কলকাতা, 25ফেব্রুয়ারি : দল যখনই কোণঠাসা হয়েছে তখনই তিনি পথে নেমেছেন ৷ পথে নেমে জন সমর্থনকে তাঁর দিকে টানার চেষ্টা করেছেন ৷ তাঁর মমতাময়ী ক্যারিশ্মাই তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসিয়েছিল ৷ আর যখন তৃতীয় বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পথে বিজেপি নামক ঝড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখনই ফের পথে নামলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ কতটা সাফল্য আসবে, তৃণমূল সরকার তৃতীয় বারের জন্য রাজ্যে ক্ষমতায় আসবে কি না, মুখ্যমন্ত্রীর মসনদে ফের মমতা আসবেন কি না, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামের সঙ্গে জুড়ে যাওয়া একাধিক অভিযোগ থেকে মুক্তি মিলবে কি না, এসবের উত্তর মিলতে বেশ কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে ৷ কিন্তু, আজ যেভাবে পেট্রল ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ব্যাটারি চালিত গাড়িতে বাড়ি থেকে নবান্ন পৌঁছালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নবান্ন থেকে ঘোষণা করলেন ফের একই ভাবে বাড়ি ফিরবেন, তা নিঃসন্দেহে অভিনব ৷ প্রতিবাদের ধরণ নতুনত্ব ৷ জনসংযোগের প্রক্রিয়া বৈচিত্রপূর্ণ ৷
বেশ কয়েকদিন ধরেই বিজেপি বিরোধী সুর সপ্তমে তুলেছেন তৃণমূল নেত্রী ৷ ভোট যত এগিয়ে আসছে ততই বিজেপি এবং তৃণমূল একে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমণ ততই বাড়াচ্ছে ৷ বিজেপি যখন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে একাধিক অভিযোগ করেছে তখন তৃণমূলও সেই অভিযোগের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছে ৷ আর এবার মানুষের ন্যূনতম চাহিদা - দ্রব্য মূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিকে সামনে রেখে প্রতিবাদের গুটি সাজালেন তৃণমূল নেত্রী ৷ ব্যাটারি চালিত স্কুটারে বাড়ি থেকে নবান্নে আসার এই পরিকল্পনা শুধু যে জনসংযোগ বৃদ্ধির হাতিয়ার হয়ে রইল তাই না পেট্রল ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদকে সপ্তমে তোলার প্রক্রিয়াও বটে ৷
আরও পড়ুন : মনীষীদের দর্শনেই সোনার বাংলা গড়ার ডাক নাড্ডার
চালক মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ৷ পিছনে সওয়ার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ দুজনের মাথায় হেলমেট ৷ মুখ্যমন্ত্রীর গলায় ঝোলানো পেট্রল ডিজেল সহ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে লেখা পোস্টার ৷ সামনে পিছনে নিরাপত্তারক্ষী ৷ বাইকে সওয়ার তৃণমূল কর্মীরাও ৷ স্কুটার ছুটল নবান্নের পথে ৷ গোটা দেশের সংবাদমাধ্যম যেন ভেঙে পড়লো ফুটেজ পেতে ৷ পিছনে স্লোগান তৃণমূল নেত্রী জিন্দাবাদ ৷ তৃণমূল কংগ্রেস জিন্দাবাদ ৷ প্রায় আধ ঘণ্টার যাত্রা শেষ হলো ৷ স্কুটার থামলো নবান্নের মূল ফটকের সামনে ৷ এবার চালকের আসনে স্বয়ং নেত্রী ৷ ইচ্ছে প্রকাশ করলেন স্কুটার চালানো শিখবেন ৷ নেত্রীর ইচ্ছেকে মর্যাদা দিতে এগিয়ে এলেন বাকিরাও ৷ নেত্রীর চালানো স্কুটি কয়েক হাত এগোলোও ৷
এবার নবান্নের বাইরে থেকেই সাংবাদিক সম্মেলন ৷ প্রত্যাশিত ভাবেই বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে কটাক্ষ ৷ বললেন, "গরীব মানুষের মুখের ভা কেড়ে নিচ্ছে এই সরকার ৷ প্রতিনিয়ত দাম বাড়ছে পেট্রল ডিজেলের ৷ সাধারণ মানুষের রান্না ঘরে সংকট তৈরি হচ্ছে ৷ পেট্রল ডিজেলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রান্নার গ্যাসের দাম ৷ এই সরকারকে পাল্টাতে হবে ৷" আরও যোগ করলেন, "আজকে প্রতিবাদ শুরু হলো ৷ আগামীদিনে জেলায় জেলায় স্তরে স্তরে বুথে বুথে প্রতিবাদের মাত্রা আরও বাড়বে ৷ বিজেপি বিরোধী আন্দোলন আরও চরম হবে ৷" দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে বললেন, "জ্বালানির বিরুদ্ধে আন্দোলন যেন আরও তীব্র হয় সেদিকে নজর রাখুন ৷" এরপরেই নেত্রীর ঘোষণা, "যে পথে যে ভাবে নবান্নে এলাম, সে পথে সেভাবেই ফিরবো ৷ আজ গাড়িতে চড়বো না ৷" একই সঙ্গে দাবি করলেন, বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার দেশটাকে বেঁচে দিচ্ছে বলে ৷ মোদি - শাহের বিরুদ্ধে মমতার সরাসরি কটাক্ষ সাধারণ মানুষের সর্বনাশ করে তাঁরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করছেন ৷
আরও পড়ুন : আরও দামি রান্নার গ্যাস, এক মাসে তিন বারে বাড়ল 100 টাকা
মমতার এই স্কুটার যাত্রাকে অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি - সিপিএম - কংগ্রেস কেউই ৷ সিপিএমের পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর কথায়, "এর আগে আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি ৷ আগামী দিনেও জানাবো ৷ মমতা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পথে নেমেছে, স্বাগত ৷ কিন্তু, এর আগে যাঁর বাইকে মমতা উঠেছিলেন সেই ছবিটা আবারও একবার মনে করা উচিৎ রাজ্যের মানুষের ৷" সুজন টেনে আনলেন বেশ কয়েক বছর আগে জঙ্গলমহলে ছত্রধর মাহাতোর বাইকে চড়ে মমতার সেই যাত্রার কথা ৷ সেদিনের প্রসঙ্গ তুলে সুজন চক্রবর্তীর কটাক্ষ, '' ছত্রধরের বাইকে চড়ার পরের ইতিহাস আমরা জানি ৷ কী ভাবে জঙ্গল মহলের সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন তাও আমরা দেখেছি ৷ কী ভাবে ছত্রধরের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হয়েছে তাও দেখেছি ৷ এখন কী করা হচ্ছে তাও দেখছি ৷''
বিজেপিও কটাক্ষ করতে ছাড়েনি ৷ দলের অন্যতম মুখপাত্র জয়প্রকাশ মজুমদারের মন্তব্য, "ভোটে হার নিশ্চিত ৷ তাই দিকভ্রান্তের মতো একাধিক হাস্যকর পদক্ষেপ করছেন মমতা ৷ এটা ফুটেজ খাওয়া ছাড়া আর কিছুই নয় ৷"