কলকাতা, 1 ডিসেম্বর: তৃণমূল যুব কংগ্রেসের (Nationalist Trinamool Youth Congress) নয়া রাজ্য কমিটি (State Committee) থেকে বাদ পড়ার পর 24 ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই দলে নতুন পদ তৈরি করে দায়িত্ব দেওয়া হল দেবাংশু ভট্টাচার্যকে (Debangshu Bhattacharya) ৷ পঞ্চায়েত ভোটের মুখে তিনি পাচ্ছেন দলের আইটি সেল এবং সোশাল মিডিয়া পরিচালনার দায়িত্ব ! প্রশ্ন উঠছে, তবে কি বিতর্কে জল ঢালতেই করা হল এমন পদক্ষেপ ? নাকি পুরোটাই আসলে পূর্বপরিকল্পিত ?
বুধবার তৃণমূল যুব কংগ্রেসের নতুন রাজ্য কমিটি গঠন করা হয় ৷ আর তারপর থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে শুরু হয় নয়া জল্পনা ৷ নানা মহলে প্রশ্ন ওঠে, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের থেকে কি দূরত্ব বাড়ছে তৃণমূলের যুব নেতা দেবাংশুর ? কারণ, তিনি দলের তরুণ তুর্কীদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় ব্যক্তি ৷ যুব সমাজে তাঁর ভালোই জনপ্রিয়তা রয়েছে ৷ বিশেষ করে 'খেলা হবে'র পর থেকেই দেবাংশু তরুণদের একাংশের অত্যন্ত পছন্দের ৷ অথচ, এহেন দেবাংশুকেই কিনা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের নয়া রাজ্য কমিটি থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয় ! উলটে জায়গা দেওয়া হয় দলের একাধিক প্রবীণ নেতা-নেত্রীর ছেলেমেয়েদের ৷
আরও পড়ুন: যুব তৃণমূলের রাজ্য কমিটি থেকে বাদ দেবাংশু, তালিকায় একাধিক মন্ত্রীর পুত্র-কন্যার নাম
এরপর অনেকেই দাবি করেন, তৃণমূলের অন্দরেও যে 'নেপোটিজম' ঘাঁটি গেড়েছে, এই ঘটনাই তার প্রমাণ ৷ অন্যদিকে, দেবাংশু একটি ফেসবুক স্ট্য়াটাস শেয়ার করেন ৷ তিনি যে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় যুব শাখার সঙ্গে আর যুক্ত নন, সংশ্লিষ্ট পোস্টে সেটাই স্পষ্ট করা হয় ৷ পরে অবশ্য সেই পোস্ট মুছে দেন দেবাংশু ৷ পাশাপাশি, তিনি এও জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে ফেসবুক লাইভ করবেন ৷ এদিনের সেই লাইভে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন দেবাংশু ৷ বলেন, "2020 সালে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৈরি সংগঠনে জায়গা পেয়েছিলাম ৷ ছাত্র রাজনীতি না-করা সত্ত্বেও যুব কমিটিতে আমার নাম ছিল ৷ তারপর থেকে দলের সব কাজ আমি করেছি ৷ দল যা দায়িত্ব দিয়েছে, তা পালন করেছি ৷ দলের থেকেও বহু সাহায্য পেয়েছি ৷ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় ও সায়নী ঘোষ, দু'জনের কাছ থেকেই অনেক কিছু শিখেছি ৷ তবে, এবার আমাকে দল কীভাবে কাজে লাগাবে, সেটা দলই বুঝবে ৷ যেভাবেই কাজে লাগাক, আমি প্রস্তুত ৷ আমি আর আগের পদে বহাল নেই, সেটা সকলকে জানানোর জন্যই 'জব লেফ্ট' সম্পর্কিত পোস্টটা করেছিলাম ৷"
প্রসঙ্গত, দেবাংশু তৃণমূলের যুব সংগঠনের নয়া রাজ্য কমিটি থেকে বাদ পড়লেও সায়নী ঘোষ কিন্তু রাজ্য সভানেত্রীর পদে বহাল রয়েছেন ৷ সূত্রের দাবি, দলনেত্রীর ইচ্ছা অনুসারেই নাকি এই সিদ্ধান্ত ৷ স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছিল, তাহলে কি দেবাংশুর বদলে ক্রমে সায়নীই তৃণমূল সুপ্রিমোর বেশি কাছের হয়ে উঠেছেন ?
এই জল্পনার মাঝেই বৃহস্পতিবার তৃণমূলের তরফে প্রেস বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, এবার থেকে দলের আইটি সেল তথা সোশাল মিডিয়া সংক্রান্ত সমস্ত কিছুর দায়দায়িত্ব সামলাবেন দেবাংশু ৷ এমনকী, এর জন্য নতুন পদও তৈরি করা হয়েছে ! বিতর্ক চাপা দিতেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে, নাকি এই সিদ্ধান্ত পূর্বপরিকল্পিত, সে তো অন্য আলোচনা ৷ তবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এই ঘটনা দেবাংশুর কাছে নিঃসন্দেহে বড় চ্য়ালেঞ্জ ৷
একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে অনেকেই দাবি করেছিলেন, সেবার নাকি রাজ্য়ে পালাবদলে পালাবদল নিশ্চিত ৷ সেই সময় প্রবল গেরুয়া হাওয়াকে ফের ঘাসফুল বনে টানতে তৃণমূলের বড় হাতিয়ার হয়েছিল 'খেলা হবে' স্লোগান ৷ পশ্চিমী ব়্য়াপের ধাঁচে দেবাংশুর এই গান এখনও সমান জনপ্রিয় ৷ এবার দলের তরফে আইটি সেল ও সোশাল মিডিয়া পরিচালনার প্রথম দায়িত্ব পেয়ে দেবাংশু অতীতের সেই সাফল্যের পুনরাবৃত্তি করতে পারেন কিনা, সেটাই দেখার ৷ বিশেষ করে এই মুহূর্তে তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির আইটি সেল অত্যন্ত পোক্ত ৷ দেবাংশু তার মোকাবিলা কীভাবে করেন, সেই বিষয়েও যথেষ্ট আগ্রহ থাকবে রাজনৈতিক মহলের ৷