কলকাতা, 21 মে : বদলাচ্ছে সময় আর তার সঙ্গেই কুমোরটুলিতে উঠে আসছে আগামী প্রজন্মের মহিলা শিল্পী। চায়না, মালা দের পর নতুন মুখ পায়েল পাল (kumartuli teen girl idol maker payel pal )। দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী পায়েল পড়াশুনার সঙ্গেই করছেন পুরোদমে প্রতিমা তৈরির কাজ। আর আগামী প্রজন্মের মধ্যেই মালা পাল, চায়না পালরা নিজেদের খুঁজছেন ৷ স্বাগত জানাচ্ছেন নতুনদের ।
শিল্পী বাসুদেব পালের এবার বেশ কয়েকটি ঠাকুর বিদেশ পাড়ি দিচ্ছে । আর সেই ঠাকুরগুলি তৈরির কাজ করেছেন শিল্পীর মেয়ে বছর সতেরোর পায়েল পাল । গিরিবালা সরকার বালিকা বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী পায়েল । মাধ্যমিকে তাক লাগানো রেজাল্ট করেছিল সে । আগামী দিনে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার ইচ্ছা খুব । তবে চাকরি নয় প্রতিমার কাজেই তিনি আগামীতে মনোনিবেশ করবেন বলেই জানান ।
বাসুদেব পাল বলছেন, "পায়েল ছোটবেলা থেকেই দোকানে আসে । আমি যখন কাজ করতাম মন দিয়ে দেখত । প্রতিমা সাজানোর সময় একটু একটু পাথর চুমকি লাগত । এখন পড়াশোনার ফাঁকে সময় পেলেই এই কাজে মন দেয় পায়েল । দুই বছর ধরে মোটের উপর সব কাজই শিখে গিয়েছে । প্রথমে প্রতিমার সাজ, তারপর রং করা শিখেছে । তারপর মাটির কাজ । মুখ জমানো । এখন চোখও বেশ আঁকছে । মেয়ে যদি এই কাজে এগিয়ে আসে তাতে ভালই লাগবে ।"
আরও পড়ুন : দু'বছরের দুঃস্বপ্নের ইতি, কুমোরটুলি থেকে রেকর্ড সংখ্যক প্রতিমা যাচ্ছে বিদেশে
আর যাঁকে ঘিরে এত কথা সেই পায়েলের কথায়, "শিল্পীদের ঘরে আগামী প্রজন্মের প্রত্যেকের একটা ইচ্ছা থাকে এই কাজে যুক্ত হওয়ার । তবে খুব কম সংখ্যক মহিলা যুক্ত হন । যখন দুর্গা বা গণেশ প্রতিমা বেশি সংখ্যক বানানোর বরাত মেলে তখন স্কুলে যাওয়াটা নিয়মিত হয়ে ওঠে না ৷ স্কুলেও এটা বলা আছে । পড়াশোনার সঙ্গে একটু বুঝে শুনেই পুরোদমে কাজ করতে হয় । আগামী দিনে ইংরেজিতে সাম্মানিক স্নাতক পড়ার ইচ্ছা রয়েছে । পাশাপাশি এই কাজটাও আরও বেশি করে করব ।"
তবে কুমোরটুলিতে মহিলা মুখের সংখ্যা এই নতুন নয় । ইতিমধ্যেই প্রতিমা শিল্পী হিসেবে নাম করেছেন মালা পাল, চায়না পাল, কাঞ্চি পাল, কাকলি পালরা । আরও টুকটাক অনেকেই আছেন যাঁরা সামনে না এলেও অল্প-আধটু কাজ করে থাকেন । মালা পাল বলেন, "কাজ করতে এসে প্রথমে বাড়ি থেকে শুরু করে আশেপাশের অনেকেই বাধা দিয়েছিলেন । কিন্তু দিল্লিতে যখন পুরষ্কৃত হয়ে ফিরলাম তখন অনেকে উৎসাহ দিলেন । সেই থেকে পুরোদমে এগিয়ে চলা এবং দাদার সঙ্গে এই কাজের হাল ধরা । এখানে বহু পুরুষ শিল্পী আছেন তবে মহিলা শিল্পী হিসেবে খুব কমজনই প্রতিষ্ঠিত । এই প্রজন্মের মেয়েরা যদি এই কাজে এগিয়ে আসে তাহলে সেটা আনন্দের বিষয় ।"
আরও পড়ুন : 1 জুন থেকে রাজ্যে বন্ধ 51 মাইক্রনের নীচে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ, সংকটে ব্যবসায়ীরা!
এই নিয়ে চায়না পাল বলেন, "বাবার মৃত্যুর পর এই কাজে আসা । বহু সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে শুধু মেয়ে বলে । কষ্ট হলেও সব বাধা কাটিয়ে এখন সামনে এগিয়ে যাচ্ছি । অনেক মহিলারা এই পেশায় যুক্ত হন আবার বিয়ে করে চলে যান । কিন্তু এই পেশায় টিকে থাকাটা বড় ব্যাপার । হাতে গোনা মহিলা রয়েছেন যাঁরা টিকে থাকেন । আগামী দিনে মহিলা শিল্পী উঠে আসুক । কিন্তু এই শিল্পী তাঁরা নাম করার সঙ্গেই লড়াই করেই টিকে থাকুক এটাই চাই ।"