কলকাতা, 30 অক্টোবর: রাজ্য সরকার (State Government) এবং রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান বা রাজ্যপালের (Governor) ইগোর লড়াইয়ের মাঝে একটি সরকারি বিশ্ববিদ্য়ালয়ের উপাচার্য যে কী বিপদে পড়তে পারেন, সম্প্রতি তারই সাক্ষী থাকল পশ্চিমবঙ্গের শতাব্দী প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কলকাতা বিশ্ববিদ্য়ালয় (University of Calcutta) ৷ এর জেরে একজন উপাচার্যের জরুরি নিয়োগ বা পুনর্নিয়োগ নিয়েই আইনি বৈধতার প্রশ্ন উঠল !
তথ্যাভিজ্ঞ মহলের দাবি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা কোনও ব্যতিক্রম নয় ৷ আইনের তোয়াক্কা না-করেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্য়ের আরও 24টি বিশ্ববিদ্য়ালয়ের ক্ষেত্রেও একই ভুল করেছে ৷ অবিলম্বে এই ভুল সংশোধন না-করলে রাজ্যকে আবারও প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে ৷ প্রসঙ্গত, নিয়ম বহির্ভূতভাবে পুনর্নিয়োগের অভিযোগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালী চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Sonali Chakraborti Banerjee) নিয়োগপত্র বাতিল করা হয় ৷ এই পদক্ষেপ ঠেকাতে রাজ্য সরকারের পাশাপাশি সোনালী নিজেও আদালতের দ্বারস্থ হন ৷ দুই পক্ষই এই নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশের দাবি জানায় ৷ কিন্তু, প্রথমে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এবং পরে সুপ্রিম কোর্টেও সেই আবেদন খারিজ হয়ে যায় ৷
আরও পড়ুন: সোনালী চক্রবর্তীকে উপাচার্য পদ থেকে সরানোর নির্দেশ হাইকোর্টের
কলকাতা বিশ্ববিদ্য়ালয়ের প্রাক্তন রেজিস্ট্রার রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী মনে করেন, তৎকালীন আচার্য তথা রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কে (Jagdeep Dhankhar) এড়িয়ে উপাচার্য নিয়োগ করতেই নিয়ম বহির্ভূতভাবে সোনালীকে তাঁর পদে পুনর্বহাল করে রাজ্য সরকার ৷ এমনকী, আইন সংশোধন করে রাজ্যপালের বদলে মুখ্যমন্ত্রীকে সংশ্লিষ্ট সমস্ত রাজ্য সরকারি বিশ্ববিদ্য়ালয়ের আচার্য পদে নিয়োগ করা হয় ! একইসঙ্গে, রাজ্যের বেসরকারি বিশ্ববিদ্য়ালয়গুলির ক্ষেত্রেও একটি বিল পাশ করানো হয় ৷ তার মাধ্যমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পরিদর্শকের পদ রাজ্যপালের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীকে দেওয়া হয় ! এরপর 1979 সালের কলকাতা বিশ্ববিদ্য়ালয় আইনের 60 নম্বর ধারার আওতায় সোনালীকে পুনরায় তাঁর পদে নিয়োগ করা হয় ৷ রাজ্যের দাবি, সেই মুহূর্তে সোনালীকে তাঁর পদ থেকে অপসারিত করা অসুবিধাজনক (Removal of Difficulties) ছিল ! আর এখানেই অনিয়মের অভিযোগ তুলছেন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী জ্য়োতিপ্রকাশ খান ৷ তাঁর মতে, অপসারণের অসুবিধা সংক্রান্ত শর্তটি কেবলমাত্র জরুরি অবস্থাতেই কার্যকর করা যায় ৷ কিন্তু, এক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হতে পারে না ৷
তথ্য বলছে, সোনালীকে তাঁর পদে প্রথম নিয়োগ করা হয়েছিল 2017 সালে ৷ সেই নিয়োগ হয়েছিল যাবতীয় নিয়ম মেনেই ৷ কিন্তু, 2021 সালে তাঁকে যখন ওই পদেই ফের নিয়োগ করা হয়, তখন আর আচার্যের অনুমোদন নেওয়া হয়নি ৷ প্রসঙ্গত, 2017 সালে বাংলার রাজ্যপাল তথা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ছিলেন কেশরীনাথ ত্রিপাঠী ৷ কিন্তু, 2021 সালে সেই পদে আসেন জগদীপ ধনকড় ৷ কেশরীনাথের সঙ্গে রাজ্যের সম্পর্ক ঠিকঠাক থাকলেও জগদীপ ধনকড়ের সঙ্গে একেবারে প্রথম থেকেই দড়ি টানাটানি শুরু হয় ৷ যার জের গড়ায় দেশের অন্যতম প্রসিদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দোরগোড়াতেও !