কলকাতা, 29 নভেম্বর: বেনজির ৷ বুধবার বিকেলে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় যে পরিস্থিতি তৈরি হল, সেটাকে একটি শব্দে এভাবেই ব্যাখ্যা করা যায় ৷
কারণ, একদিকে যখন বিধানসভা চত্বরে আম্বেদকর মূর্তির পাদদেশে ধরনা দিচ্ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়করা, সেই সময় কিছুটা দূর থেকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘চোর, চোর’ স্লোগান তুলল বিজেপি ৷ পালটা বিজেপির বিরুদ্ধে ‘চোর চোর’ স্লোগান তোলে তৃণমূলও ৷ ফলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি ৷ এমন অবস্থ হয় যে বিধানসভার ভিতরে পুলিশ পৌঁছে যায় ৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরো পরিস্থিতির দায় বিজেপির ঘাড়ে চাপিয়েছেন বিধানসভার অধ্যক্ষকে এই নিয়ে পদক্ষেপ করার অনুরোধ করেছেন ৷
এ দিন বিকেল 3টে থেকে 5টা পর্যন্ত আম্বেদকর মূর্তির পাদদেশে ধরনা দেয় তৃণমূল ৷ সেখানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সেখানে অন্যতম প্রধান স্লোগান ছিল, ‘অমিত চোর, মোদি চোর, বিজেপির সবাই চোর’ । এর মাঝেই বিধানসভায় ঢোকেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপি বিধায়করা । বিধানসভায় ঢুকে পাল্টা ‘চোর, চোর’ স্লোগান দিতে থাকেন শুভেন্দু অধিকারী । মুখ্যমন্ত্রীর নাম করেই বার বার ‘মমতা চোর, মমতা চোর’ স্লোগান দিতে থাকেন বিরোধী দলনেতা ।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পালটা শুভেন্দু-সহ বিজেপি নেতাদের নাম করে ‘চোর, চোর’ স্লোগান তোলেন তৃণমূল বিধায়করা ৷ বিধানসভার মধ্যেই তুমুল উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয় । কার্যত মুখোমুখি বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তৃণমূল এবং বিজেপি বিধায়করা । পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় লালবাজারের বাহিনী ।
এই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের বিক্ষোভ চলছিল অনুমতি নিয়ে, ওদেরটা বেআইনি । একটা দাঙ্গাবাজের দল, সৌজন্য, ভদ্রতা কিছু জানে না । যাঁরা গো-হারা হেরেছে, পাত্তা পায় না, তারা এসেছে । আমাকে অমিত শাহ, নরেন্দ্র মোদি দেখিয়ে লাভ নেই । তৃণমূলের টাকায় লুঠ, ডাকাতি করেছে যাঁরা সেই গদ্দারদের আমারা কেউ ভয় পায় না ।’’
এরপরই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিজেপি বিধায়করা যে কাণ্ড ঘটিয়েছেন, তার পালটা অধ্যক্ষের দ্বারস্থ হবে তৃণমূল কংগ্রেস ।’’ তিনি জানিয়ে দেন, শাসক দলের প্রতিনিধিরা বিষয়টি নিয়ে অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ জানাবেন ৷ মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘বিধানসভা অধ্যক্ষের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে । আমি অধ্যক্ষকে অনুরোধ করব, আপনি টেলিভিশন চ্যানেলের ফুটেজ দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন ।’’
একইভাবে এই ঘটনার কড়া নিন্দা করেছেন রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় । তিনি বলেন, ‘‘আমি দীর্ঘদিন ধরে বিধানসভার সদস্য আমার পরিষদীয় জীবনে এই ধরনের ঘটনা দেখিনি । ওদের প্রতিবাদের ইচ্ছা থাকলে আমরা যেখানে কর্মসূচি করছি, সেখান থেকে দূরে গিয়ে প্রতিবাদ করতে পারত ৷ চাইলে ধরনা অবস্থানও করতে পারত । কিন্তু এভাবে রাজনৈতিক সৌজন্যের জলাঞ্জলি দিয়ে আচরণ নিন্দার ভাষা নেই । আমি আজই অধ্যক্ষর কাছে অভিযোগ জানাচ্ছি ৷ তাঁকে বলব, বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে । পরবর্তী পদক্ষেপ যা নেওয়ার তিনিই নেবেন । সবটাই বিজেপির রাজনৈতিক দৈনতার প্রমাণ ।’’
আরও পড়ুন: