কলকাতা, 6 নভেম্বর: রাজ্যে রেশন বণ্টন দুর্নীতিকাণ্ডে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক গত মাসে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ জানিয়েছেন, 2021 সালের আগের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না, কারণ সেই সময়ে তিনি মন্ত্রী ছিলেন না ৷ শুধু তাই নয়, তিনি মন্ত্রী হওয়ার পর থেকে রেশন সামগ্রী সংগ্রহ এবং বণ্টন পদ্ধতিতে একাধিক প্রযুক্তিগত কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন । দুর্নীতি রুখতেই এই পদক্ষেপ বলে দাবি মন্ত্রীর ৷ খাদ্য দফতর সূত্রে খবর, সাধারণ গ্রাহকদের কোনও অভিযোগ থাকলে, তার সমাধানের জন্যও একাধিক পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে ৷
রেশনের জন্য ধান-গম কেনা এবং গ্রাহকদের মধ্যে তা বণ্টন এই দুটি বিষয় দেখে দফতরের আলাদা দু'টি বিভাগ ৷ এই দু'টি বিভাগে একাধিক প্রযুক্তিগত কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। দফতরের কাজকর্মের আপডেট নিয়মিতভাবে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হচ্ছে । সেখানে বন্টনের হিসাব থেকে রেশনের জন্য খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহের যাবজ্জীয় তথ্য অনলাইন পদ্ধতিতে আপডেট হতে থাকে।
খাদ্য দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, রেশন বন্টনে ই-পস (ePOS) এর মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে আধারভিত্তিক প্রমাণীকৃত লেনদেন নিশ্চিত করা হয়েছে । যাদের বার্ধক্য বা অন্য কোনও কারণে আঙুলের ছাপ মেলে না সেক্ষেত্রে আইআরআইএস (IRIS) স্ক্যানার ব্যবহার করা হচ্ছে । খাদ্যশস্য বিতরণের সময় বাধ্যতামূলকভাবে ই-পস এর সঙ্গে সংযুক্ত আইআরআইএস স্ক্যানার ব্যবহার করবে রেশন ডিলাররা । IRIS স্ক্যানার এবং ওজনের স্কেলও বসানো হয়েছে 16 হাজার রেশন দোকানে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বাকি চার-পাঁচ হাজার দোকানে এই ওজনের স্কেলও ইনস্টল করা হবে বলে মন্ত্রী রথীন ঘোষ জানিয়েছেন।
মন্ত্রী জানিয়েছেন, খাদ্যশস্য কেনার ক্ষেত্রেও খাদ্য দফতর ইপস সিস্টেম ও ওজন স্কেল বাধ্যতামূলক করেছে । কন্ট্রোলার অফ লিগ্যাল মেট্রোলজিকে ব্লক/ পৌরসভা স্তরের গোডাউনে স্ট্যাম্পিং এবং ওজন স্কেলের ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে । অর্থাৎ রেশন বণ্টনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে যেমন গ্রাহকের নির্দিষ্ট নম্বর এবং তিনি কত কেজি রেশন সামগ্রী পাচ্ছেন তার হিসাব অনলাইন এর মাধ্যমে ওয়েবসাইটে আপলোড হচ্ছে, ঠিক তেমনি কোন চাষির থেকে খাদ্যশস্য কেনার সময় তিনি কত কেজি খাদ্যশস্য খাদ্য দফতরকে বিক্রি করছেন সেই তথ্যও ওয়েবসাইটে থাকছে । যাতে কোনওরকম কারচুপি না হয় তার জন্য ওজন স্কেল ব্যবহার করা হচ্ছে ।
আরও পড়ুন: আমি নির্দোষ, ইডি অন্যায় ও অনৈতিক কাজ করেছে; দাবি জ্যোতিপ্রিয়র
বর্তমান খাদ্য মন্ত্রীর কথায়, "রেশন ডিলার যদি কোনও গ্রাহককে নির্ধারিত পরিমাণের থেকে খাদ্যশস্য কম দেয় সেই তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে খাদ্য দফতরের কাছে চলে আসছে । আগের মাসের তথ্যের ভিত্তিতে পরবর্তী মাসে বা পরবর্তী সপ্তাহের রেশন সেই ডিলার পেয়ে থাকেন। ফলে ওজনের কারচুপি বা বরাদ্দ থেকে কম রেশন দেওয়ার কোনও জায়গা নেই। কিন্তু বহু ক্ষেত্রে দেখা যায় গ্রাহকরা ডিলারদের খাদ্যশস্য গ্রহণের পর তা অন্য কোথাও বিক্রি করে দেয়। এসব ক্ষেত্রে খাদ্য দফতরের বিশেষ কিছু করার থাকে না । কিন্তু এটা যদি অর্গানাইজড পদ্ধতিতে করা হয়ে থাকে, তখন অভিযোগ পেলে খাদ্য দফতর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।"
আরও পড়ুন: রাজ্যপালের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য ! অখিলকে বহিষ্কারের দাবিতে বোসকে চিঠি শুভেন্দুর
রেশন কেলেঙ্কারির অভিযোগের বিষয়ে মন্ত্রী রথীন ঘোষের বক্তব্য, "জেনে বুঝে অভিযোগ করুক । অভিযোগ করতেই পারে । কিন্তু সিস্টেম না-জেনেই কথা বলছে । রাজ্যের খাদ্য দফতরের ভূমিকায় খুশি কেন্দ্রীয় সরকার । রাজ্যের খাদ্য দফতর গণবণ্টন ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য ভাবে ভূমিকা নিয়েছে। সব কটি ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় কাজ করেছে খাদ্য দফতর। চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।"