কলকাতা, 2 এপ্রিল : লকডাউন চলছে । তাই মায়ের কড়া নির্দেশ, বাড়ি থেকে বেরোনো চলবে না । সেই নির্দেশ মেনে লকডাউনের পর থেকে বাড়ির জানালাই এখন ছোটো অনুরাগের ভরসা । এরকমই একদিন জানলার সামনে বসে বাইরে উঁকিঝুকি মারছে । হঠাৎ দেখে, পাড়ার কাকু-দাদারা একে একে দুস্থদের হাতে চাল-আলু তুলে দিচ্ছে । তখনই বিষয়টি নিয়ে মাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করে ।
মা তাকে পুরো বিষয়টি জানান । বলেন, লকডাউনের জেরে অনেকেরই খাবার জুটছে না । তাই তাঁদের এই চাল-আলু তুলে দেওয়া হচ্ছে । মায়ের মুখে এই কথা শুনেই মনে মনে স্থির করে নেয় যে, সেও পাড়ার দুস্থ শিশুদের সাহায্য করবে । কিন্তু তা অনুরাগের একার পক্ষে সম্ভব ছিল না । কারণ সে তো নিজেই ছোটো । শিয়ালদার গোলাপ শাস্ত্রী লেনের এই অনুরাগ রায় হিন্দু স্কুলের ক্লাস সেভেনের ছাত্র । তাহলে উপায় ?
অনুরাগ সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে হাজির হয় তার পাড়ার দুই বন্ধুর কাছে । একজন অভিষেক কুমার । ক্লাস নাইনে পড়ে । আরেকজন সাহানি । সে টেটিয়া হিন্দি স্কুলের ক্লাস সেভেনের ছাত্র । অনুরাগ এই দু'জনকে পুরো বিষয়টা বলে । পাড়ার দুস্থ শিশুদের সাহায্য করার অনুরাগের এই প্রস্তাবে রাজি হয় অভিষেক ও সাহানিও । তিন মূর্তিতে মিলে স্থির করে হাতখরচের জমানো টাকা দিয়ে সাহায্য করবে তারা । তিনজনের জমানো টাকায় যে অর্থ জমা হয় তা অত্যন্তই কম । এরপর তারা পাড়ার কাকুদের কাছে নিজেদের আবদার নিয়ে যায় । তাদের আবদার পূরণের জন্য অনেকেই আর্থিক সাহায্য করেন । এইভাবে মোট চার হাজার টাকা জোগাড় করে এই তিন মূর্তি ।
এই চার হাজার টাকা কীভাবে খরচ করব তার উপায় জানতে গেলে অনুরাগের মা বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর আপৎকালীন তহবিলে দান করতে । কিন্তু অনুরাগ, অভিষেক ও সাহানির ইচ্ছে ছিল, স্থানীয় দুস্থ শিশুদের সাহায্য করার । তাই তিনজন অনুরাগের মায়ের হাত ধরে পৌঁছায় স্থানীয় তৃণমূল নেতা সজল ঘোষের কাছে । তাঁর নেতৃত্বেই এর আগে পাড়ায় দুস্থদের চাল-আলু দেওয়া হয়েছিল । বয়সে ছোটো হওয়ায় প্রথমে তাদের কথায় গুরুত্ব দেননি সজল । পরে তাঁর হাতে যখন তিনজন চার হাজার টাকা তুলে দেয় তখন একপ্রকার অবাক হন । আসলে ইচ্ছে থাকলে উপায় হয় । বয়সটা কোনও বাধাই নয় ।
অনুরাগ, অভিষেক ও সাহানির সঙ্গে আরও 8 হাজার টাকা দেন সজল । মোট 12 হাজার টাকায় দুস্থ শিশুদের জন্য খাবার কেনা হয় । আজ শিয়ালদা ও লেবুতলা এলাকার দুস্থ শিশুদের হাতে সেই খাবার তুলে দেওয়া হবে ।