কলকাতা, 17 জুলাই : পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যাওয়ার প্রায় সাড়ে তিন মাস পর প্রকাশিত হল চলতি বছরের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল । উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের ইতিহাসে এই বছর পাশের হার সর্বোচ্চ । পরীক্ষা সম্পূর্ণ না হওয়ায় প্রকাশ করা হয়নি মেধাতালিকা । তবে, এই বছর সর্বোচ্চ প্রাপ্ত নম্বর উঠেছে 500-য় 499 । শতাংশের বিচারে 99.8 শতাংশ । রেকর্ড গড়েছে 60 শতাংশ বা তার উপরে নম্বর পাওয়ার হারও । মোট অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় 50 শতাংশ পরীক্ষার্থী 60 শতাংশ বা তার উপরে নম্বর পেয়েছেন ।
এই বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য নাম নথিভুক্ত হয়েছিল মোট 7 লক্ষ 75 হাজার 364 জন পরীক্ষার্থীর । তাঁদের মধ্যে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন 7 লক্ষ 61 হাজার 583 জন । এ বছর ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীদের সংখ্যা বেশি ছিল । ছাত্রদের তুলনায় 63 হাজার 164 জন ছাত্রী বেশি ছিল। তথ্য ও পরিসংখ্যান অনুযায়ী ছাত্রী পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা বেশি হওয়া সরকারি নানা প্রকল্পের সুফল বলেই দাবি উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি মহুয়া দাসের। অংশগ্রহণকারী মোট পরীক্ষার্থীদের মধ্যে সফল হয়েছেন 6 লক্ষ 80 হাজার 57 জন পরীক্ষার্থী । মোট পাশের হার 90.13 শতাংশ । যা উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের ইতিহাসে সর্বকালীন রেকর্ড বলে জানাচ্ছেন সভাপতি ।
2019 সালে মোট পাশের হার ছিল 86.29 শতাংশ । ছাত্রদের পাশের হার 90.44 শতাংশ । ছাত্রীদের পাশের হারও 90 শতাংশের বেশি । সংখ্যালঘুদের পাশের হার 85.76 শতাংশ । তপশিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায় পাশের হার 87.40 শতাংশ । মাধ্যমিকের ফলাফলে কলকাতার কলঙ্ক কিছুটা হলেও মিটেছে উচ্চমাধ্যমিকে । চলতি বছর মোট 11টি জেলায় পাশের হার 90 শতাংশ বা তার বেশি হয়েছে । 11টি জেলার মধ্যে প্রথমেই রয়েছে কলকাতা । তারপরে যথাক্রমে পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, কালিম্পং, দক্ষিণ 24 পরগনা, হাওড়া, উত্তর 24 পরগনা, হুগলি, ঝাড়গ্রাম, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ রয়েছে ।
এই বছর বিজ্ঞান বিভাগে মোট পাশের হার 98.83 শতাংশ। বাণিজ্য ও কলা বিভাগের পাশের হার যথাক্রমে 92.22 শতাংশ ও 88.74 শতাংশ । 60 শতাংশ বা তার বেশি নম্বর পেয়েছেন মোট 3 লক্ষ 22 হাজার 56 জন পরীক্ষার্থী । যা আগের বছরের থেকে 58 হাজার 907 জন বেশি । 'O' গ্রেড অর্থাৎ 90 থেকে 100 শতাংশের মধ্যে নম্বর পেয়েছেন মোট 30 হাজার 202 জন । 2019 সালে 'O' গ্রেড পেয়েছিলেন 7 হাজার 818 জন । A+ গ্রেট অর্থাৎ 80 থেকে 90 শতাংশের মধ্যে নম্বর পেয়েছেন 84 হাজার 746 জন পরীক্ষার্থী। গত বছর এই গ্রেড পেয়েছিলেন 47 হাজার 759 জন পরীক্ষার্থী। সব মিলিয়ে এই বছর পরীক্ষার্থীরা অভূতপূর্ব সাফল্য পেয়েছে বলে জানান মহুয়া দাস। তিনি বলেন, "এবারের ফলাফলে আশা করি ছাত্র-ছাত্রীদের মুখে হাসি ফুটবে এবং যাঁরা সফল হয়েছেন তাঁদের সকলকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি ।"
