কলকাতা, 30 মার্চ : একটা সময় তাঁদের ইন্টেলিজেন্স সুরক্ষা দিয়েছে রাজ্যবাসীকে । আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সামনের সারিতে থাকতেন তাঁরা । এখন বয়সের কারণে স্বাভাবিকভাবেই অবসর নিয়েছেন সেসব পুলিশ কর্তারা । এই সময় বিশ্বজুড়ে চলছে কোরোনার দাপট ৷ চিকিৎসকরা বলছেন, প্রবীণদের অত্যন্ত সাবধানে দিনযাপন করতে হবে ৷ সবাইকে কার্যত গৃহবন্দি হয়ে থাকার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা ৷ কিন্তু এক সময় যেসব দোর্দণ্ডপ্রতাপ পুলিশ কর্তার দাপটে বাঘে-গোরুতে এক ঘাটে জল পান করত, তাঁরা এই সময় কী করছেন? খোঁজ নিল ETV ভারত ।
একটা সময় রাজ্যের ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের IG ছিলেন পঙ্কজ দত্ত । অবসর নিয়েছেন কয়েক বছর আগে । বর্তমানে থাকেন সল্টলেকে । অবসর নেওয়ার পরেও ওই প্রাক্তন পুলিশ কর্তা জড়িয়ে রয়েছেন বেশ কিছু কর্মকান্ডে । ফলে জীবন কাটে ব্যস্ততাতেই । লকডাউনের ঘোষণার পর থেকে অবশ্য বাড়িতেই কাটাচ্ছেন পঙ্কজবাবু । বই পড়ে ও পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাছেন তিনি ৷ ETV ভারতকে পঙ্কজবাবু লকডাউনের সময় তাঁর দিনযাপনের কথা জানালেন । তিনি বললেন, “ এই সময়ে আমি চোখ ভরে প্রকৃতিকে উপভোগ করছি । আমি যেখানে থাকি তার চারপাশে প্রচুর সবুজ । সেই সবুজের মাঝে বুক ভরে শ্বাস নিচ্ছি । তার সঙ্গে প্রাণায়াম, যোগব্যায়াম, শরীরচর্চা সবই করছি । এই সময় সবার কাজ হচ্ছে শারীরিক ও মানসিকভাবে নিজেকে ফিট রাখা । পাশাপাশি নিজেকে স্পিরিচুয়ালি ফিট রাখার কথাও আমি বলব । এই তিনটে জিনিস যে ঠিকঠাক মানতে পারবে, আমি বলব তাঁকে কোরানাও স্পর্শ করতে পারবে না । আমি আপাতত সেটাই করছি । পাশাপাশি এখন অখণ্ড অবসর পেয়েছি । এই সময় আমি বেশ কিছু বই পড়ছি । পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি । সবমিলিয়ে আমি বলব এই সময়টা আমার জীবনের অন্যতম সেরা সময় ।’’
একটা সময় কলকাতা পুলিশের দোর্দণ্ডপ্রতাপ কর্তা ছিলেন দেবেন বিশ্বাস ৷ DC হেডকোয়ার্টারের মতো দায়িত্ব সামলেছেন । দেবেনবাবুও বেশ কিছু দিন আগে অবসর নিয়েছেন । ETV ভারতের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন এই সময় তাঁর অবসর যাপনের কথা । দেবেন বাবু বললেন, “এখন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর প্রাণায়াম, যোগব্যায়াম-সহ শরীর চর্চা করছি । মন ভরে করছি সূর্য প্রণাম । তারপর জলখাবার সেরে বইপত্র নিয়ে বসছি । বইপত্র পড়ে কখন যে সময় কেটে যাচ্ছে বুঝে উঠতে পারছি না । তারপর যতটা পারছি পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ সহজপাচ্য খাবার খাই । যেটা এই সময়ের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ । ইমিউনিটি ঠিক রাখা জরুরি । সুষম আহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । তাই দুধও খাচ্ছি । দুপুরে একটু বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যেবেলায় খবর দেখছি । দেখছি এই সময় গোটা পৃথিবীর আপডেট । পাশাপাশি যখন সময় পাচ্ছি তখন আমার পরিচিতদের খবর নিচ্ছি । রানাঘাটের মানুষজনের খবরা-খবর রাখছি ।" প্রসঙ্গত একটা সময় রানাঘাটের বিধায়ক ছিলেন দেবেনবাবু । বাম আমলে তিনি সেখান থেকে নির্বাচিত হন । রানাঘাটের মানুষজনের সঙ্গে রয়েছে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এখনও রয়েছে । দেবেন বাবু বলে চলেন, “রানাঘাটের কোন মানুষ যদি বিপদে পড়ছেন তবে আমি যতটা পারি তাঁকে সাহায্য করছি । পরিচিতদের অযথা বাইরে ঘোরাঘুরি করতে মানা করেছি ৷’’
দার্জিলিংয়ের আগুনঝরা দিনে আর কে হান্ডা ছিলেন সেখানকার পুলিশ সুপার । ডিসি পোর্ট বিনোদ মেহতা খুন খাওয়ার পরও তাঁর ডাক পড়ে । অশান্তির সেইদিনগুলোতে তাঁর হাতেই ছিল বন্দর এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব । বিনোদ মেহতার পর আর কে হান্ডা ডিসি পোর্টের দায়িত্ব পান । কড়া পুলিশ কর্তা হিসেবে তার নাম ছিল একটা সময় । সেই হান্ডা এখন থাকেন সল্টলেকে । বয়স থাবা বসিয়েছে শরীরে । তিনি অবশ্য খুবএকটা বাইরে বেরোন না ৷ তিনি বললেন, “ এই সময়টায় বেরনোর কোন প্রশ্ন নেই । এই সময় পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছি । চুটিয়ে নানা ধরনের বই পড়ছি । সঙ্গে যতটা পারছি শরীরচর্চা করছি । আমার এক পোষ্য কুকুর আছে । ওর সঙ্গে খুনসুঁটিতে অনেকটা সময় চলে যায় । সঙ্গে আছে নাতি । আমার বেস্ট ফ্রেন্ড । ওর সঙ্গে অনেক গল্প আর খেলাধুলা করছি । সত্যি বলতে কি এমন একটা অবসর জীবনে হয়তো দরকার ছিল । সাধারণ মানুষকে বলব এমন একটা অবসর পেয়েছেন যেটাকে চুটিয়ে উপভোগ করুন । দেখবেন জীবনটা অত্যন্ত সুন্দর ।"