কলকাতা, 4 নভেম্বর : শারীরিক অবস্থার সামান্য উন্নতি হলেও শেষরক্ষা হল না ৷ রাজ্যের মন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের (Subrata Mukherjee) প্রয়াণ ঘটল দীপাবলীতে । বৃহস্পতিবার এসএসকেম-এ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী ৷
এদিন রাত 8.15 নাগাদ অবস্থায় অবনতি হওয়ায় উডবান ওয়ার্ড থেকে সুব্রতবাবুকে ফের আইসিইউ-তে স্থানাস্তরিত করা হয়েছিল ৷ কিন্তু চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয় ৷ মত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল 75 বছর ৷ সম্প্রতি হৃদযন্ত্রের দুটি আর্টারিতে ব্লকেজ ধরা পড়ায় এসএসকেএম-এ অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি হয় সুব্রত মুখোপাধ্য়ায়ের। তার পরে শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলেও এদিন রাতে তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। তাঁকে প্রয়োজন মতো বাইপ্যাপ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এদিন রাতেই তাঁর অবস্থায় অবনতির খবর পেয়ে বাড়ির কালীপুজো ছেড়ে দ্রুত এসএসকেম-এ যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তার পরই অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "আমরা দীর্ঘদিনের সহকর্মীকে হারালাম ৷ আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন সুব্রতদা ৷ আলোর দিনে এমন অন্ধকার নেমে আসবে ভাবতেও পারিনি ৷ আমি সুব্রতদার দেহ দেখতে পারব না ৷ সেই জন্যে আমি দেহর সঙ্গে কোথাও যেতেও পারব না ৷"
পরে শোকপ্রকাশ করে বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, "সুব্রতদা ক্রেতা সুরক্ষা, স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি দফতরের মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন ৷ হাসিমুখে তিনি জেলায় জেলায় ঘুরে আমাদের সরকারের কাজে অতুলনীয় অবদান রেখেছেন ৷ এছাড়াও কলকাতার মেয়র হিসাবে কলকাতার সামগ্রিক উন্নয়নে তাঁর বিশেষ ভূমিকা স্মরণীয় ৷"
স্মৃতিরোমন্থন করে মুখ্যমন্ত্রী আরও লেখেন, "সুব্রতদা ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত থেকেছেন ৷ ছাত্র আন্দোলনের সময় থেকেই আমি তাঁর সঙ্গে থেকেছি, তাঁর নেতৃত্বে বড় হয়েছি... ৷ সুব্রতার সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক ছিল ৷ তিনি আমার অগ্রজ ও অভিভাবকতুল্য ছিলেন ৷ তাঁর প্রয়াণ আমার কাছে এক বিরাট ক্ষতি শুধু নয়, রাজ্যের তথা দেশের রাজনৈতিক জগতে এক শূন্যতার সৃষ্টি ৷" বার্তায় মুখ্যমন্ত্রী তাঁর পরিবারের প্রতিও সমবেদনা জানিয়েছেন ৷
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাহাড় সফর চলাকালীনই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সুব্রত । রবিবার বিকেলে এসএসকেএম-এর উডবার্ন বিভাগে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করানোর জন্য ভর্তি করা হয়েছিল তাঁকে । রাতে অবস্থার অবনতি হওয়ায় কার্ডিয়োলজি বিভাগের আইসিইউ-তে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল । ছয় সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড তৈরি করে পর্যবেক্ষণে রাখা হয় মন্ত্রীকে, যাতে শামিল রয়েছেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ সরোজ মণ্ডল, সিসিইউ স্পেশালিস্ট অসীম কুণ্ডু, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সৌমিত্র ঘোষ, রেসপিরেটরি মেডিসিন স্পেশালিস্ট সোমনাথ কুণ্ডু ৷ এন্ডোক্রিনোলজি স্পেশালিস্ট সুজয় ঘোষ এবং নেফ্রোলজি স্পেশালিস্ট অর্পিতা রায়চৌধুরী ।
এসএসকেএম-এর এমএসভিপি পীযূষ রায় জানিয়েছিলেন, মন্ত্রীর হার্টের সমস্যা ছিল । সঙ্গে সিওপিডি, সুগার । এখনও বিপদমুক্ত নন তিনি। স্থিতিশীলও বলা যাবে না । তবে চেষ্টা করা হচ্ছে সব সময় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিত্সা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার । এমন পরিস্থিতিতে হাজার ব্যস্ততার মধ্যেও মন্ত্রীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী । বৃহস্পতিবারও ফোনে সুব্রতর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছিলেন তিনি । কিন্তু রাতে 9. 22 মিনিট নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সুব্রত মুখ্যোপাধ্যায় ৷