ETV Bharat / state

TMC-BJP Dalit Politics: শাসক-বিরোধীর দলিত প্রেম সুপরিকল্পিত ভোট অংক, মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা

শাসক ও বিরোধীদের দলিত প্রেম (TMC-BJP Dalit Politics) সুপরিকল্পিত ভোট অংক (Panchayat Elections) বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা ৷ আদিবাসী দিবসে দলিতদের মন জয় করার চেষ্টা চালিয়েছে তৃণমূল ও বিজেপি ৷

TMC and BJP Dalit love is well-planned to increase vote count, say experts
শাসক-বিরোধীর দলিত প্রেম সুপরিকল্পিত ভোট অংক, মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা
author img

By

Published : Nov 16, 2022, 12:45 PM IST

Updated : Nov 16, 2022, 4:49 PM IST

কলকাতা, 16 নভেম্বর: মঙ্গলবার ছিল বিশ্ব আদিবাসী দিবস । বিরসা মুন্ডার জন্মদিন আদিবাসী দিবস হিসেবে পালিত হয় গোটা দেশে । এই দিনটিতে নিজেদের ভোটব্যাংক নিশ্চিত করতে ময়দানে নেমেছে শাসক বিরোধী উভয় পক্ষই । আর সেই কারণেই একই দিনে ঝাড়গ্রামে দেখা গিয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে । একজন যখন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে আদিবাসীদের আদর্শ বিরসা মুন্ডার মূর্তি উদ্বোধনের জন্য সমস্ত কাজ ছেড়ে ঝাড়গ্রামে ছুটে গিয়েছেন, অন্যজন তখন আদিবাসী পরিবারে মধ্যাহ্ন ভোজন করছেন । খুব স্বাভাবিকভাবেই বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না রাজ্যের শাসক এবং বিরোধী উভয়ের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ এই আদিবাসী ভোট (TMC-BJP Dalit Politics)। আর এই জায়গায় দাঁড়িয়েই প্রাসঙ্গিক হয়ে দেখা দিয়েছে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন (Panchayat Elections)।

সাম্প্রতিক রাজ্য রাজনীতির গতি প্রকৃতি যেদিকে যাচ্ছে, যেভাবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রপতির উদ্দেশে কুবাক্য ব্যবহার নিয়ে বিজেপি তৎপর হয়েছে, তাতে এটা তো নিশ্চিত যে বিজেপির এই অবস্থানের পেছনে রাজনৈতিক অংক রয়েছে । কিন্তু শাসক দল তৃণমূলের ক্ষেত্রেও বলতে হয় প্রতিটি পদক্ষেপ রাজনীতির অংক কষেই নেওয়া হয়েছে । আর এখানেই প্রশ্ন, রাজ্যে কেন দলিত রাজনীতি এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে ! কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা !

বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক অমল মুখোপাধ্যায় মনে করছেন, শাসক এবং বিরোধী উভয়ের এই অবস্থান তাদের ব্যক্তিগত বাধ্যবাধকতা থেকেই । তিনি বলেন, এই মুহূর্তে রাজ্যে যেমন শাসকের ভূমিকায় রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস, একইভাবে কেন্দ্রে শাসকের ভূমিকায় রয়েছে বিজেপি । উভয়ের ক্ষেত্রেই দুই সরকার মানুষকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বহু ক্ষেত্রে তা পূরণে ব্যর্থ । আর সে কারণেই এই ধরনের ইস্যুগুলি বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে বাংলার রাজনীতিতে । তিনি আরও বলেন, তৃণমূলের ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা আরও বেশি । প্রথমত বর্তমান রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে যেভাবে একের পর এক সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাতে কিছুটা হলেও চাপে রাজ্যের শাসক দল । তার উপর এতদিন যে সংখ্যালঘু মানুষজনের সমর্থন তৃণমূল কংগ্রেস পেত, সাম্প্রতিক সময়ে সেই জায়গা কিছুটা হলেও দুর্বল হয়েছে । কাজেই তাদের এসসি, এসটি, ওবিসি, মতুয়া, রাজবংশীদের বাড়তি গুরুত্ব দিতে হচ্ছে ।

আরও পড়ুন: নেতাদের জন্য দেশ নয়, মানুষের জন্য দেশ, কেন্দ্রকে আক্রমণ মুখ্যমন্ত্রীর

রাজনৈতিক বিশ্লেষক তথা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক রাজু রায় বলেন, 11 সালের তৃণমূল কংগ্রেস এবং বর্তমান তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে অনেক তফাৎ আছে । বিগত 10-12 বছরের শাসনে শাসক দলের বিরুদ্ধে যে সরকার বিরোধী হাওয়া তৈরি হয়েছে তা ধরে রাখার জন্য নতুন করে এমন অংশকে তাদের দিকে টেনে আনতে হবে, যাদের ভোট তারা পাচ্ছে না । 19 এর লোকসভার নিরিখে দেখলে উত্তরবঙ্গ এবং জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ অংশে এসসি, এসটি তথা দলিত মানুষজনের সমর্থন গেরুয়া শিবিরের দিকে গিয়েছিল । যেহেতু এই রাজ্যে তারাই মূল প্রতিপক্ষ তাই বিজেপিকে আটকাতে হলে দলিত ভোটব্যাংককে নিজেদের দিকে টানা জরুরি । এতে একদিকে যেমন বিরোধীদের দুর্বল করা সম্ভব হবে, অন্যদিকে নিজেদের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন জোগাড় করা সম্ভব হবে । এ ক্ষেত্রে দলিত ভোটকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য বাস্তবে এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতোই ।

