কলকাতা, 4 অক্টোবর: দিল্লি-কাণ্ডের প্রতিবাদে অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায়ের ঘোষিত রাজভবন অভিযানকে তীব্র কটাক্ষ করল বাম ও কংগ্রেস ৷ রাজ্যপাল যখন অনুপস্থিত থাকবেন, তখন এই রাজভবন অভিযান কেন করা হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফের তৃণমূল-বিজেপি সেটিং তত্ত্বের অভিযোগ এনেছে বিরোধীরা ৷
100 দিনের কাজের বকেয়া টাকা আদায়ে সদলবলে দিল্লিতে গিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় । দীর্ঘ অপেক্ষার পরও কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে দেখা করেননি বলে অভিযোগ । পরে এই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হন তৃণমূল নেতৃত্ব ৷ এর প্রতিবাদে আগামিকাল রাজ্যের রাজভবন অভিযানের ডাক দিয়েছেন অভিষেক । তাঁর এই কর্মসূচিকে তীব্র কটাক্ষ করেছে রাজ্যের বিরোধীরা । তাদের দাবি, এই মুহূর্তে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস রাজভবন তথা কলকাতাতেই নেই । গতকাল তিনি কোচিতে গিয়েছেন । আর এই সময়টাকেই রাজভবন অভিযানের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে ৷
রাজভবন সূত্রের খবর, আজ রাত আটটায় দিল্লিতে রাজ্য সিভি আনন্দ বোসের বিশেষ কর্মসূচি আছে । ফলে আজকে তাঁর পক্ষে কলকাতা ফেরা সম্ভব নয় । আগামিকাল সকালে বা বেলায় তিনি আদৌ কলকাতায় ফিরবেন কি না, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না । রাজ্যপালের পূর্বের কয়েকটি দিল্লি সফর একদিনে শেষ হয়নি । রাজভবনের একাংশের আধিকারিকরা মনে করছেন, আগামিকাল রাজ্যপাল কলকাতাতে ফিরবেন না জরুরি কাজ ছাড়া । আর তাঁর এই সফরের কারণেই রাজ্য রাজনীতিতে শাসক দলের কর্মসূচিকে ঘিরে আক্রমণের পালা শুরু হয়েছে ।
তৃণমূল-বিজেপির সেটিং-তত্ত্ব আওড়ে বাম-কংগ্রেসের বক্তব্য, "নাটক করছে । ও সব না-করে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সেদিকেই নজর দেওয়া হোক ।"
একধাপ এগিয়ে সিপিএমের বক্তব্য, এক মাস আগে সিজিও কমপ্লেক্স অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছিল । মূলত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারি-সহ অভিযুক্তদের হেফাজতে নেওয়ার দাবিতে এই অভিযান হবে । যেখানে সংবাদমাধ্যমের উপস্থিতি থাকবে । সে দিক থেকে নজর ঘোরাতেই তৃণমূল এ রকম পদক্ষেপ করেছে বলে মনে করছেন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের নেতারা ।
আরও পড়ুন: রাজ্য সরকার উলঙ্গ হয়ে যাবে জেনে কোনওভাবেই দিল্লিতে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেননি অভিষেকরা: বিজেপি
সিপিআইএম নেতা রবীন দেব ইটিভি ভারতকে বলেন, "সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম একমাস আগেই 5 অক্টোবর সিজিও কমপ্লেক্স অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন । অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তো বটেই, নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত সমস্ত তৃণমূল নেতাদের গ্রেফতারের দাবিতে তা হবে । বামপন্থীরা ছাড়াও হাজার হাজার মানুষ সেখানে সামিল হবেন । আর সে দিনই রাজভবনে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন অভিষেক । কারণ, দিল্লিতে তাঁরা ভালো নাটক জমাতে পারেননি । নতুন করে রাজ্যে এসে তা শুরু করতে চাইছে । রাজ্যপাল তো রাজ্যেই নেই । দিল্লিতে গিয়ে দিল্লির নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে পারলেন না, রাজ্যে দিল্লির প্রতিনিধি (রাজ্যপাল)ও নেই । সব জেনে বুঝে এই নাটক । যাতে সংবাদ মাধ্যমের নজর তাঁদের দিকে থাকে । বামেদের আন্দোলন রাজ্যবাসীর কাছে তথা দেশবাসীর কাছে না পৌঁছয় ।"
কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, "রাজ্যপাল কবে থাকবেন সেটা আলোচনা করে যেতে পারতেন তৃণমূল নেতারা । তা করছেন না । ও সমস্ত নাটক ছেড়ে রাজ্যের যে 7-8 জেলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেদিকেই নজর দেওয়া উচিত তৃণমূল নেতাদের ।"
যদিও তৃণমূল নেতা নির্মল ঘোষ বলেন, "বাংলার মানুষের স্বার্থে এই আন্দোলন । রাজ্যপাল থাকুন না থাকুন । কাল রাজভবন অভিযান হচ্ছেই । সত্যিই যদি রাজ্যপাল বাংলার মানুষের কথা ভাবেন তাহলে তাঁর উচিত রাজভবনে থাকা ।"