কলকাতা, 23 মার্চ : আপাতত সমস্ত সংঘাত-রাজনীতি দূরে সরিয়ে রেখে এক হয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করবে রাজ্যের শাসক ও বিরোধী দল । কোরোনা প্রতিরোধে ও রাজ্যবাসীকে এই পরিস্থিতি থেকে বের করে আনতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে সবাই । আজ নবান্নে সর্বদলীয় বৈঠক শেষে সেই বিষয়টি যেন স্পষ্ট হয়ে গেল । বাম-কংগ্রেস ও BJP নেতৃত্বর বক্তব্যেও স্পষ্ট হল সেই একই কথা । তাঁরা জানিয়ে দিলেন, রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতিতে দল-মত-নির্বিশেষে সকলের পাশে দাঁড়াতে হবে ।
রাজ্যে কোরোনা পরিস্থিতির মোকাবিলায় ইতিমধ্যেই বিনামূল্যে চাল, চিকিৎসকদের পুজোর পরে বাড়তি ছুটির প্রস্তাব-সহ একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছে । কোরোনা সংক্রমণের সচেতনতায় 15 এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান । বাড়ানো হয়েছে আইসোলেশন বেডের সংখ্যাও । কোরোনার মোকাবিলায় একের পর এক উদ্যোগ নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । প্রথমে মন্ত্রী-আমলাদের সঙ্গে বৈঠক সেরেছেন । পরে সরকারি, বেসরকারি, চিকিৎসক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ ইতিমধ্যে বিরোধী শিবিরের একাংশেও প্রশংসিত হয়েছে তার তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ । রাজ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মুখ্যমন্ত্রী যে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং তা সমর্থনযোগ্য । আজ বিরোধীদের সঙ্গে বৈঠকেও সেই বিষয়টি বারবার স্পষ্ট হয়েছে । বিরোধীদের বক্তব্যে এই বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে যে, রাজ্য সরকার যে গাইডলাইন দেবে সেটা মেনেই একযোগে কাজ করবে বাকিরা ।
এদিকে আজ নবান্নের সর্বদলীয় বৈঠক চলাকালীন দমদমে কোরোনা আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুর খবর পান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই খবর শোনা মাত্র পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মাকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী, "সংক্রামক যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেই বিষয়টি দেখে নিয়ে দ্রুত মৃতদেহ সৎকার করতে হবে।" প্রসঙ্গত আজ সোমবার দুপুরে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় কোরোনা আক্রান্ত দমদমের বাসিন্দার। রাজ্যে এটি প্রথম মৃত্যু। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নিয়ম অনুযায়ী মৃতদেহ সৎকার করা হবে বলে সূত্রের খবর। ফলে পরিবার শেষ দেখার সুযোগ পেলেও হাতে পাবে না মৃতদেহ। পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগে গোটা সৎকার কার্য হবে। তবে জানা গেছে, সৎকার শেষে অস্তিভষ্ম নিতে পারবে পরিবার।
এই বিষয়ে, বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, "রাজ্য সরকার যে গাইডলাইন দেবে সেগুলি আমাদের অনুসরণ করা উচিত । এখন দল-মত-নির্বিশেষে সকলের পাশে দাঁড়াতে হবে ।" তবে ভিনরাজ্যে কাজ করা শ্রমিকদের নিয়ে যদি সরকার কোনও ভাবনাচিন্তা করে, সেই বিষয়টির উপর জোর দিয়েছেন সুজনরা । সুজন চক্রবর্তী বলেন, "কোরোনার জেরে রাজ্যের কাজ হারানো শ্রমিকদের সুবিধার্থে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জনধনের মাধ্যমে 5000 টাকা এবং রাজ্য সরকারের তরফে 2000 টাকা করে ব্যবস্থা করা প্রয়োজন ।" একই সুর রাজ্যের বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নানের বক্তব্যেও । তবে এক্ষেত্রে যাতে কেন্দ্র সরকার যথাযথ পদক্ষেপ করে, সেই বিষয়টিও স্পষ্ট হয়েছে মান্নানের বক্তব্যে । তিনি বলেন, "আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি রাজ্য সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করে কাজ করব । এক্ষেত্রে রাজনীতি, ধর্ম, বর্ণ কোন বিষয় হবে না।রাজ্য সরকার একা সবকিছু করতে পারে না । কেন্দ্রীয় সরকার সবকিছুতে বঞ্চিত করছে । কেন্দ্রীয় সরকারের রাজ্যকে সাহায্য করা উচিত ।"
আজ নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান, বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী, CPI(M)-র রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, BJP নেতা সায়ন্তন বসু, জয়প্রকাশ মজুমদার, PDS নেতা সমীর পুততুণ্ড, তৃণমূল নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সি সহ অন্যরা । বৈঠক শেষে সুজন চক্রবর্তী বলেন, "ইতিমধ্যেই রাজ্য কমিটির তরফে চিঠি দিয়েছি মুখ্যমন্ত্রীকে । উনি অবশ্য সেটা পরে দেখবেন বলেছেন । মুখ্যমন্ত্রী যে নির্দেশিকা জারি করবেন তা সকলকে মেনে চলতে হবে । স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে ফিভার ক্লিনিক করলে ভালো হয় । আমাদের রাজ্যে কিট সাপ্লাইয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে বলা উচিত । যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পুরো বিষয়টাকে আমাদের দেখা উচিত । যারা বাইরে থেকে আসছেন, অসংগঠিত শ্রমিক তাঁদের জন্য খাদ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে ।"
রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি কথা তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "এই মুহূর্তে কোরোনা পরীক্ষা করার জন্য যথেষ্ট পরিকাঠামো নেই । কেন্দ্রের কাছ থেকেও পর্যাপ্ত সাহায্য পাওয়া যায়নি । আমাদের কাছে মাত্র ৪০ টা কিট রয়েছে । আমাদের রাজ্য সব ক্ষেত্রে বঞ্চিত হচ্ছে । বুলবুলের অর্থ পাইনি । এবার সবকিছু কি রাজ্য সরকার একা করবে ? কেন্দ্রের কাছে সকলে মিলে দাবি জানানো উচিত ।"
আপাতত রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতির মোকাবিলায় একমত রাজ্যের সমস্ত রাজনৈতিক দল । কিন্তু কোথাও যেন কেন্দ্রের প্রতি একটা অসন্তোষ থেকে গেল । থেকে গেল রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের অসহযোগিতার মনোভাব । উল্লেখ্য, আজই রাজ্যে কোরোনা আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে । আরও ছ'জন এই মুহূর্তে কোরোনা আক্রান্ত ।