কলকাতা, ২৮ জুলাই : গত ৬ জুলাই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে চূড়ান্ত সিমেস্টার ও চূড়ান্ত বর্ষের পড়ুয়াদের পরীক্ষা নেওয়া বাধ্যতামূলক করে গাইডলাইন জারি করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (UGC)। তারপর থেকেই এর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বহু মানুষ সরব হয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টে সেই গাইডলাইনকে চ্যালেঞ্জ করে একাধিক মামলা হয়েছে। এবার UGC-র সেই গাইডলাইনকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করল ওয়েস্ট বেঙ্গল কলেজ অ্যান্ড ইউনিভার্সিটি প্রফেসার্স অ্যাসোসিয়েশন (WBCUPA)। আগামী ৩১ জুলাই সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানি হবে বলে জানাচ্ছেন WBCUPA-র সভাপতি কৃষ্ণকলি বসু।
গত ৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন পরীক্ষা ও নতুন শিক্ষাবর্ষ নিয়ে সংশোধিত গাইডলাইন পাঠায় দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে। সেই গাইডলাইনে আবশ্যিকভাবে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত সেমেস্টার ও চলতি বর্ষের পরীক্ষা নেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে বলা হয়। অফলাইন বা অনলাইন বা মিলিতভাবে দুই পদ্ধতিতেই সেই পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে বলে জানানো হয়েছিল গাইডলাইনে। কিন্তু, কোরোনা ভাইরাস নিয়ে দেশজুড়ে চলা পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি ঘটছে। এই পরিস্থিতিতে অফলাইন মাধ্যমে সশরীরে পড়ুয়াদের এনে পরীক্ষা নিলে কোরোনা সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আবার যেখানে দেশের অধিকাংশ মানুষের কাছে ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের সুবিধা নেই , সেখানে অনলাইন মোডে পরীক্ষা নেওয়াও সম্ভব নয়। তাই গাইডলাইন জারির পর থেকেই প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন শিক্ষা, রাজনৈতিক মহলের অধিকাংশ মানুষই। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মোট ৩১ জন পড়ুয়া ও আদিত্য ঠাকরের নেতৃত্বে যুব সেনা UGC-র এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে পিটিশনও দাখিল করে।
রাজ্যের তরফেও প্রথম থেকেই UGC-র পরীক্ষা আবশ্যিকের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় UGC-র সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আবেদন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দপ্তরের প্রধান সচিবও মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের উচ্চশিক্ষা দপ্তরের প্রধান সচিবকে চিঠি পাঠিয়ে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আবেদন জানিয়েছিলেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে আবারও সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আর্জি জানান মুখ্যমন্ত্রী। এই পরিস্থিতিতে এবার রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের অধ্যাপক সংগঠন WBCUPA-র তরফে UGC-র গাইডলাইনকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করা হল।
এ প্রসঙ্গে WBCUPA-র সভাপতি কৃষ্ণকলি বসু বলেন, "আমরা মামলাটা ইতিমধ্যেই ফাইল করে দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের যে সংশোধিত গাইডলাইন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মে নির্দেশ এসেছে গত ৬ জুলাই মে, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা অনলাইন বা অফলাইনে সম্পূর্ণ করতে হবে, এটাকে চ্যালেঞ্জ করে আমরা সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছি। অনেকে ইন্ডিভিজুয়াল মামলা করেছে। কিন্তু, সর্বভারতীয়ভাবে আমরাই প্রথম শিক্ষক সংগঠন এবং একমাত্র শিক্ষক সংগঠন যাঁরা সংগঠনগতভাবে মামলাটা করেছি।"
মামলা করার কারণ নিয়ে কৃষ্ণকলি বসু আরও বলেন, "২৯ এপ্রিল UGC একটা গাইডলাইন জারি করেছিল। যেখানে পরীক্ষা না নিয়েও পড়ুয়াদের মূল্যায়ন করার পদ্ধতি বলা হয়েছিল। যখন ২৯ এপ্রিল গাইডলাইন জারি করা হয়েছিল তখন দেশে COVID-19 সংক্রমণের সংখ্যা ছিল ৩২ হাজারের কাছাকাছি। ৬ জুলাই যখন এই নির্দেশ দেওয়া হয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এই নির্দেশ জারি করছে যে,পরীক্ষা নিতেই হবে, তখন ভারত তৃতীয় স্থানে চলে গেছে কোরোনা সংক্রমণে। যখন CAT, UPSC, JEE-র মতো সর্বভারতীয় পরীক্ষাগুলো পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে । সেখানে এমনকী প্রয়োজন পড়ল যে এত ছাত্র-ছাত্রীর জীবন বাজি রেখে পরীক্ষা নিতে নির্দেশ দেওয়া হল। UGC-র অধীনে প্রায় সাড়ে ৮০০ বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। তাঁদের অধীনে অসংখ্য কলেজ রয়েছে। সেখানে অফলাইন বা অনলাইন মোডে পরীক্ষা নেওয়ার সেপ্টেম্বরের মধ্যে কী প্রয়োজনীয়তা হঠাৎ পড়ে গেল? অফলাইন এই অবস্থায় নেওয়া যেতেই পারে না। অনলাইনটা তো হাস্যকর পরিস্থিতি। এই সবটা নিয়ে আমরা খুব বিভ্রান্ত। আমরা পুরোপুরি চ্যালেঞ্জ করে কোর্টে গেছি যে, এই অবস্থায় পরীক্ষা হতে পারে না।"