কলকাতা, 17 মে : সকাল সকাল বাড়ি থেকে তুলে নিজ়াম প্যালেসে নিয়ে আসা হয়েছিল শোভনকে ৷ শোভনের সঙ্গে সঙ্গে নিজ়াম প্যালেসে ছুটে গিয়েছিলেন বৈশাখী ৷ সব তিক্ততা ভুলে স্বামীর কঠিন সময়ে পাশে দাঁড়াতে নিজ়াম প্যালেসে গিয়েছিলেন তৃণমূল বিধায়ক রত্না চট্টোপাধ্যায়ও ৷
শুধু শোভনকেই নয়, তুলে আনা হয়েছিল আরও তিনজনকে ৷ ববি হাকিম ৷ মদন মিত্র ৷ সুব্রত মুখোপাধ্যায় ৷ তৃণমূলের হেভিওয়েট তিন বিধায়ক, তাঁদের মধ্যে দু'জন আবার মন্ত্রীও ৷ হুলুস্থুল পড়ে যায় চারিদিকে ৷ নিজাম প্যালেসের বাইরে ততক্ষণে ভিড় জমে গিয়েছে তৃণমূল সমর্থকদের ৷ দলের নেতাদের পাশে দাঁড়াতে কালীঘাট থেকে গাড়ি ছুটিয়ে নিজাম প্যালেসে আসেন মমতা ৷ সোজা চলে গেলেন 15 তলায় ৷
ততক্ষণে গ্রেফতার হয়ে গিয়েছেন চারজনেরই ৷ ব্যাঙ্কশাল কোর্টে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে শুনানি হবে ৷ ভার্চুয়ালি পেশ করা হবে চারজনকে ৷ নিজ়াম প্যালেসে পৌঁছে গিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও ৷ শুনানি শুরু হওয়ার পর তিন বিধায়কের হয়ে সিবিআই আদালতে সওয়াল করলেন তিনি ৷ তিন তৃণমূল হেভিওয়েটের জামিনের জন্য জোরালো সওয়াল করলেন ৷ সিবিআইয়ের প্রভাবশালী তত্ত্বকে চুরমার করে দিলেন আদালতের সামনে ৷
প্রথম লড়াইয়ে হাসি ফুটল তৃণমূলের মুখে ৷ জামিন পেলেন তিন বিধায়ক ৷ জামিন পান শোভনও ৷ কিন্তু তাও মনের মধ্যে একটা অস্বস্তি কিন্তু থেকেই গেল ৷ নিজ়াম প্যালেসে মমতা বসে রয়েছেন ৷ কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর প্রিয় কাননের জামিনের জন্য একবারের জন্যও সওয়াল করলেন না কল্যাণ ৷ শোভনের জামিনের জন্য আদালতে সওয়াল করলেন অন্য এক আইনজীবী সুদীপ্ত মৈত্র ৷
একটা সময় দলে মমতার সবথেকে স্নেহধন্য ছিলেন কানন ৷ ভাইফোঁটা নিতেন মমতার থেকে ৷ যে কোনও উৎসবে-পরবে-অনুষ্ঠানে উপহার দেওয়া-নেওয়া ৷ দিদির প্রতি কাননের ছিল অগাধ আনুগত্য ৷ দিদিও কাননকে কলকাতার মেয়র করেছিলেন ৷ মন্ত্রিত্বের ভারও দিয়েছিলেন ৷
আজ যখন শোভনের গ্রেফতারির পর রত্নাকে ছুটে যেতে দেখা গিয়েছিল নিজ়াম প্যালেসে, তখন অনেকেই ভেবেছিলেন দলও হয়ত সব তিক্ততা ভুলে যাবে ৷ হয়ত কাননের পাশে দাঁড়াবে ৷ কিন্তু তা হল না ৷ কল্যাণ লড়লেন ববি, মদন, সুব্রতর জন্য ৷ আর কাননের জন্য লড়লেন অন্য কেউ ৷
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এর জন্য দায়ী কানন নিজেই ৷ অনেকদিন ধরে তৃণমূলের সঙ্গে টালবাহানা ৷ শেষে বৈশাখীকে সঙ্গে নিয়ে বিজেপিতে ৷ কাননের বেহালা পূর্বের আসনে দাঁড় করানো হয় রত্নাকে ৷ জিতেও এলেন রত্না ৷ মুখে এমন কিছু না বললেও শোভন-বৈশাখী সখ্যতায় পরোক্ষে রত্নার পাশেই দাঁড়ালেন মমতা ৷
এদিকে ভোটে টিকিট না পেয়ে বিজেপির উপর মনঃক্ষুন্ন হন কাননের ৷ দিলীপ ঘোষকে চিঠি লিখে বিজেপি ছাড়ার কথাও জানান শোভন ৷ বৈশাখীও শোভনের পথই অনুসরণ করেন ৷ অর্থাৎ এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তাতে বৈশাখী-ঝড়ে বেসামাল শোভন ৷ তৃণমূলেও টিকলেন না ৷ বিজেপিতে গিয়ে সেখানেও মন ভরল না ৷ আজ নিজ়াম প্যালেসে রত্না এলেও শোভনের পৃথক আইনজীবী থাকাটা যেন বারবার প্রমাণ করে দিচ্ছিল নেত্রী আর কাননকে চাইছেন না ৷