কলকাতা, 20 সেপ্টেম্বর: কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি-সিবিআইয়ের 'অতি সক্রিয়তা' নিয়ে শাসকদলের আনা প্রস্তাবে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বিধানসভা ৷ সোমবার বক্তব্য রাখতে উঠে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানান, সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বিধানসভায় এই প্রস্তাব পাশ করিয়ে নিলেও শেষ পর্যন্ত তা গৃহীত হবে না । সেনাবাহিনী নিয়ে বিধানসভায় যে প্রস্তাব পাশ হয়েছিল, এর ভবিষ্যতও তার মতোই (Suvendu Adhikari slams Mamata Banerjee over CBI and ED resolution) ।
বিরোধী দলনেতা বিধানসভায় স্পষ্ট ভাষায় বলেন, "এই সরকার চোরদের বীরের সম্মান দেয় । দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে এজেন্সি । সেই লড়াই জারি থাকবে । এই প্রস্তাব তার উপর কোনও প্রভাব ফেলবে না ।" কেন্দ্রীয় এজেন্সির বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাবের বিরোধিতা করে তিনি প্রশ্ন করেন, "রাজ্যের শাসক দল কেন্দ্রীয় এজেন্সির অতি-সক্রিয়তা নিয়ে বিজেপিকে দায়ী করছে । কিন্তু বাস্তবে এই তদন্ত কোনওভাবেই বিজেপির নির্দেশে হচ্ছে না, হচ্ছে আদালতের নির্দেশে । তাহলে বিজেপি কীভাবে একে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পূরণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে ?"
এরপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিবিআই তদন্তের সম্মতিপত্র প্রত্যাহারের মনে করিয়ে দেন বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী ৷ তিনি বলেন, "2018-য় সিবিআইকে তদন্তের জন্য রাজ্যের দেওয়া সম্মতিপত্র ফিরিয়ে নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী । কারণ ওই সময় থেকে তাঁর ভাইপো কয়লা-গরু পাচারে হাত পাকাতে শুরু করেন ।" এই বিজেপি নেতার আরও দাবি, আদালতের নির্দেশে তদন্ত করছে ইডি-সিবিআই । এর সঙ্গে বিজেপির কোনও যোগ নেই ।
আরও পড়ুন: বিধানসভায় শুভেন্দুকে প্রথমে তুই-তোকারি, শেষে নমস্কারের সৌজন্য মমতার
শুভেন্দুর কথায়, সিবিআই রাজ্যে 15টি মামলার তদন্ত করছে ৷ এর সঙ্গে বিজেপি বা কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও সম্পর্ক নেই । কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা আদালতের নির্দেশ মেনে কাজ করছে । মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, "এর বিরোধিতা করতে হলে সুপ্রিম কোর্টে যাননি কেন ? যাওয়ার সুযোগ ছিল ।" এরপরই তিনি তৃণমূল শিবিরকে আক্রমণ করেন, "এরা জানে, ডাল মে কুছ কালা হ্যায়, তাই যেতে পারেনি ।"
বিধানসভায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি নিয়ে আলোচনাকে 'অনৈতিক' এবং 'আইনবিরুদ্ধ' বলে আখ্যা দেন শুভেন্দু । তাঁর কথায়, ভারতে সুপ্রিম কোর্ট যখন কোনও রায় দেয়, তখন তা রুলে পরিণত হয় । সোমবার 169 ধারায় গৃহীত প্রস্তাব সম্পূর্ণ বেআইনি । নন্দীগ্রামের বিধায়ক বলেন, "আমি স্পিকারকে বলেছি, এই প্রস্তাব সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হতে পারে । সুপ্রিম কোর্ট কোনও রায় দিলে, একমাত্র সংসদই পারে সেই রায় খণ্ডন বা সংশোধন করতে । অন্য কারও সে অধিকার নেই ।" এদিন প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে তিনি কটাক্ষ করেন ৷ শুভেন্দুর পালটা অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করে আদতে ভাইপোকে বাঁচাতে চাইছেন তৃণমূল সুপ্রিমো ।
ইডি-সিবিআইয়ের 'অতি সক্রিয়তা' নিয়ে আনা প্রস্তাবের আলোচনায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বিধানসভা ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুভেন্দুকে (Leader of Opposition Suvendu Adhikari) আক্রমণ করে বিরোধীদের উদ্দেশে বলেন, "আপনাদের যিনি প্রধান এখানে আছেন, তাঁর বাড়িতে ক'টা রেইড হয়েছে ? তুমি চুরি করে সাধু মহারাজ, কারণ আজ বিজেপি ক্ষমতায় আছে ৷" এরপরই বিরোধী দলনেতাকে 'তুই-তোকারি' সম্বোধন করে মমতার তোপ, "চ্যালেঞ্জ করছি, যদি পারিস এটা প্রমাণ কর ৷ তোদের মতো চোর আমরা নই রে ৷"
এরপর অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী বিরোধীদের বেঞ্চের কাছে গিয়ে বিধায়কদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করেন ৷ এই সৌজন্য বার্তা প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন, "আমাদের বিজেপির বেঞ্চের দিকে এসে মুখ্যমন্ত্রী নমস্কার করেছেন । আমরাও প্রতি নমস্কার করেছি । বিজেপি এই সংস্কৃতিতেই অভ্যস্ত ।" পাশাপাশি তিনি মনে করিয়ে দেন দুর্গাপুজো আসছে ৷ বিরোধী দলনেতা বলেন, "কিন্তু শারদ শুভেচ্ছা জানাতে পারিনি । কারণ পিতৃপক্ষে আমরা শারদ শুভেচ্ছা দিই না । মাতৃপক্ষ শুরু হলে মুখ্যমন্ত্রীকে শারদ শুভেচ্ছা পাঠিয়ে দেব ।"
আরও পড়ুন: বিজেপি বিধায়কদের বাড়িতে হানা দিলেও টাকার পাহাড় উদ্ধার হবে, বিধানসভায় চ্যালেঞ্জ মমতার