ পরিষেবা, আসানসোলে ভোগান্তিতে যাত্রীরা
পাশাপাশি ওয়েস্ট বেঙ্গল বাস অ্যান্ড মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক প্রদীপনারায়ণ বসু বলেন, "এই বছর বিশ্বকর্মা পুজোর থেকেই মানুষের ঢল নেমেছে রাস্তায়। তাই যাত্রী পরিষেবা দিতে পুজোর সময় রাস্তায় বাস পাওয়া যাবে। সারারাত রাস্তায় যাত্রী থাকলে বাসও থাকবে। কারণ বাস মালিকদেরও তেলের খরচ তুলতে হবে পাশাপাশি তাঁরাও সারারাত বাস পরিষেবা দিতে পারলে চালক ও কন্ডাক্টারও একটা বাড়তি টাকা পায়।" পাশাপাশি তিনি এও বলেন, "বাস মালিকরা ব্যবসা টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে যে বর্ধিত ভাড়াটা নিচ্ছেন যাকে আমরা অনুদান বলছি তাতে যদি কোনওরকম হস্তক্ষেপ হয় তাহলে পরের দিন থেকেই বাস বন্ধ হয়ে যাবে।"
অন্যদিকে জয়েন কাউন্সিল অফ বার সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "পুজোর দিনগুলিতে সারাদিন বাস চালালেও রাতে বাস পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয়। জ্বালানি খরচ উঠবে না। কারণ পুজোর সময় রাস্তায় যে পরিমাণে যানজটের সৃষ্টি হয় তাতে যে পরিমাণে তেল পুড়বে সামাল দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে বাস মালিকদের পক্ষে। 2018 সালে এই রাজ্যে শেষ বাস ভাড়া বেড়ে ছিল। তারপর থেকে রাজ্যে দুই জন পরিবহনমন্ত্রী পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু বাস ভাড়া বাড়েনি। বর্তমানে ডিজেল লিটার প্রতি 100 টাকা ছুঁই ছুঁই। পরিবহণ ব্যবস্থা সচল রাখতে গেলে বাস ভাড়া বৃদ্ধি ছাড়া কোনও বিকল্প রাস্তা নেই। এই অবস্থায় পুজোর সময় সারাদিন বাস পরিষেবা দিতে পারলেও রাতে বাস চালানো সম্ভব নয়।"
আরও পড়ুন: দেবীপক্ষের আগেই ঝাড়গ্রাম মল্লদেব রাজপরিবারের শুরু দুর্গাপুজো