কলকাতা, 25 এপ্রিল : কোরোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য ওষুধ হিসেবে কলকাতায় শুরু হতে চলেছে প্লাজ়মা থেরাপির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ । কিন্তু এই প্লাজ়মা থেরাপি কী ? কেন এর প্রয়োগ করা হচ্ছে ?
কোরোনায় আক্রান্ত যেসব রোগী সুস্থ হয়ে যান, তাঁদের শরীরে অ্যান্টিবডি বা প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে যায় । অন্য ভাইরাসের সংক্রমণের ক্ষেত্রেও শরীরে তৈরি হয় অ্যান্টিবডি । ওই অ্যান্টিবডি অর্থাৎ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্য কোনও রোগীর শরীরে প্রয়োগকে বলে সিরাম বা প্লাজ়মা ট্রিটমেন্ট । বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্লাজ়মা ট্রিটমেন্ট করা হয় । যেমন, অ্যান্টি ডিপথেরিক সিরাম, অ্যান্টি টিটেনাস সিরাম । যাঁরা গুরুতর অসুস্থ, তাঁদেরকে প্লাজ়মা ট্রিটমেন্ট দেওয়া হলে অনেকটা উপকার পেতে দেখা গেছে ।
একথা জানিয়ে কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ইমিউনো হেমাটলোজি অ্যান্ড ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের প্রধান, চিকিৎসক প্রসূন ভট্টাচার্য বলেন, "SARS বা MERS-এ যেমন চিকিৎসা করা হত, তেমনই কোরোনার ক্ষেত্রে প্লাজ়মা ট্রিটমেন্ট বিভিন্ন স্থানে হচ্ছে । কোরোনা নতুন ডিজ়িজ়, তাই কোরোনায় সুস্থ রোগীর সিরাম বা প্লাজ়মা সংগ্রহ করে, তা প্রক্রিয়াকরণ এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে কোরোনা আক্রান্ত কোনও মুমূর্ষ রোগীর শরীরে প্রয়োগ করা হবে ।"
100 বছর আগেও প্লাজ়মার ব্যবহার হয়েছে । যখন কোনও চিকিৎসা ছিল না, এমন কিছু কিছু রোগের ক্ষেত্রে প্লাজ়মার ব্যবহার করা হয় । এ কথা জানিয়ে কনসালট্যান্ট হেমাটোলজিস্ট চিকিৎসক প্রান্তর চক্রবর্তী বলেন, "আমরা ধরে নিচ্ছি, যাঁদের কোরোনা ভাইরাস ইনফেক্ট করছে, তাঁরা যদি নিজে থেকেই সুস্থ হয়ে যান, তার মানে তাঁদের রক্তে কিছু একটা আছে যেটি এই ভাইরাসকে আক্রমণ করে তাঁদেরকে সুস্থ করতে সাহায্য করছে । এজন্য যেটি মেপে দেখা হয়, সেটি হল ভাইরাল অ্যান্টিবডি অর্থাৎ অ্যান্টি কোরোনা ভাইরাস অ্যান্টিবডি । তবে, কোরোনায় সুস্থ কোনও রোগীর এই অ্যান্টিবডি যে কোরোনা আক্রান্ত কোনও রোগীর শরীরে প্রয়োগ করলেই তা কাজ করবে এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই ।"
শরীরে কতটা অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, তা জানার জন্য র্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্টের কথা বলা হয়েছিল । একথা জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, "ধরে নেওয়া হচ্ছে, কোরোনায় আক্রান্ত কোনও সুস্থ মানুষের প্লাজ়মা যদি কোরোনায় আক্রান্ত কাউকে দেওয়া হয়, যিনি খুব ক্রিটিকাল অবস্থায় ভেন্টিলেটরে রয়েছেন, তাহলে তাঁর ক্ষেত্রে এটা কাজ করতে পারে । এটা যেহেতু এখনও প্রমাণসাপেক্ষ থেরাপি নয়, সেই জন্য এর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়েছে।" তিনি আরও জানিয়েছেন, সুস্থ রোগীর প্লাজ়মা অসুস্থ রোগীর শরীরে প্রয়োগের মাধ্যমে অসুস্থ রোগীর প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করা হয় ।
