কলকাতা, 21 অগস্ট: 'দলনেতার নির্দেশ অনুসারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব এবং উন্নয়নের কাজ করব । অন্যথায় পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী নির্বাচিত পদ থেকে বহিষ্কার করার পাশাপাশি দল প্রয়োজনে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে ।' 2023 সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস থেকে নির্বাচিত গ্রাম সদস্য, গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের নেতা-নেত্রীদের এমনই লিখিত 'ঘোষণা পত্র' দিতে হচ্ছে তৃণমূল হাইকমান্ডকে । যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়ে গিয়েছে ।
পঞ্চায়েত আইন মেনে সদস্যপদ খারিজের নির্দিষ্ট ধারা থাকার পরেও কেন দলগতভাবে এ ধরনের পদক্ষেপ করতে হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে । কারণ, এ বারের নির্বাচনের আগে শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে চুরি, দুর্নীতি, কাটমানি তোলার অভিযোগ ওঠে ভুরি ভুরি । দলীয় পদস্থ নেতা-মন্ত্রী শুরু করে গ্রাম সদস্যের বিরুদ্ধেও অর্থ তছরুপ বা নয়ছয়ের অভিযোগ বিস্তর । নির্বাচিত হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যে ফুলে ফেঁপে ওঠার নজিরও কম নয় । এর ফলে, 2024 লোকসভা ভোটের আগে রাজ্যের শাসকদলের 'ঘোষণা পত্র' তথা মুচলেকা লেখানোর পদক্ষেপ নিছক সামান্য ঘটনা বলতে নারাজ রাজ্যের বিরোধী শিবিরগুলি ।
তাঁদের অধিকাংশের বক্তব্য, পঞ্চায়েত আইন মেনে নির্বাচিতদের উন্নয়নের কাজ করতেই হবে । এটা আইনে আছে । তারপরও কেন শাসকদলকে এ সব করতে হচ্ছে ? বখড়া না পাওয়ার ভয় নাকি দলবদলের ?
সিপিআইএম পলিটব্যুরোর সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন," দলীয় পঞ্চায়েত সদস্যদের দিয়ে মুচলেকা লেখাচ্ছে নাকি তৃণমূল ! কেন ? কীসের ভয় ? পঞ্চায়েত আইনের 213 (ক) ধারায় সদস্য পদ খারিজের নির্দিষ্ট ধারা তো আছেই । কে, কবে দল ছেড়ে পালাবে অথবা বখড়ার ভাগ ঠিকঠাক দেবে কি না সেই ভয়ে ? নির্বাচিত সদস্যদের উপর দলীয় চাপ সৃষ্টির কৌশল ?"
অপরদিকে, বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেন, "এ সব কিছু না । এগুলো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চালাকি । উনি ঘুরে ঘুরে বলেছিলেন, জনগণের মত নিয়ে পঞ্চায়েতে আমরা প্রার্থী নির্বাচন করব । সেটা কী হয়েছে ? হয়নি । তৃণমূলের লোকেরাই বলছেন, জায়গায় জায়গায় মস্তান লোক প্রার্থী হয়েছে । অতএব সে কারণে এ সব কিছুই না । এগুলি আইওয়াশ করা হচ্ছে । যাতে এদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আওতায় নিয়ে আসা যায় এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পুরো পয়সাটা চলে আসে । টাকা পয়সা যত এ দিক ও দিক না যায়, সেই ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে এই সমস্ত করা হচ্ছে । তৃণমূলের কোনও জায়গায় স্বচ্ছতা নেই । আর এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা দাবি করা তো বড় ভুলের ব্যাপার ।"
আরও পড়ুন: ইমাম ও মোয়াজ্জেম ভাতা 500 টাকা বাড়ালেন মমতা
এ বিষয়ে মতামত জানতে তৃণমূল নেতা শান্তনু সেনকে ফোন করা হয়েছিল ইটিভি ভারতের তরফে । তিনি এ বিষয়ে মতামত দিতে রাজি হননি । এ বিষয়ে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলতে পারবেন বলে তিনি জানান । তাঁরই কথার ভিত্তিতে আজ দিনভর একাধিকবার কুণাল ঘোষকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি ।