কলকাতা, 15 জুন: কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) এজলাসে দাঁড়িয়েই 'সৎ রঞ্জন' রহস্যের উপর থেকে পর্দা সরালেন রাজ্য়ের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সিবিআই-এর প্রাক্তন শীর্ষ কর্তা উপেন বিশ্বাস (Upen Biswas) ৷ তিনি জানালেন, 'সৎ রঞ্জন' আদতে একটি রূপক ! পশ্চিমবঙ্গে নাকি এমন অজস্র 'সৎ রঞ্জন' ছড়িয়ে রয়েছেন ৷ যাঁরা শুধুমাত্র টাকার বিনিময়ে বেআইনিভাবে বহু মানুষকে চাকরি পাইয়ে দেন ! রাজ্যের শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতি সংক্রান্ত যে মামলাগুলি চলছে, সিবিআই যদি তার স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে, তাহলে এমন অনেক 'সৎ রঞ্জন'-এরই খোঁজ পাওয়া যাবে ৷ যদিও একইসঙ্গে উপেন জানান, তাঁর ফেসবুক ভিডিয়োয় তিনি যে 'সৎ রঞ্জন'-এর কথা বলেছিলেন, তাঁর আসল নাম চন্দন মণ্ডল ৷
উল্লেখ্য, রাজ্যজুড়ে যখন এসএসসি, টেট দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে, একের পর এক মামলা রুজু হচ্ছে কলকাতা হাইকোর্টে, আদালতের নির্দেশে তদন্তভার হাতে নিতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই-কে, ঠিক সেই সময় নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেন উপেন ৷ সেখানে শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি নিয়ে সরব হন তিনি ৷ সেই ভিডিয়োতেই 'সৎ রঞ্জন'-এর প্রসঙ্গ তোলেন রাজ্য়ের এই প্রাক্তন মন্ত্রী ৷
উপেনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, 'সৎ রঞ্জন' হলেন এমন একজন ব্যক্তি, যিনি অত্যন্ত 'সততার সঙ্গে' বেআইনিভাবে শিক্ষক নিয়োগ করেন ৷ বদলে চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে মোটা টাকা আদায় করেন তিনি ! এক্ষেত্রে শর্ত শুধু একটাই ৷ চাকরির পরীক্ষা দিতে এসে 'সাদা খাতা' জমা দিতে হবে ওই প্রার্থীকে ৷ তাহলেই নাকি চাকরি পাকা ! আর যদি কোনও কারণে সেই ব্যক্তি চাকরি না পান, তাহলে চাকরির জন্য নেওয়া টাকা ফেরতও দিয়ে দেবেন তিনি ৷ কারণ, এই বিষয়ে তিনি অত্যন্ত 'সৎ' !
স্বাভাবিকভাবেই উপেনের এই পোস্ট ঘিরে শোরগোল পড়ে যায় ৷ অন্যদিকে, ইতিমধ্যে টেট-এ নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির (TET Recruitment Scam) অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন সৌমেন নন্দী নামে এক চাকরিপ্রার্থী ৷ সেই মামলায় পরে উপেন বিশ্বাসকে 'পার্টি' করা হয় ৷ আদালতের নির্দেশে বুধবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়ের (Justice Abhijit Ganguly) এজলাসে হাজির হন উপেন ৷ সেখানেই তিনি জানান, "রঞ্জন আসলে একটি ডট...!" অর্থাৎ সৎ রঞ্জন কেবলই একটি রূপক ! উপেনের অভিযোগ, গোটা পশ্চিমবঙ্গে টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার জন্য একটি বিরাট চক্র তৈরি হয়েছে ৷ সেই চক্রে সংশ্লিষ্ট দফতর ও বিভাগের নিচুতলা থেকে উপরতলা, সমস্ত স্তরের কর্মী ও আধিকারিকদের একাংশ জড়িত রয়েছেন ৷
উপেনের দাবি, সিবিআই সঠিক তদন্ত করলে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত এমন অসংখ্য মানুষের সন্ধান পাওয়া যাবে ৷ কিন্তু, সেই কাজ করার জন্য সিবিআই-এর হাতে যত সংখ্য়ক কর্মী ও আধিকারিক দরকার, তা নেই ৷ উপেনের পরামর্শ, সিবিআই-এর উচিত বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট গঠন করে শিক্ষা ক্ষেত্রে হওয়া দুর্নীতির তদন্ত করা ৷ যাঁরা শুধুমাত্র এই কাজই করবেন ৷ কারণ, এই দুর্নীতির সামাজিক প্রভাব অত্যন্ত গভীর ৷ এই দুর্নীতিকে সমূলে উৎখাত করতে সিবিআই-কে আরও আধিকারিক নিয়োগেরও প্রস্তাব দেন এই প্রাক্তন গোয়েন্দা আধিকারিক ৷ একইসঙ্গে তিনি জানান, আদালত তাঁকে সিবিআই-কে সহযোগিতার নির্দেশ দিয়েছে ৷ তিনি সেই নির্দেশ পালন করতে সবসময় তৈরি বলেও জানিয়েছেন উপেন ৷ তাঁর দাবি, সিবিআই যখনই তাঁকে ডাকবে, ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে, দিনে-রাতে যেকোনও সময় গোয়েন্দাদের সামনে হাজির হয়ে যাবেন তিনি ৷
অন্যদিকে, এদিনের শুনানিতে বিচারপতি উপেনকে জিজ্ঞাসা করেন, রাজ্যের মন্ত্রী থাকাকালীন কেন তিনি এই দুর্নীতির প্রতিবাদ করলেন না ? জবাবে উপেন জানান, তিনি তখন নিরুপায় ছিলেন !