চিকিৎসক প্রান্তর চক্রবর্তী আরও বলেন, "কোথাও একজনের উপর এই প্লাজ়মা থেরাপির প্রয়োগ হচ্ছে এবং তিনি সুস্থ হয়ে উঠছেন, এ রকম তথ্য ভিত্তিহীন । কোরোনা চিকিৎসায় ক্লিনিকাল ট্রায়াল হিসেবে প্লাজ়মা থেরাপির প্রয়োগ করা হচ্ছে । অধিকাংশ রোগী সুস্থ হলে তখন বোঝা যাবে এটা কাজ করছে কি না ।"
প্রান্তর চক্রবর্তীর কথায়, "কোরোনায় সুস্থ কোনও রোগীর শরীরে যদি ভালো পরিমাণে অ্যান্টিবডি থাকে, তাহলে এই অ্যান্টিবডি কোরোনায় আক্রান্ত কোনও রোগীকে দেওয়ার জন্য ওই সুস্থ মানুষের প্লাজ়মা সংগ্রহ করা হবে । সুস্থ হওয়ার পরে 28 দিন পেরিয়ে গেছে, এমন ক্ষেত্রে প্লাজ়মা সংগ্রহ করা হবে । সুস্থ হওয়ার পরে 14 দিন পরেও প্লাজ়মা সংগ্রহ করা যেতে পারে । তবে, এ ক্ষেত্রে ওই সুস্থ মানুষের সোয়াবের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট যদি পর পর দু'বার নেগেটিভ আসে, তাহলে তাঁর প্লাজ়মা সংগ্রহ করা যেতে পারে । কোরোনায় আক্রান্ত হয়েছেন কিন্তু কোয়ারানটিনে রয়েছেন, সুস্থ হয়ে উঠেছেন, তবে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভরতি করাতে হয়নি । কোরোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর এমন সুস্থ মানুষের প্লাজ়মা কোরোনায় আক্রান্ত কোনও রোগীর শরীরে প্রয়োগের জন্য সংগ্রহ করা হবে ।" বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রসূন ভট্টাচার্য বলেন, "কোরোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে হাসপাতালে ভরতি থেকেছেন, সুস্থ হয়ে ওঠার 28 দিন পরে এরকম কোনও মানুষের প্লাজ়মাও সংগ্রহ করা হবে ।"
কীভাবে প্লাজ়মা সংগ্রহ করা হয়, কীভাবে এই প্লাজ়মা দেওয়া হয় কোনও রোগীকে?
চিকিৎসক প্রান্তর চক্রবর্তী বলেন, "হোল ব্লাড সংগ্রহ করে তা থেকে প্লাজ়মা পৃথক করা যায় । তবে, মেশিনের মাধ্যমেও কোনও মানুষের শরীর থেকে শুধুমাত্র প্লাজ়মা সংগ্রহ করা হয় । কোনও রোগীকে যেরকমভাবে রক্ত দেওয়া হয়, প্লাজ়মাও সেভাবে দেওয়া যায় । একজনের শরীর থেকে সংগৃহীত প্লাজ়মা চারজনকে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা যায় ।"
এবিষয়ে চিকিৎসক প্রসূন ভট্টাচার্য বলেন, "কোরোনায় আক্রান্ত সুস্থ কোনও মানুষের শরীর থেকে মেশিনের মাধ্যমে শুধুমাত্র প্লাজ়মা সংগ্রহ করা হবে । প্রক্রিয়াকরণ, পরীক্ষা নিরীক্ষার পরে এই প্লাজ়মা কোরোনায় আক্রান্ত কোনও রোগীকে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হবে । তবে, এই প্লাজ়মা যাকে দেওয়া হবে, তাঁর শরীরের প্লাজ়মা বের করে নিয়ে তার পরে এই প্লাজ়মা তাঁকে দেওয়া হবে, এরকম নয় । যেভাবে রক্ত দেওয়া হয়, সেভাবে প্লাজ়মা দেওয়া হবে ।"
কোরোনায় সুস্থ রোগীর সিরাম বা প্লাজ়মা সংগ্রহের পরে কেন ওই প্লাজ়মার পরীক্ষার প্রয়োজন ?
চিকিৎসক প্রসূন ভট্টাচার্য বলেন, "প্লাজ়মায় অ্যান্টিবডি কতটা পরিমাণে রয়েছে, তা দেখা হয় । প্লাজ়মায় অন্য কোনও সংক্রমণ রয়েছে কি না, সে সব-ও দেখা হয় ।" এবিষয়ে চিকিৎসক প্রান্তর চক্রবর্তী বলেন, "কোরোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরে সুস্থ কোনও মানুষের শরীর থেকে সংগৃহীত প্লাজ়মার সঙ্গে যে অ্যান্টিবডি আসবে, সেই অ্যান্টিবডিতে কোনও সংক্রামণ রয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখে নিতে হয় ।"