কলকাতা, 22 সেপ্টেম্বর : ভবানীপুরের উপনির্বাচনের প্রচারে বারবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে একশো শতাংশ ভোট দেওয়ার কথা বলতে শোনা যাচ্ছে । এমনকি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হয়েই তিনি বলছেন, কর্মী-সমর্থকদের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস থেকে ভোট দিতে না যাওয়া তার জন্য বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। রাজনৈতিক মহলে অনেকেই মনে করছে এহেন ঘটনা মুখ্যমন্ত্রীর অতিরিক্ত সতর্কতার বহিঃপ্রকাশ। আবার কেউ কেউ বলছেন, ভয় পাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলে এই আসনে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস। যদিও একুশের নির্বাচনে এখানে স্বস্তির জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তাই অতীত মনে রেখে অতিরিক্ত মাত্রায় সাবধানী মমতা।
এই প্রসঙ্গে আজ বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু বলেছেন, "রাজ্যে তৃণমূল সরকারের এক তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হারা বা জেতার উপর সরকারের ভাগ্য নির্ভর করে না। তিনি হেরে গেলে তার দলের অন্য কেউ মুখ্যমন্ত্রী হবেন। এমতাবস্থায় নির্ভয় হয়ে নির্বাচনে লড়াই করতে পারতেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তার বদলে তিনি একথা বলছেন তার অর্থ তিনি হেরে যেতে পারেন- এই আশঙ্কার থেকেও বড় হয়ে চেপে বসেছে তাঁর অবিশ্বাস। আর সে কারণেই এই কথা বলছেন মমতা।"
অন্যদিকে, সিপিএম নেতা রবীন দেবের কথায়, এটা আসলে এক ব্যক্তি এক দলের সুর। এই কারণেই 213 জন বিধায়ক থাকতেও তিনি একজন জয়ী বিধায়ককে পদত্যাগ করালেন। করোনা আবহে মুখ্যমন্ত্রীর জন্য নির্বাচন জনগণের উপর চাপিয়ে দেওয়া হল।
অন্যদিকে, তৃণমূল বিধায়ক তথা দলীয় মুখপাত্র তাপস রায় বলেন, "নিন্দুকেরা অনেক কিছু বলে, সব কথায় কান দিলে হয় না। এটা আসলে নিজের রেকর্ড নিজে ভাঙার প্রয়াস। এখানে মমতার প্রতিদ্বন্দ্বী মমতাই । তাই এটা আসলে অতীতকে ছাপিয়ে যাওয়ার প্রয়াস।"
মমতার এই বক্তব্যতে তাঁর হারের শঙ্কা দেখছেন বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক তথা প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায়। এদিন তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, "নন্দীগ্রামের পরাজয়ের পর থেকে কোনও কিছুকেই হালকাভাবে নিতে চাইছেন না মমতা। এর মধ্যে অবশ্যই তাঁর একটা পরাজয়ের ভয় তো আছেই। এক্ষেত্রে তিনি নিশ্চিত নন যে নির্বাচনে তিনি জিতবেনই। আর সে কারণেই তিনি এইসব ধরনের কথা বলছেন, সব মানুষের ভোট চাইছেন।" তিনি আরও বলেন, "মুখ্যমন্ত্রীর নিজের গড় হলেও নন্দীগ্রামের পরাজয়ের কারণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছুটা অস্থির হয়ে পড়েছেন। সেই অস্থিরতা থেকে এসব বলছেন।"
আরও পড়ুন: আমি না জিতলে অন্য কেউ মুখ্যমন্ত্রী হয়ে যেতে পারে, ভোটপ্রচারে বললেন
এদিন একইভাবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন রেজিষ্ট্রার রাজা গোপালধর চক্রবর্তী বলেন, "অতীত একটু পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পূর্বে যত মুখ্যমন্ত্রী উপনির্বাচনে লড়াই করেছেন তাঁদের জিতে আসার ক্ষেত্রে তেমন সমস্যা হয়নি। এক্ষেত্রে তাঁরও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তবে অতীতের ফল দেখে হয়তো কিছুটা আতঙ্কিত মুখ্যমন্ত্রী। 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওয়ার্ডে এগিয়েছিল বিজেপি। একুশের বিধানসভা নির্বাচনেও ভালই লড়াই দিয়েছিল। তাই এখন থেকেই বাড়তি সতর্ক তিনি। নন্দীগ্রামের মতো এখানে আর হারতে চান না। তাই এই সতর্কতা।"