কলকাতা, 3 ফেব্রুয়ারি: কোনও ধর্মগুরুকে অপমান করার ইচ্ছা তৃণমূল কংগ্রেসের (Trinamool Congress) নেই । শুক্রবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলন করে একথা জানিয়ে দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম সম্পাদক তথা রাজ্যের পৌর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) । তিনি বলেন, ‘‘ধর্মগুরুর চাদর পড়ে কেউ যদি রাজনৈতিক নেতা হন এবং যে দলটা বারবার সংখ্যালঘুর উপর আঘাত হেনেছে, গুজরাট দাঙ্গায় 2 হাজার লোককে খুন করেছে, যে দলটা যেখানে গিয়েছে, সেখানে দাঙ্গা করেছে, টাকার জন্য তার সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলে, আর ভোট কাটার জন্য তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে নামব । এটাতে নিশ্চিতভাবে আমরা প্রতিবাদ করব ।’’
এদিন ফিরহাদ হাকিম প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘নওশাদ সিদ্দিকীর অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা কীভাবে এল ! এই টাকা কারা দিয়েছে ! নির্বাচনের মুখে কেন এই টাকা দেওয়া হল । একুশের নির্বাচনে আমরা তো জানতাম সিপিএমের (CPIM) সঙ্গে জোট বেঁধে লড়াই করেছিলেন ওরা । বিজেপি (BJP) সঙ্গে বোঝাপড়া কীভাবে হল ? বিজেপির সঙ্গে এই বোঝাপড়া কিসের স্বার্থে ?’’
এদিন বিজেপি নেতাদের সঙ্গে নওশাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের তথ্য সামনে এনে ফিরহাদ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘নওশাদের সঙ্গে বিজেপি নেতাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট কিসের স্বার্থে ? তিনি যদি সংখ্যালঘু নেতা হয়ে থাকেন, সংখ্যালঘু ধর্মগুরু হয়ে থাকেন, যে ধর্মের মানুষেরা তাদের সব থেকে বেশি আঘাত করেছে, তাদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট কিসের স্বার্থে !’’
এদিন শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) বক্তব্যকে সামনে রেখে ফিরহাদ হাকিম প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারী নন্দীগ্রামের বুকে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘আমি 70 শতাংশের ভোট চাই, 30 শতাংশের নয়’ । তাঁর মুখে এখন নওশাদের প্রশংসা বা সার্টিফিকেট কেন ? আমরা রাম-বামের যে বোঝাপড়ার কথা বলছিলাম, এটা কি তার প্রমাণ নয় !’’
এদিন ফিরহাদ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘রাজনীতি করতে এসেছেন সেখানে ধর্মগুরু কি ! পুলিশকে ইঁট মারছেন, পুলিশ আপনার বিরুদ্ধে মামলা করবে না ! আপনি একটা রাজনৈতিক দলের পার্টি অফিস পুড়িয়ে দিচ্ছেন, আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না ! তৃণমূলের বিরোধিতা করতে হবে বলে একটা বড় চক্রান্ত করা হচ্ছে । হায়দরাবাদ থেকে এসেছিলেন এক নেতা, যাঁকে আমরা বলতাম বিজেপির বি টিম । এখন তো একথা বলতে হচ্ছে নওশাদ সাহেব বিজেপির বি টিম হিসেবে কাজ করছেন ।’’ ফিরহাদের আরও প্রশ্ন, ‘‘শুধুমাত্র টাকার জন্য যে মানুষগুলি আপনাকে হুজুর হুজুর করে তাঁদের বিশ্বাস ভেঙে দিলেন আপনি !’’
প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিন ধরে নওশাদ সিদ্দিকীকে নিয়ে রাজ্য রাজনীতি উত্তাল । একদিকে ফুরফুরা শরীফ থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একাংশ এই নিয়ে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে কাঠগড়ায় তুলেছে । অন্যদিকে, নওশাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলেছে । অবশেষে এই নিয়ে মুখ খুলল তৃণমূল কংগ্রেস । লালবাজারে তদন্ত থেকে পাওয়া তথ্য প্রকাশ্যে এনে এই ধর্মগুরু তথা বিধায়কের কড়া সমালোচনা করলেন ফিরহাদ হাকিম ।
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষও । তিনিও একযোগে এই ঘটনার কড়া নিন্দা করেন । একই সঙ্গে বিজেপি নেতার সঙ্গে নওশাদ সিদ্দিকীর হোয়াটসঅ্যাপ বিনিময়ের তদন্ত দাবি করেছেন কুণাল ঘোষ । তাঁর অভিযোগ, নওশাদের মাধ্যমে তৃণমূলের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে বিজেপি ।
আরও পড়ুন: ধর্মকে হাতিয়ার করে রাজনীতি ঠিক না, নওশাদকে পালটা ফিরহাদের