কলকাতা, 29 অক্টোবর : আশঙ্কাটা ছিলই । লকডাউনের পর মদের দাম অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় চোলাই মদের রমরমা ফিরে আসার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। সেই আশঙ্কা থেকে সম্প্রতি বিয়ার এবং দেশি মদের দাম কিছুটা কমিয়েছে রাজ্য সরকার । কিন্তু তার পরও এখনও পর্যন্ত দাম অনেকটাই বেশি । কারণ রাজ্য সরকারের বর্ধিত হারে কর আদায় । আর সেই সুযোগে ফের সক্রিয় হয়েছে চোলাইয়ের কারবার । ইতিউতি খবর মিলছে তেমনটাই । বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো চিন্তিত আবগারি দপ্তরের কর্তারা ।
সংগ্রামপুর বিষমদ কাণ্ডের ক্ষতে কিছুটা প্রলেপ পড়লেও ঘা শুকোয়নি এখনও । 2011 সালের সেই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল 200 জনের । ঘটনার জেরে 2018 সালে খোঁড়া বাদশা সহ 4 জনকে দোষীসাব্যস্ত করে সাজা দিয়েছে আদালত । ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে চোলাই বন্ধে তৎপর হয়ে উঠেছিল আবগারি দপ্তর । পুলিশের সাহায্য নিয়ে রমরমা কারবার অনেকটাই ঠেকানো গেছিল । দক্ষিণ 24 পরগনার উস্তি, ডায়মন্ড হারবারের কয়েকটি এলাকা, উত্তর 24 পরগনার তালবান্দা, হাওড়ার সাঁকরাইল, হুগলির বেশ কয়েকটি জায়গা সহ নদিয়া ও অন্যত্র যে চোলাই তৈরি হত তাতে রাশ টানা গিয়েছিল । তার বদলে রাজ্য সরকার সহজলভ্য করে দিয়েছিল বাংলা মদ । কিন্তু তার দাম এতটাই বাড়ানো হয়েছে যে মদ্যপরা পড়েছেন রীতিমতো সমস্যায় । আর যেসব মানুষ বাংলা মদ খেতে অভ্যস্ত হয়েছিল তাদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে চোলাইয়ের জোগান । বিভিন্ন সূত্র মারফত আবগারি দপ্তরের কর্তারা এমন খবরই পাচ্ছে।
আরও পড়ুন : গঙ্গারামপুরে চোলাইয়ের কারখানা ভেঙে আগুন ধরিয়ে দিলেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা
তার সত্যতার প্রমাণ পাওয়া গেল আজ সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ। একটি গাড়ি থেকে দুই মহিলার কাছে নামানো হয় 8টি প্যাকেট। বিষয়টি পুলিশের নজর এড়ায়নি। তারা মাঠপুকুর এলাকার মল্লিকপাড়া হরিজন ক্লাবের কাছে ওই দুই মহিলাকে আটক করে । তাদের নাম দীপ্তি কুণ্ডু এবং কল্পনা সর্দার । 58 বছরের দীপ্তি হুগলির চন্দননগরের বাসিন্দা । 45 বছরের কল্পনা ধাপা মাঠপুকুর এলাকার বাসিন্দা । তাদের কাছ থেকে একটি প্যাকেট উদ্ধার হয় । সেখানে ছিল মোট 144 লিটার জল না মেশানো চোলাই । সূত্রের খবর, 1 লিটার এধরনের চোলাইয়ে মেশানো হয় 5 লিটার জল । তারপর তা প্যাকেটজাত করে বিক্রি করা হয় । পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে ওই দুই মহিলাকে গ্রেপ্তার করে । পুরো বিষয়টি জানানো হয় আবগারি দপ্তরে ।
আরও পড়ুন : ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল চোলাই মদের ঠেক
রাজ্যে চোলাইয়ের রমরমা নিয়ে আবগারি দপ্তর হাত গুটিয়ে বসে নেই মোটেই । কারণ আবগারি কর্তারা কোনওভাবেই চান না ফের রাজ্যে ফিরে আসুক সংগ্রামপুর বিষমদ কাণ্ডের স্মৃতি। সেই সূত্রে সব জেলার আবগারি কর্তাদের সতর্ক করা হয়েছে আগেই । ফলও মেলে । আবগারি দপ্তর সূত্রে খবর, 28 মার্চ পুরুলিয়ায় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার হয় প্রচুর চোলাই । অন্যদিকে সক্রিয় হয়ে উঠেছে দক্ষিণ 24 পরগনার চোরাকারবারীরা । তার প্রমাণ মেলে গত 6 এপ্রিল । দক্ষিণ 24 পরগনা থেকে নদীপথে মহিষাদলে 1000 লিটার জলহীন চোলাই পাচারের চেষ্টা ভেস্তে দেওয়া হয় । উদ্ধার হয় সেই মদ । এই চোলাইয়ের সঙ্গে জল মিশিয়ে তৈরি হত অন্তত 5 হাজার লিটার চোলাই । ওই একই দিনে অন্ডালে চোলাইয়ের ঠেক ভাঙেন আবগারি কর্তারা । এই ঘটনাগুলিই আবগারি কর্তাদের মনে তৈরি করেছে আশঙ্কা । যেভাবে চোলাইয়ের রমরমা বাড়ছে তাতে আবার কোনও বড়সড় ঘটনা ঘটবে না তো ? প্রশ্নটা উঠছেই ।