কলকাতা, 14 এপ্রিল: পঞ্চায়েত ভোটের মুখে, শুক্রবার সিউড়ির সভামঞ্চ থেকে বাংলার মানুষের কাছে লোকসভার 35টি আসন চেয়েছেন অমিত শাহ ! চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদিকে জেতাতে এবং তাঁর হাত শক্ত করতে রাজ্যবাসীর কাছে এই তাঁর আর্জি ! অমিতের দাবি, বাংলার মানুষ পরবর্তী লোকসভা ভোটে বিজেপিকে 35 আসনে জেতালে আর 2025 সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না ! তার আগেই রাজ্যের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার পড়ে যাবে ! অমিতের এই মন্তব্য়েই চক্রান্তের গন্ধ পাচ্ছেন শাসক তৃণমূল কংগ্রেস ৷ তাদের আশঙ্কা, গণতান্ত্রিক লড়াইয়ে এঁটে উঠতে না পেরে এবার পিছন দরজা দিয়ে বাংলায় সরকার ফেলার ষড়যন্ত্র করছে বিজেপি !
অমিত শাহের মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ ৷ তিনি বলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে অমিত শাহকে পাঁচটি প্রশ্ন করা হয়েছিল ৷ কিন্তু, এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার জবাব দেননি ৷ কারণ, তাঁর কাছে এইসব প্রশ্নের কোনও জবাবই নেই ৷ উলটে তিনি বারবার জানতে চেয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি এটা করতে পারবেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি ওটা করতে পারবেন ! অতএব বিজেপি বুঝতে পারছে, এই মুহূর্তে দেশে নরেন্দ্র মোদির বিকল্প মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় !
কুণালের দাবি, মমতাই যে মোদির একমাত্র বিকল্প এদিন সেকথা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন অমিত শাহ ৷ এই প্রসঙ্গে কুণাল এদিন বলেন, "আপনি (অমিত শাহ) যে যে চ্যালেঞ্জগুলি দিয়ে গেলেন, আমরা তা অ্যাকসেপ্ট করছি ৷ সুযোগ পেলে দলনেত্রী তাঁর কাজেই প্রমাণ করে দেবেন যে তিনি কী পারেন ! আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর ছায়া দেখতে পাচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী !"
এদিন অমিত শাহ যে 35 আসন জেতার টার্গেট বেঁধে দিয়েছেন, সেই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে পালটা কটাক্ষের সুর শোনা যায় কুণালের গলায় ৷ তিনি বলেন, "শূন্য থেকে গুনতে শুরু করুন ! একে পৌঁছতেও আপনাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হবে ৷ কিছু লোককে বিহার থেকে ঢুকিয়ে আর যাই হোক, বাংলার সরকার বদল করা যাবে না ৷ একুশের বিধানসভা নির্বাচনের সময় দেখেছিলাম 'অব কি বার দোশো পার' ! তখন ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করেছিলেন অমিত শাহজি ৷ একটা জিনিস প্রমাণিত, ওঁর কোনও কিছু দাবি করা মানেই বাংলার মানুষ তা প্রত্যাখ্যান করবেন ৷"
এদিন বিজেপির বিরুদ্ধে সরাসরি সরকার ফেলার চক্রান্ত করার অভিযোগ এনেছেন কুণাল ঘোষ ৷ তাঁর মতে, অমিত শাহের এদিনের বক্তব্য অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক এবং স্বৈরাচারী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ৷ এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের মুখপাত্র বলেন, "এখানে নির্বাচিত সরকার চলছে ৷ লজ্জা করে না ? 2021 সালে ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করার পর হেরেছেন ! বুকের পাটা থাকলে বলুন, পরের নির্বাচনে (2026 বিধানসভা নির্বাচন) মোকাবিলা করব ৷ মাঝপথে ব্যাক ডোর দিয়ে সরকার ফেলার চক্রান্ত হচ্ছে ! ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে ! আমরা এই কথাই বারবার বলে এসেছি ৷ লোকসভা ভোটের সঙ্গে বিধানসভার সম্পর্ক কী ! বিধানসভায় নির্বাচিত সরকার রয়েছে ৷ তাকে ফেলে দেওয়ার কথা কে বলছেন? দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ! তার মানে একটা চক্রান্ত চলছে ! অমিত শাহের মনের কথা বেরিয়ে পড়েছে ৷"
আরও পড়ুন: অমিতের 'শাহি' ভাষণে নেই পঞ্চায়েত নিয়ে কোনও কথা, হতাশ বিজেপি কর্মীরা
কুণালের আরও ব্যাখ্য়া, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখ থেকে এইসব কথা বেরোচ্ছে ! এর অর্থ হল, সমস্ত চক্রান্ত দিল্লি থেকে হচ্ছে ! যেটা বিভিন্ন রাজ্যে করে এসেছেন, সেটা এই রাজ্যেও করতে চাইছেন ৷ একইসঙ্গে অমিতের উদ্দেশে কুণালের প্রশ্ন, আপনি পরিবারতন্ত্র নিয়ে কথা বলছেন ! তাহলে শুভেন্দু অধিকারী, শিশির অধিকারীরা কি পরিবারতন্ত্রের অংশ নয় ? কাচের ঘরে বসে ঢিল ছুড়বেন না !