কলকাতা, 14 অক্টোবর : গাঁজা নয় । উত্তর-পূর্বের রাজ্য মণিপুর থেকে শহরে ঢুকেছে ইয়াবা ৷ হাতেনাতে তার প্রমাণ পেল কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (STF) । ওই মাদক এই রাজ্যের দুই বাসিন্দার হাতে তুলে দেওয়ার সময় হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হল তিনজনকে । ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন গোয়েন্দারা ।
সাধারণভাবে থাইল্যান্ড এবং মায়ানমার থেকে আসে পার্টি ড্রাগ ইয়াবা । সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা বলছে মায়ানমার থেকে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি দিয়ে কলকাতায় আসছে পার্টি ড্রাগ । কখনও তা ব্যবহার করা হচ্ছে এই শহরেই । কখনও আবার চলে যাচ্ছে পড়শি দেশ বাংলাদেশে । এই চক্রটি কী উদ্দেশ্যে ওই ইয়াবা কলকাতা এনেছিল খতিয়ে দেখছে স্পেশাল টাস্ক ফোর্স ।
লালবাজার সূত্রের খবর, গতকাল দুপুরে চিংড়িঘাটা ক্রসিংয়ের কাছে সাউথ ক্যানাল রোডে হাত বদল হচ্ছিল ওই মাদক । গোপন সূত্রে খবর পান কলকাতা পুলিশের টাস্ক ফোর্সের গোয়েন্দারা । হাত বদলের সময়েই হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয় তিনজনকে । তাদের একজন মণিপুরের বাসিন্দা । নাম মহম্মদ আলি আহমেদ । আলি 60 হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট তুলে দিচ্ছিল বসিরহাটের বাসিন্দা বাকি বিল্লা গাজি এবং স্বরূপনগরের বাসিন্দা আকরামুল গাজির হাতে । যার বাজার মূল্য প্রায় 50 লাখ টাকা । এ রাজ্যের দু'জনই সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা বলে গোয়েন্দারা মনে করছেন, ওই মাদক চলে যেত বাংলাদেশে । উল্লেখ্য, শেষ কয়েক দিনে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে উদ্ধার হয়েছে প্রচুর ইয়াবা ট্যাবলেট । গোয়েন্দা সূত্রে খবর, বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে ইয়াবা পাচার বন্ধে কড়া পদক্ষেপ করেছে বাংলাদেশ প্রশাসন । সেই সূত্রেই উত্তর-পূর্ব ভারতে ঢুকছে মাদক । তারপর ঘুরপথে তা যাচ্ছে বাংলাদেশে ।

এর আগেও মণিপুর থেকে আসা ইয়াবা ট্যাবলেট বাজেয়াপ্ত করেছে কলকাতা পুলিশ ৷ অগাস্টের শেষ সপ্তাহে কলকাতা পুলিশের কাছে খবর ছিল, মণিপুর এবং নাগাল্যান্ড থেকে শহরে ঢুকছে পার্টি ড্রাগ । সেই সূত্রেই অসমের রেজিস্ট্রেশন একটি স্করপিও গাড়ির উপর নজর পড়ে গোয়েন্দাদের । ময়দান থানা এলাকার সৈয়দ বাবা মাজারের সামনে সেটিকে আটক করা হয় । তাতে সওয়ারি ছিল চারজন । দু'জন মণিপুরের আর দু'জন নাগাল্যান্ডের বাসিন্দা । কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের অফিসারদের কাছে খবর ছিল তেমনই । গাড়িটির সিটের কভার সরিয়ে দেখা যায় সেখানেও কিছু নেই । অথচ গাড়িতে থাকা চারজনের শরীরের অভিব্যক্তি বলছিল, কিছু একটা আছেই । ওই গাড়ির ইন্টেরিয়রের কাজ জানা এক মেকানিককে ডেকে পাঠিয়ে খোলা হয় পেছনের সিট । পিছনের সিট তুলে ফেলতেই বডি প্যানেল থেকে বেরিয়ে পড়ে মুঠো মুঠো ইয়াবা । মোট 23 কেজি 300 গ্রাম । এরপরেই গ্রেপ্তার করা হয় ওই চারজনকে।
ইয়াবার উৎপত্তিস্থান থাইল্যান্ড । বাংলাদেশের বহু যুবক এই ট্যাবলেটের নেশায় পড়ে প্রায় সর্বস্বান্ত । সে দিক থেকে কলকাতাতেও আসছে এই মাদক । ব্যবহার হচ্ছে পার্টি ড্রাগ হিসেবে । পুলিশ জানাচ্ছে, এই ট্যাবলেট মূলত তৈরি করা হয় মেথঅ্যাম্ফিটামিন এবং ক্যাফেইনের মিশ্রণে । ইদানিং নাকি আবার এর সঙ্গে মেশানো হচ্ছে হেরোইন । মূলত এটি ট্যাবলেট হিসেবে ব্যবহার করা হয় । কখনও আবার এটি ব্রাউন সুগার কিংবা হেরোইনে ইনহেল করা হয় । থাইল্যান্ডের পাশাপাশি ইয়াবা ব্যাপক পরিমাণে ব্যবহার হচ্ছে মায়ানমারে । সেখান থেকেই ঢুকছে বাংলাদেশ । তারপর সীমান্ত পেরিয়ে চলে আসছে কলকাতায় ।