কলকাতা, 16 জানুয়ারি: 24 ঘণ্টা কাটার আগেই হাইকোর্টে আবেদন প্রত্যাহার শেখ শাহজাহানের । সন্দেশখালির ঘটনা সংক্রান্ত মামলায় শেখ শাহজাহানের পক্ষ থেকে মামলায় যুক্ত হওয়ার আবেদন জানানো হয়েছিল আদালতে । সোমবার বিচারপতির প্রশ্নের মুখে পড়েন শেখ শাহজাহানের আইনজীবী । তার পর আজ মঙ্গলবার আবেদন প্রত্যাহার করে নিলেন শাহজাহান । অন্যদিকে এ দিন আদালতে সন্দেশখালিতে ইডি আধিকারিকদের উপরে হামলার ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে কেস ডায়েরি জমা দেওয়া হয় ৷ রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল জানান, এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মোট গ্রেফতার হয়েছে সাতজনকে ।
এ দিন মামলার শুনানি শেষ হয়েছে । বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত মামলার রায়দান আগামী শুক্রবার করবেন বলে প্রথমে জানান ৷ কিন্তু ইডির আইনজীবী আপত্তি জানিয়ে বলেন, রাজ্য পুলিশের উপর তাঁদের কোনও ভরসা নেই । সময় দিলে তথ্য প্রমাণ লোপাট করতে পারে পুলিশ । অথবা বিকৃত করতে পারে । তাই আগামিকালই (বুধবার) এই মামলার রায় ঘোষণা করুক আদালত । তারপরই বিচারপতি সেনগুপ্ত নিজের সিদ্ধান্তে বদল আনেন । এবং জানান আগামিকালই তিনি এই মামলার রায় ঘোষণা করবেন ।
এ দিন মামলার শুনানির শুরুতেই বিচারপতি সেনগুপ্ত জানতে চান, "এতদিন হয়ে গেল পুলিশ মূল মাস্টারমাইন্ড শেখ শাহাজাহানকে কেন গ্রেফতার করতে পারল না ? সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে পুলিশ কী ব্যবস্থা নিয়েছে ?" রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, "ঠিক কী হয়েছিল সঠিক কোনও ভিডিয়ো ফুটেজ নেই ।" বিচারপতি বলেন, "হঠাৎ কিছু ঘটে গেলে তার ভিডিয়ো ফুটেজ পাওয়াটা কঠিন, সেটা মানছি । কিন্তু তা বলে পুলিশ কী চুপ করে বসে থাকবে ? পুলিশকে বলুন ফুটেজ জোগাড় করতে । মূল অভিযুক্ত এখন গ্রেফতার হয়নি, পুলিশ কী করছে ?"
গত 5 জানুয়ারি সকাল 11টা 30 মিনিটে ঘটনাটি ঘটেছে বলে দাবি রাজ্যের । রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের (এজি) উদ্দেশ্যে বিচারপতি বলেন, ‘‘গতকাল (সোমবার) আপনি অন্য একটা সময় বলেছিলেন ।’’ এজি জানান, গতকাল কেস ডায়েরি না দেখে বলেছিলেন । আর পুলিশ গিয়ে দেখে শেখ শাহজাহানের বাড়িতে তালা ঝোলানো রয়েছে ।
রাজ্যের বক্তব্য শুনে বিচারপতি বলেন, "পুলিশ গেল শেখ শাহজাহানের বাড়িতে । বাইরে তালা ঝোলানো দেখে বাড়ি চলে এল ? পুলিশ প্রয়োজন মনে করল না বাড়ির ভিতরে কেউ আছেন কি না, তা জানার ? যদি কেউ না থেকে থাকে, তাহলে পুলিশ কেন সিল করল না ?" শেখ শাহজাহানের আইনজীবীর উদ্দেশ্যে বিচারপতি বলেন, "শেখ শাহজাহান কতখানি প্রভাবশালী, তা ইডি আধিকারিকদের ওপর আক্রমণের ঘটনায় স্পষ্ট ৷ তিনি এতটাই প্রভাবশালী যে রাজ্যের পুলিশ তাঁর নাগাল পাচ্ছে না ।"
ইডির আইনজীবীর বক্তব্য, "রাজ্য সরকার বলছে এটা একটা ছোট ঘটনা ৷ এটা কোনও ছোট ঘটনা নয় । পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে । ঘটনার 10 দিন হয়ে গেল, আজও রাজ্য পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারেনি ৷ তাহলে বিচারপতি বুঝতেই পারছেন তিনি কতটা প্রভাবশালী ।"
বিচারপতি রাজ্যের কাছে জানতে চান, "যখন পুলিশ তল্লাশি অভিযানে গেল ঘটনার পর, অভিযুক্তকে না পেয়ে পুলিশ কি শেখ শাহজাহানের মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন দেখেছিল ? সেই বাড়িতে না থাকলেও আশেপাশে তো ছিল ৷" পুলিশের আচরণে স্পষ্টতই অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারপতি ।
ইডির দাবি, "রাজ্য পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবেই শেখ শাহজাহানকে পালাতে সাহায্য করেছে । কারণ, কেন্দ্রীয় বাহিনীর পক্ষে লোকালয় চেনা সম্ভব নয় । পুলিশ কোনও সাহায্যই করেনি ওই দিন ইডিকে । শেখ শাহজাহানের বাড়িতে যাওয়ার আগেই তার কাছে খবর পৌঁছে যায়... কিন্তু কিভাবে ? সেখানে ইডি যাচ্ছে, সেটা শুধুমাত্র পুলিশের কাছেই খবর ছিল । খবর পৌঁছে যাওয়ার পরেই শেখ শাহজাহানও তাঁর দলবলকে বলে ওই দিন এই ঘটনা ঘটিয়েছে । প্রত্যেকের কাছে লাঠি, ইট ছিল । এই ঘটনায় বারবার পুলিশ দর্শকের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে ।"
বিচারপতি শেষে বলেন, "আমি আশা করব আগামী শুক্রবার এই সময়ের মধ্যেই পুলিশ অবশ্যই নিজেদের সেরা তদন্ত করে মূল মাস্টারমাইন্ড তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করবে । রাজ্যের তদন্তকারী আধিকারিকদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে । অবশ্যই রাজ্য এই বিষয় নজর রাখবে । ওই দিন আদালত রায় ঘোষণা করবে এই মামলার ।’’ তার পর অবশ্য ইডির আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলার রায় ঘোষণার দিন শুক্রবারের বদলে বুধবার করেন বিচারপতি ৷
আরও পড়ুন: