ETV Bharat / state

গায়ে রোদ লাগে না শিশুদের, বিদেশের অসুখ হচ্ছে এদেশেও

গায়ে রোদ না লাগলে হতে পারে ভিটামিন ডি ডেফিসিয়েন্সির সমস্যা । বিদেশের এই অসুখ এখন দেখা যাচ্ছে আমাদের দেশে ।

author img

By

Published : Oct 22, 2019, 12:18 PM IST

Updated : Oct 22, 2019, 1:25 PM IST

ছবিটি প্রতীকী

কলকাতা, 22 অক্টোবর : বিদেশের এই অসুখ এখন দেখা যাচ্ছে আমাদের দেশে । প্রতি 10 জন শিশুর মধ্যে চার জনের ক্ষেত্রে দেখা দিচ্ছে এই সমস্যা । রোদে না থাকা অর্থাৎ গায়ে রোদ না লাগার কারণেই ভিটামিন ডি-র ঘাটতি থাকছে । তবে শুধুমাত্র শিশুরা নয়, বড়দের মধ‍্যেও এই ঘাটতি দেখা যাচ্ছে । ভিটামিন ডি-এর ঘাটতির কারণে শিশুদের যাতে সমস্যায় পড়তে না হয়, তার জন্য কি করণীয়, এসব নিয়ে বলেছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার ।

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার বলেন, "শিশুদের মধ্যে এখন আমরা ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি বেশি করে দেখতে পাচ্ছি । এই ঘাটটি দূর করার জন্য ভিটামিন ডি-এর সাপ্লিমেন্টেশন দেওয়া হয় । একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, শিশুদের পায়ে ব্যথা হয় । যেটাকে আমরা গ্রোয়িং পেইন বলি । পায়ে ব্যথা মানেই যে খারাপ, তার থেকে অসুস্থতা, তা নয় । এটা আমাদের বুঝতে হবে, এই ব্যথা কি গ্রোয়িং পেইন, না ভিটামিন ডি-এর ঘাটতির জন্য হচ্ছে । যদি দেখা যায়, ভিটামিন ডি-এর ঘাটতির জন্য এই ব্যথা হচ্ছে, তখন তার চিকিৎসা হয় ।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "আর, একদম ডেভেলপমেন্টাল স্টেজে অর্থাৎ জন্মের পরে যখন থেকে ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে, তখন যদি কোনও শিশুর শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি দেখা দেয়, তাহলে তখন এই শিশুটির রিকেটস হতে পারে ।"

ভিটামিন ডি-এর ঘাটতির জন্য কী হবে? বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক বলেন, "হাড়ে ক্যালসিয়াম ডিপোজ়িশন হবে না, হাড় নরম হবে । শিশু যখন চলাফেরা করতে শিখবে, পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে, তখন পা দুটো বেঁকে যাবে । খুলির হাড় পাতলা হয়ে যাবে, কপালের হাড় খুব চওড়া এবং উঁচু হয়ে যাবে । বুকের পাঁজরের সংযোগ স্থানগুলি ফুলে যাবে, যাকে বলা হয় র‍্যাকিটি রোজারি । চেস্ট, পিজিয়ন চেস্ট হয়ে যায় । যেখানে ডায়াফ্রেমের অ্যাটাচমেন্ট থাকে । এটা এমনই শরীরে ভিতরের ঢুকে যায়, যেখানে একটি লাইন হয়ে যায়, যেটাকে বলা হয় সালকাস ।" তিনি বলেন, "যদি দেখা যায়, কারও মধ্যে এই ধরনের সমস্যাগুলি হচ্ছে এবং উপসর্গগুলি দেখা যাচ্ছে, তখন দ্রুত তার জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে ।"

মায়ের মধ্যে যদি কোনও কারণে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি থাকে এবং শিশু যদি ভিটামিন ডি না পেয়ে থাকে, এর ফলে শিশুর যেন ডেভেলপমেন্টাল প্রবলেম না হয়, তার জন্য জন্মের পরে প্রতিটি শিশুকে এখন প্রথম এক বছর ভিটামিন ডি-এর সাপ্লিমেন্টেশন দেওয়া হয় । এ কথা জানিয়ে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার বলেন, "এই যে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি, যেটা এখন আমাদের দেশে খুব বেড়ে গেছে, এই সমস্যা আসলে বিদেশে ছিল । কারণ ওখানে সূর্যের আলোয় শিশুরা কম যেত । ওখানকার অসুখ এখন আমাদের এখানে দেখা যাচ্ছে । বলা যেতে পারে, ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি মহামারি আকার ধারণ করেছে ।" কেন? তাঁর কথায়, "কারণ হচ্ছে, আমরা এখন প্রায় সব সময় এয়ার কন্ডিশনারের মধ্যে থাকি, রোদের মধ্যে বের হই না । এর জন্য ভিটামিনের ঘাটতি হচ্ছে ।"

