চন্দ্রকোনা (পশ্চিম মেদিনীপুর), 15 এপ্রিল: পঞ্চায়েত ভোটের মুখে পশ্চিম মেদিনীপুরে ফের প্রকাশ্য তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল ! এবার ব্লক কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দলের ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধেই তোপ দাগলেন সদ্য তৃণমূলের জেলা কমিটির সম্পাদক নির্বাচিত হওয়া সূর্যকান্ত দোলই । একনায়কতন্ত্র কায়েম করার জন্য আলোচনা ছাড়াই ব্লক কমিটি গঠন করেছেন চন্দ্রকোনা-1 ব্লক তৃণমূল সভাপতি, এমনই অভিযোগ সূর্যকান্তর ৷
গত শুক্রবার চন্দ্রকোনা-1 ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন ওই ব্লকের সভাপতি মহাদেব মল্লিক । সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ, সদস্য-সহ মোট 40 জনের একটি পূর্ণাঙ্গ ব্লক কমিটি গঠন করা হয় । এই কমিটির ঘোষণার পরই তৃণমূলের অন্দরে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ । দলের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি থেকে ব্লকের প্রাক্তন সভাপতি, নবগঠিত ব্লক কমিটি নিয়ে সরাসরি মুখ খুলেছেন ৷
চন্দ্রকোনা-1 পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সূর্যকান্ত দোলইয়ের অভিযোগ, ‘‘ব্লক কমিটি গঠন নিয়ে ব্লকের অন্যান্য নেতৃত্বদের সঙ্গে আলোচনা না করে নিজের মন মতো পছন্দের লোকেদের কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে । দলের পুরনো নেতা কর্মীদের বঞ্চিত করে নিজে একনায়কতন্ত্র কায়েম করার জন্যই এই ব্লক কমিটি গঠন করেছেন ব্লক সভাপতি ৷’’ সূর্যকান্ত সদ্য ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের কমিটিতে সম্পাদক হিসাবে স্থান পেয়েছেন । ব্লক কমিটি গঠন নিয়ে তাঁর অসন্তোষের কারণ ইতিমধ্য জেলা নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে বলেও তিনি জানান ।
অপরদিকে ব্লকের পুরনো নেতৃত্ব তথা প্রাক্তন ব্লক সভাপতি চিত্তরঞ্জন পালও এই ব্লক কমিটি গঠন নিয়ে সরব হয়েছেন এবং তিনি সতর্কও করেছেন যে এই ব্লক কমিটি নিয়ে আগামী পঞ্চায়েত ভোটে লড়তে গেলে বিরূপ প্রভাব পড়বে দলে ৷ এমনকি দলবাজির মতো গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন চন্দ্রকোনা-1 ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি চিত্তরঞ্জন পাল ।
ব্লক কমিটি গঠন নিয়ে ব্লকের বর্তমান সভাপতি মহাদেব মল্লিককেই কাঠগঠায় দাঁড় করিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছে দলেরই একাংশ নেতৃত্ব । আর এতেই ফের প্রকাশ্য তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল ৷ যাকে ঘিরে চন্দ্রকোনা-1 ব্লকে শুরু হয়েছে জোর রাজনৈতিক তরজা ।
যদিও এই বিষয়ে চন্দ্রকোনা-1 ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি মহাদেব মল্লিক বলেন, ‘‘নতুন যে ব্লক কমিটি গঠন করা হয়েছে, তা বিধায়ক থেকে জেলা সভাপতির অনুমোদন নিয়েই করা হয়েছে । রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশ মতো সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই ব্লক কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং সেখানে পুরনো নেতা-কর্মীদের যেমন স্থান দেওয়া হয়েছে, তেমনই যাঁরা দলের কাজে সক্রিয়, তাঁদেরও কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে । যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা ঠিক নয় ।’’
এবিষয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি বলেন, "চন্দ্রকোনা-1 ব্লকে ব্লক কমিটি নিয়ে কারও কারও হতাশা রয়েছে । প্রথমে কেউ কেউ চান্স পায়নি তা হতে পারে, তবে আমি তাঁদেরকে বলব অনুরোধ করব হতাশার কোনও জায়গা নেই ।’’
এই ঘটনায় শাসকদলকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি । এই বিষয়ে বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক সুদীপ কুশারী বলেন, "যাঁরা চুরি করতে পারবে, তাঁদেরই তৃণমূলে জায়গা হবে ৷ ওদের পুরনো নেতাদের দলে স্থান নেই এখন । আমরাও তো দেখছি যারা দু’দিন দলে এসেছে, দল কী জানল না তারাও এখন ওদের জেলা কমিটিতে জায়গা পাচ্ছে, কারণ তারা চুরি করতে পারবে । তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল নিয়ে আমাদের কোনও মাথাব্যথা নেই ৷ মানুষ এখন ওদের আর চাইছে না ৷ ডবল ইঞ্জিনের সরকার চাইছে মানুষ ।’’
আরও পড়ুন: 'শুধু ভোটের সময় আসেন, আর কোনও সমস্যা দেখেন না !' মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষোভে কেশপুরে পথ অবরোধে তৃণমূল