শান্তিনিকেতন, 22 জানুয়ারি : গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অত্যন্ত স্নেহভাজন ছিলেন ‘দেশনায়ক’ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু (Netaji Subhas Chandra Bose) ৷ শান্তিনিকেতনে তিনবার এসেছিলেন তিনি ৷ আম্রকুঞ্জে গুরুদেবের উপস্থিতিতে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় ৷ দুই কিংবদন্তির মধ্যে বহু চিঠিপত্রও আদান-প্রদান হয় ৷
তা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বভারতী (Visva-Bharati University) থেকে একপ্রকার ব্রাত্য নেতাজি ৷ তাঁর আগমনের দিন স্মরণ করা হয় না (Visva-Bharati university never remember netaji subhas chandra bose) ৷ পাশাপাশি রবীন্দ্রভবনে প্রদর্শিত হতে দেখা যায় না সেই সময়ের স্মৃতিগুলি । যা নিয়ে রীতিমতো আক্ষেপ বিশ্বভারতীর অধ্যাপক ও পড়ুয়াদের ।
1914 সালে প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র থাকাকালীন প্রথমবার শান্তিনিকেতনে আসেন সুভাষচন্দ্র বসু ৷ তখন শান্তিনিকেতন আশ্রম থাকলেও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়নি ৷ পরবর্তীতে আরও দু’বার শান্তিনিকেতনে আসেন নেতাজি । 1939 সালে শান্তিনিকেতনের আম্রকুঞ্জে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপস্থিতিতে সুভাষচন্দ্র বসুকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় ৷ পরে শান্তিনিকেতন-সহ শ্রীনিকেতন ঘোরেন নেতাজি ৷
আরও পড়ুন : Netaji statue at India Gate : নেতাজির সৌজন্যে সংশোধিত হল এক ঐতিহাসিক অসঙ্গতি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পল্লী-উন্নয়ন সংক্রান্ত মত দেশের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা সেই সময় উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন নেতাজি ৷ শান্তিনিকেতন বসে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের ধারা নিয়েও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল তাঁর ৷ তাঁকে ‘দেশনায়ক’ ও ‘নেতাজি’, এই বলে সুভাষচন্দ্র বসুকে সম্বোধন করেছিলেন স্বয়ং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ।
এছাড়া, 'দ্য ইন্ডিয়ান স্ট্রাগেল 1920-34' শীর্ষক পত্রিকার জন্য লেখা চেয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে চিঠি দিয়েছিলেন নেতাজি ৷ তখন গুরুদেব শান্তিনিকেতনে ছিলেন । এমনকি, 'সঞ্চয়িতা' পড়ে উদ্বুদ্ধ হয়ে 1937 সালে বিশ্বকবিকে চিঠি দিয়ে সম্মান জ্ঞাপন করেছিলেন নেতাজি ৷ পাশাপাশি শান্তিনিকেতনের উত্তরায়ণে বসে 1939 সালে গুরুদেব নেতাজিকে জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি হওয়ার ক্ষেত্রে সমর্থন জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন ।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চেয়েছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । দুই কিংবদন্তির মধ্যে আদান-প্রদান হওয়া কমপক্ষে 68টি চিঠি রয়েছে ৷
1933 সালে যে সুভাষচন্দ্র বসুকে কবিগুরু তাঁর 'তাসের দেশ' উৎসর্গ করেছিলেন ৷ সেই মানুষটি কালের স্রোতে কবির প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী থেকে ব্রাত্য ৷ প্রসঙ্গত, 1915 সালের 10 মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকার ফিনিক্স স্কুলের পড়ুয়াদের নিয়ে প্রথম শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন মহাত্মা গান্ধি । সেই দিনটি বিশ্বভারতীতে আজও "গান্ধি পূর্ণাহ্য" হিসাবে উদযাপিত হয়ে আসছে ।
বিশ্বভারতীর অধ্যাপক মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় বলেন, "গুরুদেব যে দেশনায়কের বর্ণনা দিয়েছিলেন, সেই দেশনায়ককে সুভাষচন্দ্র বসুর মধ্যে দেখেছিলেন ।" বিশ্বভারতীর আরেক অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্য বলেন, "নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আমাদের হৃদয়ে রয়েছে ৷ তবে বিশ্বভারতীর আরও কিছু করা প্রয়োজন ছিল ৷ তাঁর আগমনের দিন থেকে শুরু করে কথোপকথন সংক্রান্ত তথ্য যদি বিশ্বভারতীতে প্রদর্শিত হয় খুব উপকার হবে ৷ যারা নেতাজিকে নিয়ে গবেষণা করেন তারাও অনেক কিছু জানতে পারবেন ।"
বিশ্বভারতীর ইতিহাস বিভাগের ছাত্র সৌরভ বন্ধু দাস বলেন, "আমাদের আক্ষেপ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বিশ্বভারতী থেকে ব্রাত্য ৷ যাঁকে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এতটা গুরুত্ব দিয়েছেন, উচ্চস্থানে রেখেছেন সেই নেতাজি বিশ্বভারতী থেকেই ব্রাত্য ৷ এটা দুর্ভাগ্যের ।"