তবে, আজ ফল প্রকাশের দিনই মার্কশিট ও সার্টিফিকেটের হার্ডকপি হাতে পাননি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা। মহুয়া দাস এদিন বলেন, "আজ ফল প্রকাশ করা হচ্ছে ওয়েবসাইটে । প্রতিটি পরীক্ষার্থীর প্রতিটি বিষয়ের নম্বর সহ সম্পূর্ণ ফল পাওয়া যাবে । তাঁরা ডাউনলোড করে রেজাল্টের প্রিন্ট আউট সংগ্রহ করে নিতে পারবেন । লকডাউনের কথা বিবেচনা করে এবং রাজ্যের বেশকিছু বিতরণ কেন্দ্র ইতিমধ্যে কনটেনমেন্ট জ়োনের অন্তর্গত হওয়ায় আগামী 31 জুলাই বেলা দুটো থেকে সংসদের নির্দিষ্ট 52টি বিতরণ কেন্দ্র থেকে মার্কশিট ও সার্টিফিকেট বিতরণ করা হবে । বিদ্যালয়ের প্রতিনিধি স্বাস্থ্যবিধি মেনে মার্কশিট ও সার্টিফিকেট সংগ্রহ করবেন ।"
তবে, এবার অনলাইন রেজাল্টে নতুনত্ব এনেছে সংসদ । এ বছর শুধু বিষয়ভিত্তিক নম্বর নয়, পরীক্ষার্থীরা পরবর্তীকালে রেজাল্টের যে হার্ডকপি পাবেন তারই রেপ্লিকা দেখতে পাবেন ওয়েবসাইটে এবং ডাউনলোড করতে পারবেন । অন্যদিকে, ক্যাম্প অফিস থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়ার পর স্কুলগুলি থেকে মার্কশিট ও সার্টিফিকেট অভিভাবকদের সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়াই বাঞ্ছনীয় বলে জানানো হয়েছে সংসদের তরফে। কিন্তু, তা বাধ্যতামূলক করা হয়নি । আজ থেকে শুরু করে আগামী 31 অগাস্টের মধ্যে স্কুটিনি ও রিভিউয়ের জন্য আবেদন করতে পারবেন পরীক্ষার্থীরা । এ বছরও অনলাইনেই PPR ও PPS-এর জন্য আবেদন করা যাবে । ডেবিট কার্ড ক্রেডিট কার্ড ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে PPR ও PPS-এর জন্য পেমেন্ট করা যাবে। ছাত্রদের কথা বিবেচনা করে এই বছরের জন্য কমানো হয়েছে PPR ও PPS-এর চার্জ ।
এ প্রসঙ্গে মহুয়া দাস বলেন, "PPR ও PPS-এর যে চার্জ আমরা গত বছর যা নিয়েছিলাম, সেটা এবছর ছাত্রদের জন্য আরও অনুকূল করা হয়েছে । আমরা PPS অর্থাৎ স্কুটিনি জন্য 60 টাকা নিতাম, সেটা এবার 50 টাকা করেছি । PPR অর্থাৎ রিভিউয়ের জন্য আমরা 100 টাকা নিতাম, সেটা 75 টাকা করেছি । এটা এই বছরের জন্য করা হয়েছে ।"
তবে, PPR ও PPS এই বছর শুধুমাত্র হয়ে যাওয়া পরীক্ষাগুলি ক্ষেত্রেই করা যাবে বলে জানানো হয়েছে । পরীক্ষার ফলাফলে যদি কোনও পড়ুয়া সন্তুষ্ট না হন তাহলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সেই সকল পরীক্ষার্থীদের আবার পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে বলে আগেই জানানো হয়েছিল সংসদের তরফে । এ বিষয়ে আজ সংসদ সভাপতি বলেন, "রেজাল্টে আমার মনে হয় সকলেই খুশি হবেন। অখুশি হওয়ার কোনও কারণ মনে হচ্ছে না আছে । তবুও, যদি কারওর মনে হয় আমরা যে পরীক্ষাগুলো দিতে পারিনি সেগুলোর লিখিত পরীক্ষা নেব সেক্ষেত্রে নির্দেশ আছে, সুপ্রিম কোর্ট বলেছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তবেই পরীক্ষার চিন্তাভাবনা করা উচিত এবং করতে হবে । ফলে, আমরা সে ব্যাপারে এখন ভাবনাচিন্তা করিনি । যদি পরিস্থিতি আমরা স্বাভাবিক পাই তাহলে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে পরীক্ষার্থীদের জন্য যতদূর যা করা যায় তা আমরা করব । কিন্তু, এখনই সেটা বলতে পারব না । পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে কিছু করা যাবে না ।" মাধ্যমিকের মতো পরের বছরের উচ্চমাধ্যমিক নিয়েও কিছু জানায়নি সংসদ । মহুয়া দাস বলেন, "পরের বছরের উচ্চমাধ্যমিক কবে হবে তা এখনই বলা সম্ভব নয় ।"