কলকাতা, 7 মার্চ : মমতার বড় বড় কাট-আউটে শহর আগে থেকেই মুড়ে ছিল । ওয়ার্ডের পর ওয়ার্ড ঢেকে ফেলে হয়েছিল জোড়াফুলের পতাকা । এরই মধ্যে রবিবাসরীয় মোদির ব্রিগেড । সকাল থেকেই শিয়ালদা-হাওড়া স্টেশনের বাইরে বিজেপির কর্মী ও সমর্থকদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো । গেরুয়া ঝান্ডা হাতে ব্রিগেডমুখী মিছিল । মমতার সাধের নীল-সাদা কলকাতায় মোদির ব্রিগেড যেন কিছুটা গেরুয়া রঙ লেপে দিল আজ । ভিড় কেমন হল... সংযুক্ত মোর্চার থেকে কি বেশি ভিড় টানতে পাড়ল মোদির ব্রিগেড ? এইসব নিয়ে আলোচনা হতেই থাকবে... কিন্তু এরই মধ্যে একটি অত্যন্ত সুকৌশলী চাল খেলে দিয়ে গেলেন মোদি ।
বিধানসভা ভোটে এবার নিজেদের সর্বশক্তি নিয়ে লড়াইয়ে নামছে বিজেপি । রাজ্য রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের অনেকেই বলছেন, শহরের তুলনায় জেলাগুলিতে, বিজেপির পায়ের তলার মাটি অনেকটাই শক্ত । অন্যদিকে শহরের মধ্যে বিশেষ করে দক্ষিণ কলকাতা জোড়াফুলের শক্ত ঘাঁটি । এর মধ্যেও লোকসভা ভোটে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল বিজেপি । শ্যামপুকুর, জোড়াসাঁকোর মতো কেন্দ্রগুলি থেকে লিডও নিয়েছিলেন দিলীপ-কৈলাসরা । এবার কলকাতাবাসীর মনে আর বেশি করে জায়গা করে নেওয়ার চেষ্টা করছেন নরেন্দ্র মোদি । সম্ভবত সেই কারণেই কলকাতাকে সিটি অফ জয় থেকে সিটি অফ ফিউচার করার স্বপ্ন দেখিয়ে গেলেন আজ ব্রিগেড থেকে ।
বাংলার উন্নয়নের জন্য যে সরকারের বদল দরকার তা বারবার উঠে এল মোদির কথায় । বললেন, বাংলার উন্নয়নের জন্য আগামী 25 বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে । আর পরবর্তী পাঁচ বছরে তার ভিত্তিপ্রস্তর তৈরি হবে ।
আরও পড়ুন : বাংলা থেকে যা কেড়ে নেওয়া হয়েছে সব ফিরিয়ে দেওয়া হবে, আশ্বাস মোদির
2047 সালে যখন আমরা স্বাধীনতার শতবর্ষে পা রাখব, তখন দেশের মধ্যে শীর্ষে পৌঁছে যাবে বাংলা । এমনটাই আশ্বাস দিয়ে গেলেন বিজেপির ভাষায় দেশের প্রধান সেবক । স্বপ্ন দেখালেন, দেশের সেরা শহরের তালিকায় জায়গা পাবে কলকাতা । সিটি অফ ফিউচার হিসেবে পরিচয় পাবে কলকাতা । রাজ্যে যদি বিজেপির সরকার গঠন হয়, তাহলে শহরের সব ঝুপড়িবাসীদের পাকাবাড়ি করে দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিলেন ।
কলকাতার জন্য যখন একের পর এক প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন, তখনও রাজ্যের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে ছাড়েননি । রাজ্য শাসকদলকে নিশানায় নিয়ে বললেন, কমিশনবাজির জন্য কলকাতা বিমানবন্দরের কাজ আটকে রয়েছে । একইসঙ্গে কলকাতা মেট্রোর দ্রুত সম্প্রসারণের কথাও মনে করিয়ে দিলেন ব্রিগেডে মাঠ থেকে ।
বিজেপি যে রাজ্যে নিজেদের শক্তি ক্রমেই বাড়িয়ে চলেছে তা আজ ব্রিগেডের মাঠের ছবি থেকে স্পষ্ট । নরেন্দ্র মোদিও আজ ভিড় দেখে আপ্লুত । না বলে পারলেন না, এতগুলি বছরের রাজনৈতিক জীবনে তিনি নাকি এত বড় জনসমাবেশ আগে দেখিনি ।
আরও পড়ুন : তাঁর বন্ধু কারা, ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে জানালেন মোদি
রাজ্যে বিজেপির পদধ্বনি শুরু হয়েছিল পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকেই । উনিশের লোকসভা ভোটের আগে তা আরও প্রকট হয়েছিল । তবে সেইসময় বেশকিছু অপ্রীতিকর ছবিও সামনে এসেছিল, যা বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে একেবারেই যায় না । বিদ্যাসাগর কলেজের ক্যাম্পাসের ভিতরে বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তি ভাঙচুর হয়েছিল । অভিযোগ ছিল, বিজেপির কর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে । সেই সময় থেকেই কিছুটা হলেও শহরবাসীর কাছে বিজেপির ইমেজ কিছুটা খারাপ হয়েছিল । তবে এতসবের পরেও কলকাতার বেশ কয়েকটি কেন্দ্র থেকে এগিয়ে ছিল গেরুয়া শিবির । এবার সেই বিশ্বাসের জায়গাটাকেই আরও মজবুত করার চেষ্টা করলেন নরেন্দ্র মোদি । অন্তত কলকাতার জন্য ভুরিভুরি প্রতিশ্রুতি দেখে এমনটাই মনে করছেন রাজ্য রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা ।
এদিকে আরও একটি সমীকরণের ইঙ্গিত দেখছেন অনেকে । বিধানসভা ভোট নিয়ে মাতামাতি হলেও, রাজ্যে কিন্তু পৌরভোট এখনও বাকি । সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে পৌরভোটেও গেরুয়া আবিরে শহর ঢাকার জন্য তৈরি হয়েছে বিজেপি । নরেন্দ্র মোদির কলকাতাকে সিটি অফ ফিউচার করার প্রতিশ্রুতি কিন্তু সেইদিকেও ইঙ্গিত দিচ্ছে ।