কলকাতা, 25 নভেম্বর : আগামী বছর অর্থাৎ 2021 সালের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্যক্রমে করা হচ্ছে কাটছাঁট। আজ সাংবাদিক বৈঠক করে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্যক্রম 30-35 শতাংশ কমানো হবে। পাঠ্যক্রম কমানোর বিষয়টি দেখার জন্য গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির পরামর্শে স্কুল শিক্ষা দপ্তর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে আজ জানান শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
কোরোনা আবহে মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে বন্ধ স্কুল। এখনও পর্যন্ত খোলেনি। এই পরিস্থিতিতে আগামী বছর তথা 2021 সালের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা ক্লাসরুম শিক্ষার সুবিধা পাচ্ছে না। কিছুদিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, 2021 সালের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য যোগ্য ছাত্র-ছাত্রী নির্বাচনের পরীক্ষা তথা টেস্ট পরীক্ষা নেওয়া হবে না। এই পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট বহু মানুষ সুপারিশ ও দাবি জানিয়েছিলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্যক্রম কমানোর। সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে রাজ্য সরকারের শিক্ষা দপ্তরের তরফে সিলেবাস কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদারের নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছিল একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিও।
সম্প্রতি অভীক মজুমদারের নেতৃত্বে একাধিক শিক্ষাবিদ, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের আধিকারিকদের নিয়ে গঠিত এই বিশেষজ্ঞ কমিটি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্যক্রম নিয়ে তাঁদের সুপারিশ জমা দেয় স্কুল শিক্ষা দপ্তরের কাছে। বিশেষজ্ঞ কমিটি সুপারিশ করেছিল, 2021 সালের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্যক্রমে 30-35 শতাংশ কমানো হোক। সেই সুপারিশ স্কুল শিক্ষা দপ্তর গ্রহণ করেছে বলে আজ জানালেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
এপ্রসঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "বিভিন্ন অভিভাবক, ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষা সংগঠনের অনুরোধ পাচ্ছিলাম। এটা সত্য যে কোরোনা পরিস্থিতিতে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকের নিয়মিত ক্লাস করা সম্ভব হয়নি। তা সত্ত্বেও সরকার শিক্ষা দপ্তরের উদ্যোগে যতটা সম্ভব ছাত্রদের অনলাইনে, কখনও দূরাভাষে, কখনও টেলিভিশনে, কখনও বাংলার শিক্ষার মাধ্যমে সাহায্য করেছে, যাতে পাঠদানটা তাদের কাছে পৌঁছায়। তা সত্ত্বেও মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের এবং আমাদের যে বিশেষজ্ঞ কমিটি আছে, তাঁরা সুপারিশ দিয়েছে, মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্যসূচির কীভাবে মোকাবিলা করা যায়।"
তিনি আরও বলেন, "2021-র মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যসূচি 30-35 শতাংশ কমিয়ে দেওয়ার যে প্রস্তাব তাঁরা করেছেন সেই প্রস্তাবকে আমরা গ্রহণ করলাম। কোন বিষয়ে কতটুকু কমলো, কতটুকু থাকল, আমরা বলার পর তার নির্ধারণ করবে সংশ্লিষ্ট বোর্ড। তারপরে বিষয়ভিত্তিক সেই পাঠ্যসূচি আলাদা আলাদাভাবে বিজ্ঞপ্তি জারি করে নিজেদের ওয়েবসাইটে দিয়ে দেবে উভয় বোর্ড।"
তবে, স্কুল কবে থেকে খোলা হবে, সে প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের তরফে আজ শিক্ষামন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হলেও নির্দিষ্ট কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি। শিক্ষামন্ত্রী এপ্রসঙ্গে বলেন, "বিদ্যালয়গুলো বহুদিন ধরে বন্ধ আছে। সেগুলির ক্লাসরুম, বেঞ্চ, বাথরুম, সামগ্রিক পরিবেশ রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। তারপরে COVID-19-র যাবতীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কী করে তার মোকাবিলা করা যায় সেটাই আমরা করছি। যারা স্কুল খুলেছিল তারা আবার বন্ধ করে দিচ্ছে। সুতরাং আমাদের দেখতে হবে কোন পথে গেলে ছাত্রদের পাঠদানটাও ঠিক থাকে এবং তাদের স্বাস্থ্যটাও সুরক্ষিত থাকবে। সুরক্ষা যেমন শিক্ষায়, সুরক্ষা তেমন স্বাস্থ্যে। দুটোর সমন্বয় সাধন করে কী করে করা যায় আমরা সেটা দেখছি।" শিক্ষা দপ্তরের প্রধান সচিব মণীশ জৈনের নেতৃত্বে স্কুল খোলার প্রস্তুতির কাজ চলছে বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী।
অন্যদিকে, ডিসেম্বর মাস থেকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ছিল। তাহলে কি ডিসেম্বরেই খুলে যাবে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়? সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে প্রথমে আলোচনা করি, তাঁদের মনোভাব জেনে তারপরে বলব। মুখ্যমন্ত্রীকে জানাব তাঁদের কী বক্তব্য, তারপরই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।"