শাসক-বিরোধীর দলিত প্রেম সুপরিকল্পিত ভোট অংক, মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের এই বক্তব্যের নিরিখে এ বার মিলিয়ে দেখা যাক ভোট শতাংশ বা আসন সংখ্যা নিরিখে এই মুহূর্তে দলিত ভোটের সমীকরণ । এর থেকেই স্পষ্ট বোঝা যাবে রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলির ভোট বাক্সে দলিত রাজনীতির প্রভাব কতটা ! শাসক এবং বিরোধী দলিত প্রেম কি একদমই কাকতালীয় ! 2021 সালের হিসাব অনুযায়ী রাজ্যে জনজাতি ভোটারের সংখ্যা কমবেশি 30 মিলিয়ন । এসসি-এসটি ও ওবিসি মিলে দলিত ভোটারের সংখ্যা প্রায় 40 মিলিয়নের কাছাকাছি । দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, দক্ষিণ দিনাজপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া মিলিয়ে রাজ্যের 7 জেলার বিধানসভার নিরিখে এসসি সংরক্ষিত আসন 68 । এবং এসটি সংরক্ষিত আসন 16 টি । আর লোকসভার ভোটের ভিত্তিতে বিচার করলে এই 84 আসনের মধ্যে গত 2019 সালে বিজেপি জয় পেয়েছিল 69 আসনে । বিধানসভা নির্বাচনের সময় তা কমে 40-এ নেমে যায় । উত্তর এবং দক্ষিণবঙ্গ মিলে এক ধাক্কায় বিজেপির আসন কমে হয় 29টি । এই অবস্থায় বিজেপি ভালোভাবেই বুঝেছে যে তাদের লোকসভায় ভালো ফল করতে গেলে এই 84 আসনের সিংহভাগই দখলে রাখা জরুরি । রাজনৈতিক মহল মনে করছে, বিজেপির দলিত প্রেম আসলে সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক অংক । অন্যদিকে, তৃণমূলকে লোকসভায় আবার ভালো ফল করতে গেলে এই চুরাশি আসনেই তাদের ভালো ফল করতে হবে । আর পঞ্চায়েত রাজ্যের শাসকের জন্য সেমিফাইনাল । এ কারণেই বিশ্ব আদিবাসী দিবসে শাসক ও বিরোধীর এত লড়াই । রাজনৈতিক মহলের মতে সবটাই ভোট অংক । সবটাই প্রতিপক্ষকে জমি না ছাড়ার লড়াই ।

কলকাতা, 16 নভেম্বর: মঙ্গলবার ছিল বিশ্ব আদিবাসী দিবস । বিরসা মুন্ডার জন্মদিন আদিবাসী দিবস হিসেবে পালিত হয় গোটা দেশে । এই দিনটিতে নিজেদের ভোটব্যাংক নিশ্চিত করতে ময়দানে নেমেছে শাসক বিরোধী উভয় পক্ষই । আর সেই কারণেই একই দিনে ঝাড়গ্রামে দেখা গিয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে । একজন যখন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে আদিবাসীদের আদর্শ বিরসা মুন্ডার মূর্তি উদ্বোধনের জন্য সমস্ত কাজ ছেড়ে ঝাড়গ্রামে ছুটে গিয়েছেন, অন্যজন তখন আদিবাসী পরিবারে মধ্যাহ্ন ভোজন করছেন । খুব স্বাভাবিকভাবেই বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না রাজ্যের শাসক এবং বিরোধী উভয়ের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ এই আদিবাসী ভোট (TMC-BJP Dalit Politics)। আর এই জায়গায় দাঁড়িয়েই প্রাসঙ্গিক হয়ে দেখা দিয়েছে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন (Panchayat Elections)।

সাম্প্রতিক রাজ্য রাজনীতির গতি প্রকৃতি যেদিকে যাচ্ছে, যেভাবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রপতির উদ্দেশে কুবাক্য ব্যবহার নিয়ে বিজেপি তৎপর হয়েছে, তাতে এটা তো নিশ্চিত যে বিজেপির এই অবস্থানের পেছনে রাজনৈতিক অংক রয়েছে । কিন্তু শাসক দল তৃণমূলের ক্ষেত্রেও বলতে হয় প্রতিটি পদক্ষেপ রাজনীতির অংক কষেই নেওয়া হয়েছে । আর এখানেই প্রশ্ন, রাজ্যে কেন দলিত রাজনীতি এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে ! কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা !

বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক অমল মুখোপাধ্যায় মনে করছেন, শাসক এবং বিরোধী উভয়ের এই অবস্থান তাদের ব্যক্তিগত বাধ্যবাধকতা থেকেই । তিনি বলেন, এই মুহূর্তে রাজ্যে যেমন শাসকের ভূমিকায় রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস, একইভাবে কেন্দ্রে শাসকের ভূমিকায় রয়েছে বিজেপি । উভয়ের ক্ষেত্রেই দুই সরকার মানুষকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বহু ক্ষেত্রে তা পূরণে ব্যর্থ । আর সে কারণেই এই ধরনের ইস্যুগুলি বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে বাংলার রাজনীতিতে । তিনি আরও বলেন, তৃণমূলের ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা আরও বেশি । প্রথমত বর্তমান রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে যেভাবে একের পর এক সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাতে কিছুটা হলেও চাপে রাজ্যের শাসক দল । তার উপর এতদিন যে সংখ্যালঘু মানুষজনের সমর্থন তৃণমূল কংগ্রেস পেত, সাম্প্রতিক সময়ে সেই জায়গা কিছুটা হলেও দুর্বল হয়েছে । কাজেই তাদের এসসি, এসটি, ওবিসি, মতুয়া, রাজবংশীদের বাড়তি গুরুত্ব দিতে হচ্ছে ।

আরও পড়ুন: নেতাদের জন্য দেশ নয়, মানুষের জন্য দেশ, কেন্দ্রকে আক্রমণ মুখ্যমন্ত্রীর

রাজনৈতিক বিশ্লেষক তথা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক রাজু রায় বলেন, 11 সালের তৃণমূল কংগ্রেস এবং বর্তমান তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে অনেক তফাৎ আছে । বিগত 10-12 বছরের শাসনে শাসক দলের বিরুদ্ধে যে সরকার বিরোধী হাওয়া তৈরি হয়েছে তা ধরে রাখার জন্য নতুন করে এমন অংশকে তাদের দিকে টেনে আনতে হবে, যাদের ভোট তারা পাচ্ছে না । 19 এর লোকসভার নিরিখে দেখলে উত্তরবঙ্গ এবং জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ অংশে এসসি, এসটি তথা দলিত মানুষজনের সমর্থন গেরুয়া শিবিরের দিকে গিয়েছিল । যেহেতু এই রাজ্যে তারাই মূল প্রতিপক্ষ তাই বিজেপিকে আটকাতে হলে দলিত ভোটব্যাংককে নিজেদের দিকে টানা জরুরি । এতে একদিকে যেমন বিরোধীদের দুর্বল করা সম্ভব হবে, অন্যদিকে নিজেদের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন জোগাড় করা সম্ভব হবে । এ ক্ষেত্রে দলিত ভোটকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য বাস্তবে এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতোই ।

শাসক-বিরোধীর দলিত প্রেম সুপরিকল্পিত ভোট অংক, মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের এই বক্তব্যের নিরিখে এ বার মিলিয়ে দেখা যাক ভোট শতাংশ বা আসন সংখ্যা নিরিখে এই মুহূর্তে দলিত ভোটের সমীকরণ । এর থেকেই স্পষ্ট বোঝা যাবে রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলির ভোট বাক্সে দলিত রাজনীতির প্রভাব কতটা ! শাসক এবং বিরোধী দলিত প্রেম কি একদমই কাকতালীয় ! 2021 সালের হিসাব অনুযায়ী রাজ্যে জনজাতি ভোটারের সংখ্যা কমবেশি 30 মিলিয়ন । এসসি-এসটি ও ওবিসি মিলে দলিত ভোটারের সংখ্যা প্রায় 40 মিলিয়নের কাছাকাছি । দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, দক্ষিণ দিনাজপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া মিলিয়ে রাজ্যের 7 জেলার বিধানসভার নিরিখে এসসি সংরক্ষিত আসন 68 । এবং এসটি সংরক্ষিত আসন 16 টি । আর লোকসভার ভোটের ভিত্তিতে বিচার করলে এই 84 আসনের মধ্যে গত 2019 সালে বিজেপি জয় পেয়েছিল 69 আসনে । বিধানসভা নির্বাচনের সময় তা কমে 40-এ নেমে যায় । উত্তর এবং দক্ষিণবঙ্গ মিলে এক ধাক্কায় বিজেপির আসন কমে হয় 29টি । এই অবস্থায় বিজেপি ভালোভাবেই বুঝেছে যে তাদের লোকসভায় ভালো ফল করতে গেলে এই 84 আসনের সিংহভাগই দখলে রাখা জরুরি । রাজনৈতিক মহল মনে করছে, বিজেপির দলিত প্রেম আসলে সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক অংক । অন্যদিকে, তৃণমূলকে লোকসভায় আবার ভালো ফল করতে গেলে এই চুরাশি আসনেই তাদের ভালো ফল করতে হবে । আর পঞ্চায়েত রাজ্যের শাসকের জন্য সেমিফাইনাল । এ কারণেই বিশ্ব আদিবাসী দিবসে শাসক ও বিরোধীর এত লড়াই । রাজনৈতিক মহলের মতে সবটাই ভোট অংক । সবটাই প্রতিপক্ষকে জমি না ছাড়ার লড়াই ।

Last Updated : Nov 16, 2022, 4:49 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.