এই শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, "পুরো পপুলেশনে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি মারাত্মক আকার ধারণ করছে । কারণ, প্রায় সবাই আমরা রোদে বের হব না, AC-তে থাকব । মোটা পরদা, AC গাড়ি, অফিসে কম্পিউটারে কাজ করা হচ্ছে, ছোটোরা খেলাধুলো করে না ।" তিনি বলেন, "ভিটামিন ডি-এর অভাবে বাচ্চারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত । কিন্তু, বড়রাও সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত । 10 জনের মধ্যে চার জনকে আমরা পাচ্ছি, যাদের ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি রয়েছে । হাড়ে ব্যথা বলছে, দেখা গেল তার ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি রয়েছে ।"

তা হলে উপায়? এই চিকিৎসক বলেন, "ভিটামিন ডি-এর সাপ্লিমেন্টেশন দেওয়া হয় শিশুদের । তবে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ রোদে বেরিয়ে খেলাধুলা করা । ভিটামিন ডি তৈরি হয় স্কিনে । ভিটামিন ডি খাবারের মাধ্যমে আমাদের শরীরে আসে না ‌। যদিও কিছু কিছু মাছের তেলে ভিটামিন ডি রয়েছে ।" তিনি বলেন, "রোদে খেলাধূলা করা উচিত। রোদে বেরোনো উচিত বড়দের । রোদে খেলাধূলা করলে ভিটামিন তৈরি হয় ।" তাঁর কথায়, "ভিটামিন ডি হাড়ে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস ডিপোজ়িশনে সাহায্য করে । এটা সম্ভব হলে হেলদি বোন তৈরি হওয়া সম্ভব ।"

শিশুদের কত সময় রোদে রাখা উচিত? এই শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, "চড়া রোদের অনেকগুলি অসুবিধা আছে ‌। যেহেতু আমাদের গরমের দেশ, ডিহাইড্রেশন হয়ে যেতে পারে বাচ্চাদের, স্ট্রোক হয়ে যেতে পারে, এই জন্য সকালে এক ঘণ্টা, বিকেলে এক ঘণ্টা নরম রোদের মধ্যে থাকা যেতে পারে । তা হলে ভিটামিন ডি ঠিকঠাক তৈরি হতে পারবে ।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "জানালা বা বারান্দা দিয়ে ঘরের মধ্যে যেখানে রোদ আসছে, সেখানে একদম ছোটো শিশুকে শুইয়ে রাখুন । কিন্তু, মুখে যেন রোদ না লাগে । সরাসরি সূর্যের আলো পেলে তবেই ভিটামিন ডি তৈরি হওয়া সম্ভব ।" তাঁর কথায়, "শিশুরা খেলাধূলা করবে, এটাই বাঞ্ছনীয় । সব সময় বই নিয়ে বসে আছে অথবা কম্পিউটারে সামনে বসে আছে, এটা প্রত্যাশার নয় । এতে ওবেসিটি-সহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয় ।"

দেখুন এব্যাপারে কী বলছেন চিকিৎসক

কলকাতা, 22 অক্টোবর : বিদেশের এই অসুখ এখন দেখা যাচ্ছে আমাদের দেশে । প্রতি 10 জন শিশুর মধ্যে চার জনের ক্ষেত্রে দেখা দিচ্ছে এই সমস্যা । রোদে না থাকা অর্থাৎ গায়ে রোদ না লাগার কারণেই ভিটামিন ডি-র ঘাটতি থাকছে । তবে শুধুমাত্র শিশুরা নয়, বড়দের মধ‍্যেও এই ঘাটতি দেখা যাচ্ছে । ভিটামিন ডি-এর ঘাটতির কারণে শিশুদের যাতে সমস্যায় পড়তে না হয়, তার জন্য কি করণীয়, এসব নিয়ে বলেছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার ।

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার বলেন, "শিশুদের মধ্যে এখন আমরা ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি বেশি করে দেখতে পাচ্ছি । এই ঘাটটি দূর করার জন্য ভিটামিন ডি-এর সাপ্লিমেন্টেশন দেওয়া হয় । একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, শিশুদের পায়ে ব্যথা হয় । যেটাকে আমরা গ্রোয়িং পেইন বলি । পায়ে ব্যথা মানেই যে খারাপ, তার থেকে অসুস্থতা, তা নয় । এটা আমাদের বুঝতে হবে, এই ব্যথা কি গ্রোয়িং পেইন, না ভিটামিন ডি-এর ঘাটতির জন্য হচ্ছে । যদি দেখা যায়, ভিটামিন ডি-এর ঘাটতির জন্য এই ব্যথা হচ্ছে, তখন তার চিকিৎসা হয় ।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "আর, একদম ডেভেলপমেন্টাল স্টেজে অর্থাৎ জন্মের পরে যখন থেকে ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে, তখন যদি কোনও শিশুর শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি দেখা দেয়, তাহলে তখন এই শিশুটির রিকেটস হতে পারে ।"

ভিটামিন ডি-এর ঘাটতির জন্য কী হবে? বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক বলেন, "হাড়ে ক্যালসিয়াম ডিপোজ়িশন হবে না, হাড় নরম হবে । শিশু যখন চলাফেরা করতে শিখবে, পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে, তখন পা দুটো বেঁকে যাবে । খুলির হাড় পাতলা হয়ে যাবে, কপালের হাড় খুব চওড়া এবং উঁচু হয়ে যাবে । বুকের পাঁজরের সংযোগ স্থানগুলি ফুলে যাবে, যাকে বলা হয় র‍্যাকিটি রোজারি । চেস্ট, পিজিয়ন চেস্ট হয়ে যায় । যেখানে ডায়াফ্রেমের অ্যাটাচমেন্ট থাকে । এটা এমনই শরীরে ভিতরের ঢুকে যায়, যেখানে একটি লাইন হয়ে যায়, যেটাকে বলা হয় সালকাস ।" তিনি বলেন, "যদি দেখা যায়, কারও মধ্যে এই ধরনের সমস্যাগুলি হচ্ছে এবং উপসর্গগুলি দেখা যাচ্ছে, তখন দ্রুত তার জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে ।"

মায়ের মধ্যে যদি কোনও কারণে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি থাকে এবং শিশু যদি ভিটামিন ডি না পেয়ে থাকে, এর ফলে শিশুর যেন ডেভেলপমেন্টাল প্রবলেম না হয়, তার জন্য জন্মের পরে প্রতিটি শিশুকে এখন প্রথম এক বছর ভিটামিন ডি-এর সাপ্লিমেন্টেশন দেওয়া হয় । এ কথা জানিয়ে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার বলেন, "এই যে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি, যেটা এখন আমাদের দেশে খুব বেড়ে গেছে, এই সমস্যা আসলে বিদেশে ছিল । কারণ ওখানে সূর্যের আলোয় শিশুরা কম যেত । ওখানকার অসুখ এখন আমাদের এখানে দেখা যাচ্ছে । বলা যেতে পারে, ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি মহামারি আকার ধারণ করেছে ।" কেন? তাঁর কথায়, "কারণ হচ্ছে, আমরা এখন প্রায় সব সময় এয়ার কন্ডিশনারের মধ্যে থাকি, রোদের মধ্যে বের হই না । এর জন্য ভিটামিনের ঘাটতি হচ্ছে ।"

এই শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, "পুরো পপুলেশনে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি মারাত্মক আকার ধারণ করছে । কারণ, প্রায় সবাই আমরা রোদে বের হব না, AC-তে থাকব । মোটা পরদা, AC গাড়ি, অফিসে কম্পিউটারে কাজ করা হচ্ছে, ছোটোরা খেলাধুলো করে না ।" তিনি বলেন, "ভিটামিন ডি-এর অভাবে বাচ্চারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত । কিন্তু, বড়রাও সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত । 10 জনের মধ্যে চার জনকে আমরা পাচ্ছি, যাদের ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি রয়েছে । হাড়ে ব্যথা বলছে, দেখা গেল তার ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি রয়েছে ।"

তা হলে উপায়? এই চিকিৎসক বলেন, "ভিটামিন ডি-এর সাপ্লিমেন্টেশন দেওয়া হয় শিশুদের । তবে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ রোদে বেরিয়ে খেলাধুলা করা । ভিটামিন ডি তৈরি হয় স্কিনে । ভিটামিন ডি খাবারের মাধ্যমে আমাদের শরীরে আসে না ‌। যদিও কিছু কিছু মাছের তেলে ভিটামিন ডি রয়েছে ।" তিনি বলেন, "রোদে খেলাধূলা করা উচিত। রোদে বেরোনো উচিত বড়দের । রোদে খেলাধূলা করলে ভিটামিন তৈরি হয় ।" তাঁর কথায়, "ভিটামিন ডি হাড়ে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস ডিপোজ়িশনে সাহায্য করে । এটা সম্ভব হলে হেলদি বোন তৈরি হওয়া সম্ভব ।"

