কলকাতা, 14 মে: চলচ্চিত্র হবে কাহিনিনির্ভর ৷ প্রচলিত এই ধারণার বিপরীতে হেঁটেছিলেন তিনি ৷ তাঁর চলচ্চিত্রে সবচেয়ে বেশি জায়গা পেয়েছে বাস্তব ৷ বারবার ধরা পড়েছে সমাজ, রাজনীতি, গণ আন্দোলন ৷ কল্পনার জগৎ নয়, সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের ছবিই চিত্রিত হয়েছে তাঁর চলচ্চিত্রে ৷ তাঁর এই ব্যতিক্রমী ভাবনাচিন্তাই তাঁকে সবার থেকে আলাদা করে দিয়েছে ৷ তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে সাফল্যের চূড়ায় ৷ মৃণাল সেন ৷ এই নামটাই আজ একটা প্রতিষ্ঠান ৷ কিংবদন্তি এই চিত্রপরিচালকের আজ শততম জন্মজয়ন্তী ৷ এই বিশেষ দিনে স্মৃতির সরণি বেয়ে চোখ বুলিয়ে নেব তাঁরই কয়েকটি কালজয়ী ছবির দিকে ৷
রাতভোর
এটি মৃণাল সেনের তৈরি প্রথম ছবি ৷ 1955 সালের এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন উত্তম কুমার ও সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় ৷ তবে ছবিটি দর্শকদের মন জয় করতে পারেনি ৷
বাইশে শ্রাবণ
1960 সালে এই ছবি তৈরি করে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান মৃণাল সেন ৷ একটি প্রত্যন্ত গ্রামের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরা হয় এই ছবিতে ৷ উঠে আসে 43-এর দুর্ভিক্ষ, তীব্র অভাব অনটনের বাস্তব চিত্র বাইশে শ্রাবণে তুলে ধরেন মৃণাল সেন ৷
ভুবন সোম
ক্ল্যাসিক এই ছবি তৈরি 1969 সালে ৷ দেশের নতুন ধারার ছবির পথিকৃৎ ভুবন সোম ৷ এই ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ পরিচালকের জাতীয় পুরস্কার পান মৃণাল সেন ৷ এ ছাড়াও তাঁর ছবি জিতে নেয় শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও শ্রেষ্ঠ কাহিনিকারের জাতীয় পুরস্কার ৷
ইন্টারভিউ
মুক্তিযুদ্ধের পর মুক্তি পাওয়া মৃণাল সেনের অন্যতম জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ইন্টারভিউ ৷ শহর কলকাতার এক সাধারণ তরুণের চাকরির সাক্ষাৎকারের গল্প বলা হয়েছে এই ছবিতে ৷
কলকাতা 71
সে বছরই মৃণাল সেনের কলকাতা 71 মুক্তি পায় ৷ এই ছবি চারটি আলাদা গল্পের সমষ্টি ৷ ছবিটি তৈরি করা হয়েছে সমরেশ বসু, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রবোধ সান্যাল ও মৃণাল সেনের চারটি গল্পের উপর ভিত্তি করে ৷
পদাতিক
কলকাতা ট্রিলজির এটি শেষ ছবি ৷ 1973 সালে পদাতিক মুক্তি পায় ৷
একদিন প্রতিদিন
একদিন প্রতিদিন মুক্তি পায় 1979 সালে ৷ মধ্যবিত্ত সমাজের নীতিবোধের কথা তুলে ধরে এই ছবি তিনটি বিভাগে জাতীয় পুরস্কার পায় ৷ শ্রেষ্ঠ পরিচালক হন মৃণাল সেন ৷
খারিজ
1982 সালে তৈরি এই ছবি পুরস্কার পেয়েছিল কান চলচ্চিত্র উৎসবে ৷ এ ছাড়াও খারিজ শিকাগো চলচ্চিত্র উৎসবে ব্রোঞ্জ হুগো পুরস্কার ও ভ্যালাডয়েড চলচ্চিত্র উৎসবে গোল্ডেন স্পাইক পুরস্কার পায় ৷
তাঁর চলচ্চিত্র জীবন বিরাট সাগরের মতো ৷ যার জল পরিমাপ করা কঠিন ৷ আকাশ কুসুম, আকালের সন্ধানে, খণ্ডহর, জেনেসিস, মহাপৃথিবী, অন্তরীণ আরও নানা ছবি তৈরি করেছেন মৃণাল সেন ৷ সব ছবিতেই দারিদ্র্য, পুলিশি শোষণ, দুর্ভিক্ষের মতো সমকালীন সমাজের চরম বাস্তব তুলে ধরেছেন পরিচালক ৷ তিনি ওড়িয়া, তেলুগু ও হিন্দি-সহ নানা ভারতীয় ভাষায় 8টা ছবি তৈরি করেছেন ৷ তাঁর ছবি মৃগয়া, এক আধুরি কাহানি, একদিন অচানক জনমানসে বিশেষ প্রভাব ফেলেছিল ৷ তাঁর শেষ ছবি আমার ভুবন ৷ এটি মুক্তি পায় 2002 সালে ৷
তাঁর কৃতিত্বের জন্য সম্মানও এসেছে প্রচুর ৷ রাশিয়া ও ফ্রান্স থেকে সম্মানিত হয়েছেন ৷ রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছেন ৷ পেয়েছেন পদ্মভূষণ ও দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার ৷ 2018 সালে 95 বছর বয়সে তাঁর জীবনাবসান হয় ৷ তবে তাঁর মহিমা আরও জ্বলজ্বল করছে মানুষের মনে ৷ চলচ্চিত্রকে কীভাবে মানুষের কথা বলার হাতিয়ার করে তোলা যায় তা দেখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন মৃণাল সেন ৷ আজ তাঁর শততম জন্মজয়ন্তীতে তাঁর প্রতি আমাদের তরফে রইল প্রণাম ও শ্রদ্ধা ৷
আরও পড়ুন: মৃণাল সেনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক এবার বড় পর্দায় আনছেন অঞ্জন