কলকাতা, 22 অক্টোবর : সাংসদ পদ ছাড়ার দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন তিনি ৷ আর 19 অক্টোবর সাংসদ পদে ইস্তফা দিয়ে বেরিয়ে প্রথমে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে আক্রমণ করেন বর্তমান তৃণমূল নেতা বাবুল সুপ্রিয় (Babul Supriyo) ৷ শুভেন্দুও বাবুলের সঙ্গে 'পিসি-ভাইপো'র চুক্তি ঠিক কী আর কীসের ভিত্তিতে বাবুল দলবদল করলেন, তা প্রকাশ্যে আনার দাবি তোলেন ৷ তিনি মনে করিয়ে দেন একসময় এই বাবুল বলেছিলেন, "কালীঘাটে টালির চালা, চোরদের পাঠশালা"। আর সেই চোরদের পাঠশালাতে নাম লিখিয়েছেন আসানসোলের প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ-নেতা ৷ এর জবাবে গতকাল একটি ফেসবুক পোস্টে বিজেপিকে "কাঁকড়ায় ভরা একটি দল" বলে উল্লেখ করে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসা শুভেন্দু অধিকারীকে (Suvendu Adhikari) একপ্রকার তুলোধনা করলেন বাবুল সুপ্রিয় ৷
দলবদলের রাজনীতিতে একটি দলের হয়ে নির্বাচনে জিতে অন্য দলে চলে যাওয়ায় নানারকম আইনি জটিলতা তৈরি হয়েছে ৷ এর মধ্যে কৃষ্ণনগর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপির হয়ে জয়ী প্রার্থী মুকুল রায় পরে তৃণমূলে ফিরে আসেন ৷ এই অবস্থায় তাঁকে পিএসি-র চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ ঘিরে আইনি জটিলতা তৈরি হয়, যা এখনও বিচারাধীন ৷ অন্যদিকে শুভেন্দু অধিকারীর বাবা কাঁথির (Kanthi Lok Sabha Constituency) তৃণমূল সাংসদ শিশির অধিকারী (Sisir Adhikari) ও ভাই তমলুকের (Tamluk Lok Sabha Constituency) তৃণমূল সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারীকে (Dibyendu Adhikari) নিয়েও বিতর্ক চলছে ৷ শিশির অধিকারী তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ হলেও ভোটের আগে অমিত শাহের প্রচারে যাওয়া নিয়ে তৃণমূলের কোপে পড়েছিলেন ৷ এমনকি দিব্যেন্দু অধিকারীকে নিয়েও দলের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে ৷ প্রাক্তন বিজেপি নেতা তথা সাংসদ বাবুল 18 সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়ে ঘোষণা করেন তিনি সাংসদ পদ ছেড়ে দেবেন ৷ এরপর 19 অক্টোবর সংসদের অধ্যক্ষ (Speaker) ওম বিড়লার (Om Birla) কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে তিনি শুভেন্দুকে তাঁর বাবা ও ভাইকেও দ্বিচারিতা থেকে সরে সাংসদ পদে ইস্তফা দেওয়ার পরামর্শ দেন ৷ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা (Leader of Opposition) বারে বারে মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইন (Anti Defection Law) নিয়ে সরব হয়েছেন ৷
আরও পড়ুন : Suvendu-Babul : পিসি-ভাইপোর সঙ্গে কীসের চুক্তি ? বাবুলকে আক্রমণ শুভেন্দু'র
তারপর বাবুল সুপ্রিয়র এই আক্রমণাত্মক ফেসবুক পোস্ট ৷ শুরুতে তাঁর প্রতি বিজেপির আচরণ নিয়ে লিখেছেন, "অন্যায় ভাবে করা জরিমানা, যে যাই বলুক, কখনোই তা মেনে নেব না ৷ মেনে নিইনি আর তাই আড়াই বছর বাকি থাকা সত্ত্বেও বিজেপির হয়ে জেতা সাংসদ পদ ছেড়ে দিতে একটুও দ্বিধা করিনি ৷" সেখানে সঙ্গীত জীবনের প্রসঙ্গ টেনে জানিয়েছেন, তিনি একসময় ব্যাঙ্কের নিরাপদ চাকরি ছেড়ে মুম্বই পাড়ি দিয়েছিলেন নিজের গায়ক হওয়ার স্বপ্ন পূরণের জন্য ৷ সেদিন যেমন ভয় পাননি, এখনও সাংসদ পদ ছাড়তে ভয় পাননি, ভক্ত, অনুগামীদের কাছে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন গায়ক-নেতা ৷
এর পরে বিজেপিকে "কাঁকড়ায় ভরা একটি দল" বলে আক্রমণ করে বাবুল লেখেন, "যারা নিজেদের প্রকৃত কর্মীদের সঙ্গে নির্লজ্জ বিশ্বাসঘাতকতা বেইমানি করে আর বহিরাগতদের চার্টার্ড প্লেন চড়ায়... আড়াই বছর বাকি থাকতেও বিজেপির টিকিটে বিজেপির জন্য জেতা সাংসদ পদ নির্দ্বিধায় ছেড়ে দিতে পেরেও আমি সমান গর্বিত ৷" এখানে 'বহিরাগত' বলতে শুভেন্দু অধিকারীর পরিবারের সদস্যদেরই বুঝিয়েছেন তিনি ৷ এর একটি কারণ নির্বাচনের পরে শুভেন্দুর বাবা ও ভাইয়ের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছিল ৷ আর এই অনুচ্ছেদের শুরুতে তিনি নাম না নিয়ে লিখেছেন, "বিজেপি থেকে যিনি আমাকে নৈতিকতার জ্ঞান দিচ্ছেন তাঁকে বলব, নিজের বাড়ির অন্দর থেকে পাঠটা শুরু করতে ৷" তিনি শিরদাঁড়া সোজা রেখে যা করেছেন, সেই কাজটা বিরোধী দলনেতার পরিবারের সদস্যরা করে দেখাক, চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন তৃণমূল নেতা বাবুল সুপ্রিয় ৷
আরও পড়ুন : Babul Supriyo : বিজেপি সাংসদ পদে ইস্তফা দিয়ে শুভেন্দুকে আক্রমণ তৃণমূল নেতা বাবুলের
পোস্টের শেষে আসানসোলবাসীকে অনুরোধ জানিয়েছেন 'ধান্দাবাজগুলির' কথায় কান না দিতে, রাজনীতিতে না জড়াতে ৷ তাঁর প্রাক্তন লোকসভা কেন্দ্রের বাসিন্দাদের আশ্বাস দিয়েছেন "আমি আপনাদের ছিলাম, আছি, থাকবো" ৷ এমনকি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে ফিরিয়ে এনেছেন 'শুধুমাত্র বাংলার মানুষের কাজ মন দিয়ে করতে' ৷ আর একেবারে শেষ লাইনে লিখেছেন, "আপনাদের জন্য কিছু না কিছু EXTRA করার চেষ্টা করবো ৷" কিন্তু এই 'EXTRA' বলতে গায়ক-নেতা কী বুঝিয়েছেন, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে ৷ নাকি আগামী 2024-এর লোকসভা নির্বাচনে তাঁর আসানসোল কেন্দ্রের প্রার্থী হওয়ার আভাস দিয়ে রাখলেন পোস্টের শেষে ?