কলকাতা, 15 ডিসেম্বর : কলকাতা পৌরনিগম নির্বাচন 2021’র (KMC Election 2021) আগে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলি তাদের ভোটব্যাঙ্ক নিয়ে নাড়াঘাটা শুরু করেছে ৷ এই পরিস্থিতিতে কলকাতার বুকে আরও একটি নতুন শক্তি মাথা তুলতে চাইছে ৷ কলকাতা পৌরনিগমের নির্বাচন হোক বা অন্য কোন ভোট ৷ যাতে তারা নির্ণায়ক শক্তি হিসেবে নিজেদের তুলে ধরতে পারেন, সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ৷ তারা নতুন কোন রাজনৈতিক দল নয়, তারা হলেন কলকাতার শতাব্দী প্রাচীন বাড়ির মালিকদের সংগঠন ৷ ‘দি ক্যালকাটা হাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’ (The Calcutta House Owners Association) ৷
কলকাতার উত্তর, মধ্য ও পূর্ব মূলত এই তিন অংশেই সমস্ত দিকে আছে বহু পুরনো বাড়ি ৷ যে সব বাড়িগুলিতে নামমাত্র ভাড়া দিয়ে বছরের পর বছর থাকছেন ভাড়াটিয়ারা (Tenants problem of Kolkata old houses) ৷ আবার কোথাও কোথাও দীর্ঘদিনের ভাড়াটে তাঁরা পরবর্তী সময় পরিণত হয়েছে দখলদারে ৷ তাই নামমাত্র ভাড়া পাওয়ায় সেই বাড়ি মেরামতের উৎসাহ দেখান না কোন মালিক ৷ আর এর পরিণতি ভয়ঙ্কর ! বছরের বিভিন্ন সময় মাঝেমধ্যেই ঘটে যায় দুর্ঘটনা ৷ বাড়ি ভেঙে পড়ে চাপা পড়ে মারা যান অনেকে ৷ তা সে বাড়ির মালিকের পরিবার হোক বা ভাড়াটের পরিবার ৷ আর ইতিহাস বলছে, প্রতিটি ঘটনাতেই কাঠগড়ায় উঠতে হয়েছে বাড়ির মালিককে ৷ এমনকি তাঁদের পুলিশ আটক পর্যন্ত করেছে ৷ এই হয়রানি বঞ্চনার শেষ দেখতে চান তাঁরা ৷ কারণ, এত দুর্ঘটনার পরেও, পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি ৷
আরও পড়ুন : KMC Election 2021 : জাগোবাংলায় পৌরভোটের বিশেষ কলমে মমতা স্তুতি কবি জয় গোস্বামীর
এর কারণ কী ?
বাড়ি মালিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুকুমার রক্ষিত ৷ ইটিভি ভারতকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, ‘‘কেএমডিএ-র একটি সমীক্ষার রিপোর্টে বলা হয়েছে কলকাতায় প্রায় সাড়ে 4 লক্ষ মালিকানাধীন বাড়ি বা বহুতল আছে যেখানে ভাড়াটিয়ারা থাকেন ৷ এমন বাড়ি মালিকের পরিবার ধরলে গোটা কলকাতায় কমবেশি 35 লক্ষ ভোটার ৷ তাই এই পরিমাণ ভোটার থাকলেও, কোনওভাবেই প্রভাব বিস্তার করে উঠতে পারিনি আমরা ৷ আমাদের সমস্যার সমাধানও হয়নি ৷ রাজনৈতিক দলগুলির আমাদের সমস্যা নিয়ে কোন হেলদোল নেই ৷’’
আরও পড়ুন : KMC Election 2021 : ভাগাড়ের মাংস থেকে ম্য়ানহোলে মৃত্যু, পৌরনিগমের ভূমিকায় প্রশ্ন বিজেপি প্রার্থীর
তাই গত পৌরনিগম ভোটে দি ক্যালকাটা হাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের তরফে উত্তর কলকাতার একটি এবং দক্ষিণ কলকাতার দুটি ওয়ার্ডে প্রার্থী দেওয়া হয়েছিল বলে জানান সুকুমার রক্ষিত ৷ প্রতিটি ওয়ার্ডে গড়ে 300 থেকে সাড়ে 300 ভোট পেয়েছিলেন তারা ৷ তবে, এ বছর আর কোনও ওয়ার্ডের প্রার্থী দেয়নি এই সংগঠন ৷ এমনকি ভোট দিতে নাও যেতে পারেন তাঁরা ৷ আমাদের লক্ষ্য এই সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করে, আগামী 2024 সালের মধ্যে নির্ণায়ক শক্তি হয়ে ওঠা ৷ এই বিপুল পরিমাণ ভোটকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসা ৷ যাতে যে কোনও রাজনৈতিক দল, যে কোনও কাউন্সিলর তাঁদের কথা শুনতে বাধ্য হয় ৷ ওয়ার্ড কমিটিতে যাতে তাঁদের প্রতিনিধি রাখা হয় ৷ সমস্যার কথা যাতে পৌরনিগমের অন্দরে পৌঁছয় ৷
আর সব থেকে বড় বিষয় কলকাতার ভাড়াবাড়ি সংক্রান্ত পৌর আইনে রদবদল আনা ওই সংগঠনের মূল লক্ষ্য ৷ যাতে পুরনো বাড়ির মালিকদের কথা চিন্তাভাবনা করা হয় ৷ তা না হলে এই নামমাত্র ভাড়ায় কোনভাবেই বাড়ি সংস্কার করা যাবে না বলে জানিয়েছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুকুমার রক্ষিত ৷ এমনকি কলকাতা পৌরনিগমের চাপানো বিপুল পরিমাণ করও এতে দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না বলে জানিয়েছেন তিনি ৷ এই সব সমস্যার সমাধান তখনই সম্ভব, যখন আইন সংশোধন করা হবে ৷