কলকাতা, 21 ডিসেম্বর: তিনদিনের মুদ্রা উৎসব বসতে চলেছে কলকাতায় । এবারের থিম ‘মহাবীরের নির্বাণের 2550 বছর’ ৷ নিউমিসম্যাটিক সোসাইটি অফ ক্যালকাটার উদ্যোগে আগামী 22 থেকে 24 ডিসেম্বর পর্যন্ত এই উৎসব চলবে বালিগঞ্জের হালদিরাম ব্যাংকওয়েট হলে । এই সংস্থার সচিব রবিশঙ্কর শর্মা বলেন, "জ্ঞানমুনি জিগনেশ মহারাজ এবারের উৎসবের সূচনা করবেন । সারা ভারত থেকে বিভিন্ন অতিথি আসবেন, যাঁরা মুদ্রা ভালোবসেন, মুদ্রা নিয়ে চর্চা করেন । ’’
তিনি আরও বলেন, "ভারতের প্রথম থেকে 2023 সাল পর্যন্ত যত মুদ্রা রয়েছে, প্রত্যেকটির অরজিনাল আমাদের উৎসবে পাওয়া যাবে । মনোমুগ্ধকর তথ্য পরিবেশনের মাধ্যমে ঐতিহাসিক তাৎপর্য এবং সাংস্কৃতিক বিবর্তনের গল্প তুলে ধরা হবে । কারণ, আমরা প্রতিটি মুদ্রার উত্তরাধিকার ও ইতিহাস তুলে ধরব । এটাই আমাদের সংগঠনের 25তম (রজতজয়ন্তী) বর্ষের অন্যতম আকর্ষণ ।"
এই উৎসবে থাকছে রাজা শশাঙ্কের প্রচলন করা মুদ্রাও ৷ ইতিহাস বলছে, রাজা শশাঙ্ক বা শশাঙ্কদেব ছিলেন বাংলা অঞ্চলের একীভূত রাষ্ট্রের প্রথম স্বাধীন রাজা । রাজা শশাঙ্ককে গৌড় রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিবেচনা করা হয় । রাজা শশাঙ্কও বাংলার ইতিহাসের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচিত । সেই রাজা শশাঙ্কর 600 সিই ও 636 সিই-র মধ্যে সোনার দিনার চালু করেছিলেন । যার ওজন প্রায় 8.94 গ্রাম । এই মুদ্রার একদিকে লেখা আছে ‘শিব নিম্বতে’ ৷ সেখানে শিব উপবিষ্ট ডানদিকে মুখ করে শুয়ে থাকা ষাঁড়ের ওপর হেলান দিয়ে ৷ আর বামদিকে রয়েছে চাঁদ । এই মুদ্রার উল্টোদিকে 'অভিষেক লক্ষ্মী নিম্বতে’ লেখা ৷ ব্রহ্মী কিংবদন্তি শ্রী শশাঙ্কের সঙ্গে পদ্মের উপর আড়াআড়ি পায়ে উপবিষ্ট একটি পদ্ম ধারণ করে রয়েছেন ৷
অসমের জয়ধ্বজ সিংহের (1648-63) প্রচলন করা অষ্টভুজ রূপী জপমালা-সহ একটি দ্বিগুণ রৈখিক সীমানার মধ্যে উভয় পাশে চার লাইনের শিলালিপি থাকা মুদ্রাও প্রদর্শিত হবে এই উৎসবে ৷ ইতিহাস অনুযায়ী, অসমের অহম শাসকরা মুদ্রায় থাকা অষ্টভুজাকার বিন্যাসটি গ্রহণ করেছিলেন । ত্রিপুরার অমরা মাণিক্যের (1577-86) প্রচলন করা টংকাও (টাকা) থাকছে এই উৎসবে ৷ এছাড়া গুপ্ত রাজবংশের কুমারগুপ্ত (প্রথম মহেন্দ্রদিত্য - 415-455 সিই) দ্বারা প্রচলিত সোনার দিনারও থাকবে এই প্রদর্শনীতে ৷
এই উৎসবে শুধু মুদ্রা প্রদর্শন হবে এমনটা নয়, মহাবীরের মৃত্যু, 2550 বছরের নানা ইতিহাসও তুলে ধরা হবে । রবিশঙ্কর শর্মা বলেন, ‘‘20টা ক্যাবিনেটে এই মুদ্রা গুলো সাজানো থাকবে । দশ জন ওই মুদ্রার ইতিহাস তুলে ধরবেন ।" এবারের প্রদর্শকদের তালিকায় রয়েছেন - ললিত বাইদ, যিনি ‘ভগবান মহাবীরের উপর মুদ্রা ও পদক’ নিয়ে নানা তথ্য তুলে ধরবেন । রবিশঙ্কর শর্মা ‘মহাজনপদের মুদ্রা’র ইতিহাস বর্নণা করবেন ।
অনুপ মিত্র ‘প্রাথমিক বাংলার মুদ্রা’, দীপঙ্কর কুমার ‘প্রাচীন ভারতের স্বর্ণমুদ্রা’, ড. উজ্জ্বলকুমার সাহা ‘প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় ভারতের স্বর্ণমুদ্রা’, দিব্যনস মহনসারিয়া ‘বিশ্বের রঙিন মুদ্রা ও টোকেন’, ঋদ্ধি ভট্টাচার্য ‘শ্রীলঙ্কার জেলা মুদ্রা’, অনিন্দ্য কর ‘খেলাধুলা, গেমস এবং আইবিএনএস পুরস্কার বিজয়ীদের উপর ব্যাঙ্ক নোট’ নিয়ে নানা তথ্য পরিবেশন করবেন । দেবকুমার পাল ‘ব্যাংক নোটের মাধ্যমে রানি এলিজাবেথের প্রতি শ্রদ্ধা’র বিষয়টি উল্লেখ করবেন ।
উল্লেখ্য, 1985 সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দ্য নিউমিসম্যাটিক সোসাইটি অফ ক্যালকাটা ৷ বিশ্বব্যাপী মুদ্রাবিদদের জন্য এটাই প্রধান সংস্থা । যাঁরা মুদ্রা সংগ্রহ এবং গবেষণায় দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করেন, তাঁরা এই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত । বিশ্বব্যাপী 500-র বেশি সদস্যদের এই সংগঠন মুদ্রার পদ্ধতিগত সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং সংখ্যাগত গবেষণার জন্য কাজ করেন ।
আরও পড়ুন: