কলকাতা, 17 নভেম্বর: উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের (WBCHSE) পক্ষ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে (Higher Secondary) সিমেস্টার (Semester System) চালুর প্রস্তাব দিয়েছে । যার বিরোধিতায় সরব হয়েছে এসইউসিআই-এর (SUCI) ছাত্র সংগঠন এআইডিএসও (AIDSO) ।
এআইডিএসও-র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক মণিশঙ্কর পট্টনায়ক বলেন, "উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষাবর্ষকে বছরে দু’ভাগে বিভক্ত করে দু’বার পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ । যার মধ্য দিয়ে উচ্চমাধ্যমিকে সিমেস্টার প্রথাকেই চালু করার প্রস্তাব দিচ্ছে তারা । এই প্রক্রিয়ায় রাজ্য সরকার অধীনস্থ শিক্ষা সংসদ আরও একবার শিক্ষা ধ্বংসকারী জাতীয় শিক্ষা নীতি-20 র (National Education Policy 2020) প্রস্তাবগুলোকেই এরাজ্যে কার্যকর করার দিকে এগোচ্ছে, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক । আমরা শিক্ষা ধ্বংসকারী এই জাতীয় শিক্ষা নীতির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই বারবার প্রতিবাদ জানিয়েছি ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘দেশ জুড়ে ছাত্র শিক্ষক অভিভাবকদের থেকে সংগৃহীত এক কোটি প্রতিবাদী স্বাক্ষর আমরা প্রধানমন্ত্রীর উদ্যেশ্যে পাঠিয়েছি । আমরা মনে করি জাতীয় শিক্ষা নীতির মধ্য দিয়ে শিক্ষার সামগ্রিক বেসরকারিকরণ করতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার । কেড়ে নিতে চলেছে দেশের সাধারণ ঘরের সন্তানদের শিক্ষার অধিকার । মুখে বিজেপির বিরোধিতা করলেও এ রাজ্যেও জাতীয় শিক্ষা নীতির (NEP) প্রস্তাবগুলোকে কার্যকর করতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার । যা উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের এই প্রস্তাবেও উঠে এসেছে ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘একদিকে ইতিমধ্যেই প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাস-ফেল প্রথা তুলে দিয়ে ইতিমধ্যেই সরকারি শিক্ষার ভিত্তি অনেকাংশেই ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে । তার উপর এই চূড়ান্ত শিক্ষক ঘাটতি ও পরিকাঠামোগত অব্যবস্থার মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বছরে দুটো পরীক্ষা ও ইন্টার্নালের প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে । প্রথমত, বাস্তবে পাস-ফেলহীন শিক্ষা কাঠামোয় পড়াশোনা করা ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে সিমেস্টার পরীক্ষার এই চাপ বহন করা সম্ভব কি ! এর ফলে ড্রপ আউটের হার বাড়বে বলেই আমরা মনে করি ।’’
এর সঙ্গে মণিশঙ্কর পট্টনায়কের সংযোজন, ‘‘দ্বিতীয়ত, সিমেস্টার ব্যাবস্থার মধ্য দিয়ে সরকার দু’টি সিমেস্টারে দু’বার ফর্ম ফিল আপ করিয়ে অতিরিক্ত ফি আদায় করবে এবং তাতেও ড্রপ আউট বাড়বে । তৃতীয়ত, সিমেস্টারে সিলেবাস ছোট ছোট অংশে খণ্ডিত হয়ে যাবে, ফলে সামগ্রিক ভাবে পূর্ণ সিলেবাস সম্পর্কে একটা সুসংহত ও সামগ্রিক জ্ঞান অর্জন ব্যহত হবে । এর ফলে উচ্চশিক্ষার বুনিয়াদ ধ্বংস হবে ।’’
আর চার নম্বর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘‘পরীক্ষা, ফল প্রকাশ, পুনরায় ফর্ম ফিল আপ প্রভৃতি কারণে পাঠদানের কার্যকরী দিবস কমে গিয়ে সিলেবাস অসম্পূর্ণ থাকবে এবং সেই সঙ্গে বাড়বে কোচিং লবির দৌরাত্ম্য । কমবে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার সুযোগ ।’’
তাই এই বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁর দাবি, ‘‘অবিলম্বে সমস্ত শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ করে সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার পরিকাঠামোর উন্নতি ঘটাতে হবে । উচ্চমাধ্যমিকে সিমেস্টার চালুর প্রস্তাব প্রত্যাহার করতে হবে । জাতীয় শিক্ষা নীতি-20 বাতিল করতে হবে ।"
আরও পড়ুন: পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে কী করছে কলকাতা ? আন্তর্জাতিক মঞ্চে জানালেন দেবাশিস কুমার