শিশুদের কত সময় রোদে রাখা উচিত? এই শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, "চড়া রোদের অনেকগুলি অসুবিধা আছে ‌। যেহেতু আমাদের গরমের দেশ, ডিহাইড্রেশন হয়ে যেতে পারে বাচ্চাদের, স্ট্রোক হয়ে যেতে পারে, এই জন্য সকালে এক ঘণ্টা, বিকেলে এক ঘণ্টা নরম রোদের মধ্যে থাকা যেতে পারে । তা হলে ভিটামিন ডি ঠিকঠাক তৈরি হতে পারবে ।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "জানালা বা বারান্দা দিয়ে ঘরের মধ্যে যেখানে রোদ আসছে, সেখানে একদম ছোটো শিশুকে শুইয়ে রাখুন । কিন্তু, মুখে যেন রোদ না লাগে । সরাসরি সূর্যের আলো পেলে তবেই ভিটামিন ডি তৈরি হওয়া সম্ভব ।" তাঁর কথায়, "শিশুরা খেলাধূলা করবে, এটাই বাঞ্ছনীয় । সব সময় বই নিয়ে বসে আছে অথবা কম্পিউটারে সামনে বসে আছে, এটা প্রত্যাশার নয় । এতে ওবেসিটি-সহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয় ।"

দেখুন এব্যাপারে কী বলছেন চিকিৎসক
Intro:কলকাতা, ২১ অক্টোবর: বিদেশের এই অসুখ এখন দেখা যাচ্ছে এ দেশে। প্রতি ১০ জন শিশুর মধ্যে ৪ জনের ক্ষেত্রে দেখা দিচ্ছে এই সমস্যা। রোদে না থাকা, অর্থাৎ, গায়ে রোদ না লাগার কারণেই এই সমস্যায় আক্রান্ত হতে হচ্ছে শিশুদের। কারণ, ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি। তবে, শুধুমাত্র শিশুরা নয়, বড়দের মধ‍্যেও এই ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। ভিটামিন ডি-এর ঘাটতির কারণে শিশুদের যাতে সমস্যায় পড়তে না হয়, তার জন্য কী করণীয়, এ সব নিয়ে বলেছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার।


Body:শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার বলেন, "শিশুদের মধ্যে এখন আমরা ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি বেশি করে দেখতে পাচ্ছি। এই ঘাটটি দূর করার জন্য ভিটামিন ডি-এর সাপ্লিমেন্টেশন দেওয়া হয়।" তিনি বলেন, "একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, শিশুদের পায়ে ব্যথা হয়। যেটাকে আমরা গ্রোয়িং পেইন বলি। পায়ে ব্যথা মানেই যে খারাপ, তার থেকে অসুস্থতা, তা নয়। এটা আমাদের বুঝতে হবে, এই ব্যথা কি গ্রোয়িং পেইন, না ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি জন্য হচ্ছে। যদি দেখা যায়, ভিটামিন ডি-এর ঘাটতির জন্য এই ব্যথা হচ্ছে, তখন তার চিকিৎসা হয়।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "আর, একদম ডেভেলপমেন্টাল স্টেজে অর্থাৎ, জন্মের পরে যখন থেকে ডেভলপমেন্ট হচ্ছে, তখন যদি কোনও শিশুর শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি দেখা দেয়, তাহলে তখন এই শিশুটির রিকেটস হতে পারে।"

ভিটামিন ডি-এর ঘাটতির জন্য কী হবে? বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক বলেন, "হাড়ে ক্যালসিয়াম ডিপোজিশন হবে না, হাড় নরম হবে। শিশু যখন চলাফেরা করতে শিখবে, পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে, তখন পা দুটো বেঁকে যাবে। খুলির হাড় পাতলা হয়ে যাবে, কপালের হাড় খুব চওড়া এবং উঁচু হয়ে যাবে। বুকের পাঁজরের সংযোগ স্থানগুলি ফুলে যাবে, যাকে বলা হয় র‍্যাকিটি রোজারি। চেস্ট, পিজিয়ন চেস্ট হয়ে যায়। যেখানে ডায়াফ্রেমের অ্যাটাচমেন্ট থাকে। এটা এমনই শরীরে ভিতরের ঢুকে যায়, যেখানে একটি লাইন হয়ে যায়, যেটাকে বলা হয় সালকাস।" তিনি বলেন, "যদি দেখা যায়, কারও মধ্যে এই ধরনের সমস্যাগুলি হচ্ছে এবং, উপসর্গগুলি দেখা যাচ্ছে, তখন দ্রুত তার জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।"

