বর্ধমান, 14 জুন: শুধুমাত্র মারধর করেই নয়, বিরোধীরা যাতে মনোনয়ন জমা দিতে না-পারে তার জন্য প্রশাসনকে ব্যবহার করার পন্থাও নিয়েছে শাসক দল। এমনটাই অভিযোগ তুলছে বিজেপি থেকে সিপিএম সকলেই। তাদের অভিযোগ মনোনয়ন জমা দিতে গেলে নানা অছিলায় তাদের চালান বা রসিদ দিতে দেরি করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন টেবিলে কর্মী নেই বলে অজুহাত দিয়ে ফিরিয়েও দেওয়া হচ্ছে। ফলে মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে বিরোধীদের সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। অথচ তিনটে বেজে গেলে আর মনোনয়ন জমা করা যাচ্ছে না।
শাসকদলের সঙ্গে যোগসাজশেই প্রশাসন এইভাবে বিরোধীদের বাধা দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ। শাসকদলের পক্ষ থেকে অভিযোগ অস্বীকার করে অবশ্য বলা হয়েছে বিরোধীরা পঞ্চায়েতের জন্য প্রার্থী না-পেয়ে মিথ্যে অভিযোগ তুলছে। অন্যদিকে, প্রশাসনের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, এই ধরণের কোনও লিখিত অভিযোগ কোনও রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে করা হয়নি। কোনও রাজনৈতিক দলকেই মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়নি বলেও দাবি করছে প্রশাসন। সিপিএমের অভিযোগ, একদিকে মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে শাসকদলের হামলার মুখে পড়ছেন তাদের দলীয় নেতা-কর্মীরা, অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে বসে আছে। সারা রাজ্যজুড়ে চিত্রটা একই। ফলে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়সীমা যদি না-বাড়ানো হয়, তবে আগামিকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবারের মধ্যে কীভাবে সকল প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দেবে তা নিয়ে সংশয় বাড়ছে।
সিপিএমের মতে, প্রতি আসনে যদি 10 জন করে প্রার্থী হয়, তবে মাত্র আট ঘণ্টার মধ্যে কীভাবে জেলার এত জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেবে ? এরপর আবার ওই আট ঘণ্টার মধ্যে না না অছিলায় প্রশাসনের কর্মীরা সময় নষ্ট করে দিচ্ছে। অথচ তিনটে বেজে গেলে আর মনোনয়ন জমা সম্ভব নয়। পূর্ব বর্ধমানের 215 টি গ্রাম পঞ্চায়েত, 23 টি পঞ্চায়েত সমিতি আছে। গ্রাম পঞ্চায়েতে তিন হাজার 807টি আসনে ভোট গ্রহণ করা হবে। পঞ্চায়েতে বুথের সংখ্যা চার হাজার দশটি। পঞ্চায়েত সমিতির আসন সংখ্যা 640 টি, জেলা পরিষদে আসন সংখ্যা 66 টি। তিন হাজার 933 টি ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে মূল ভোট গ্রহণ কেন্দ্র তিন হাজার 869 টি এবং অতিরিক্ত ভোট কেন্দ্র আছে 64 টি। জেলায় মোট ভোটারের সংখ্যা 35 লক্ষ 66 হাজার 368 জন ৷
গ্রাম পঞ্চায়েতে এসসি, এসটি'র জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা 1954, পঞ্চায়েত সমিতির জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা 314, জেলা পরিষদে সংরক্ষিত আসন সংখ্যা 33 টি। গ্রাম পঞ্চায়েতে মহিলাদের জন্য গ্রাম পঞ্চায়েতে সংরক্ষিত আছে 1030 টি আসন, পঞ্চায়েত সমিতির জন্য সংরক্ষিত 163 টি ও জেলা পরিষদের জন্য 17 টি আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আছে। বিজেপি জেলা সম্পাদক মানিক রায় অভিযোগ করে বলেন, "বিভিন্নভাবে শাসকদল আমাদের মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দিয়েছে। কখনও মারধর করে ফর্ম কেড়ে নিয়েছে আবার কখনও জেলা প্রশাসনের কর্মীদের কাজে লাগিয়ে আমাদের মনোনয়ন জমা দিতে ঝামেলায় ফেলেছে।" তিনি আরও বলেন, "আমরা রায়না এক ব্লকের বিডিও অফিসে মনোনয়ন জমা দিতে যাই। আমাদের বিজেপি প্রার্থীদের বলা হয় সাড়ে এগারোটা নাগাদ আসার জন্য। সেইমতো আবার যাই। তখন বলা হয় ফর্ম আসেনি একটু অপেক্ষা করতে। বেলা একটা নাগাদও যখন যাই তখন দেখি দু-একটা টেবিলে কর্মীরা এসেছে। আমরা রসিদ কাটতে গেলে বলা হয় যিনি রসিদ কাটবেন তিনি আসেননি। এইভাবে যখন ফর্ম ফিলাপ শুরু করি তখন বিডিও অফিসের ভেতরে ঢুকে তৃণমূল কংগ্রেসের গুন্ডারা আমাদের মারধর করে ফর্ম কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে দেয়। পরে পুলিশের সাহায্য নিয়ে ফের যাই ফর্ম তুলতে। আবার দেখি টেবিলে লোক নেই। এদিকে তিনটের পর থেকে আর মনোনয়ন জমা করা যাবে না। এইভাবে প্রশাসনকে ব্যবহার করে শাসক দল মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দিচ্ছে।"
আরও পড়ুন: মনোনয়নের দাবিতে কমিশনে বিজেপির ধরনা, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ক্যানিংয়ে গুলিবিদ্ধ দুই
সিপিএমের এরিয়া কমিটির সদস্য সাগর মল্লিক বলেন, "প্রথম দিনে সোমবারে আমরা মনোনয়ন জমা দিতে গেলে তৃণমূল কংগ্রেসের গুন্ডাবাহিনী আমাদের উপরে হামলা চালায়। তারা লাঠি রড ইট পাথর ছুঁড়ে আমাদের কর্মীদের জখম করে। কিন্তু তারপরেও মনোবল না হারিয়ে আমাদের কর্মীরা মঙ্গলবার মনোনয়ন জমা করতে যায়। সেখানে বর্ধমান উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক নিশীথ মালিক দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি সোমবারের ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন। তিনি আশ্বাস দেন মনোনয়ন জমা দিতে সাহায্য করবেন। কিন্তু দেখা যায় খুব ধীর গতিতে মনোনয়ন জমা দেওয়ার কাজ চলছে। এমনিতেই মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়সীমা কম। এরপর যদি এইভাবে ধীরগতিতে কাজ চলে তাহলে সকলে মনোনয়ন জমা দেবো কীভাবে।" বিধায়কের নির্দেশেই এইভাবে ধীরগতিতে কাজ চলছে না তো প্রশ্ন তোলেন তিনি।বর্ধমান উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক নিশীথ মালিক বলেন, "সোমবার আমাদের কিছু অতি উৎসাহী নেতৃত্বের জন্য একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছিল। সেই জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। এরপর আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে মনোনয়ন জমা দেওয়া করিয়েছি। কাউকে কোনও সমস্যায় পড়তে হয়নি। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মনোনয়ন জমা করতে গিয়ে কোনও রাজনৈতিক দলকেই কোনও সমস্যায় পড়তে হয়নি। কেউ কোনও লিখিত অভিযোগ জমা দেয়নি।"