মায়ের মধ্যে যদি কোনও কারণে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি থাকে এবং শিশু যদি ভিটামিন ডি না পেয়ে থাকে, এর ফলে শিশুর যেন ডেভেলপমেন্টাল প্রবলেম না হয়, তার জন্য জন্মের পরে প্রতিটি শিশুকে এখন প্রথম এক বছর ভিটামিন ডি-এর সাপ্লিমেন্টেশন দেওয়া হয়। এ কথা জানিয়ে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার বলেন, "এই যে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি, যেটা এখন আমাদের দেশে খুব বেড়ে গিয়েছে, এই সমস্যা আসলে বিদেশে ছিল। কারণ ওখানে সূর্যের আলোয় শিশুরা কম যেত। ওখানকার অসুখ এখন আমাদের এখানে দেখা যাচ্ছে। বলা যেতে পারে, ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি এপিডেমিক আকার ধারণ করেছে।" কেন? তাঁর কথায়, "কারণ হচ্ছে, আমরা এখন প্রায় সব সময় এসির মধ্যে থাকি, রোদের মধ্যে বের হই না। এর জন্য ভিটামিনের ঘাটতি হচ্ছে।"

এই শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, "পুরো পপুলেশনে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি মারাত্মক আকার ধারণ করছে। কারণ, প্রায় সবাই আমরা রোদে বের হব না, এসিতে থাকব। মোটা পর্দা, এসি গাড়ি, অফিসে কম্পিউটারে কাজ করা হচ্ছে, ছোটরা খেলাধুলা করে না।" তিনি বলেন, "ভিটামিন ডি-এর অভাবে বাচ্চারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু, বড়রাও সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। ১০ জনের মধ্যে ৪ জন কে আমরা পাচ্ছি, যাদের ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি রয়েছে। হাড়ে ব্যথা বলছে, দেখা গেল তার ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি রয়েছে।"


Conclusion:তা হলে উপায়? এই চিকিৎসক বলেন, "ভিটামিন ডি-এর সাপ্লিমেন্টেশন দেওয়া হয় শিশুদের। তবে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ রোদে বেরিয়ে খেলাধুলা করা। ভিটামিন ডি তৈরি হয় স্কিনে। ভিটামিন ডি খাবারের মাধ্যমে আমাদের শরীরে আসে।না‌। যদিও কিছু কিছু মাছের তেলে ভিটামিন ডি রয়েছে।" তিনি বলেন, "রোদে খেলাধুলা করা উচিত। রোদে বেরোনো উচিত বড়দের। রোদে খেলাধুলা করলে ভিটামিন তৈরি হয়।" তাঁর কথায়, "ভিটামিন ডি হাড়ে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস ডিপোজিশনে সাহায্য করে। এটা সম্ভব হলে হেলদি বোন তৈরি হওয়া সম্ভব।"

শিশুদের কত সময় রোদে রাখা উচিত? এই শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, "চড়া রোদের অনেকগুলি ডিজঅ্যাডভ‍্যান্টেজ আছে‌। যেহেতু আমাদের গরমের দেশ, ডিহাইড্রেশন হয়ে যেতে পারে বাচ্চাদের, স্ট্রোক হয়ে যেতে পারে, এই জন্য সকালে এক ঘন্টা, বিকালে এক ঘন্টা নরম রোদের মধ্যে থাকা যেতে পারে। তা হলে ভিটামিন ডি ঠিকঠাক তৈরি হতে পারবে।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "জানলা বা বারান্দা দিয়ে ঘরের মধ্যে যেখানে রোদ আসছে, সেখানে একদম ছোট শিশুকে শুইয়ে রাখুন। কিন্তু, মুখে যেন রোদ না লাগে। সরাসরি সূর্যের আলো পেলে তবেই ভিটামিন ডি তৈরি হওয়া সম্ভব।" তাঁর কথায়, "শিশুরা খেলাধুলা করবে, এটাই বাঞ্ছনীয়। সব সময় বই নিয়ে বসে আছে অথবা, কম্পিউটারে সামনে বসে আছে, এটা প্রত্যাশার নয়। এতে ওবেসিটি সহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।"
_______

বাইট:
wb_kol_01a_children_vitamin_d_deficit_bite_7203421
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার
_______
Last Updated : Oct 22, 2019, 1:25 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.