কলকাতা, 23 নভেম্বর: রাজ্যের শাসকদলের প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে টানাটানি চলছে বলে দাবি করলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ৷ তাঁর কটাক্ষ, অভিষেক দলকে হাইজ্যাক করেছেন ৷ আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছেন ৷
উল্লেখ্য, আজকের সাংগঠনিক বৈঠকের মঞ্চে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থাকলেও নেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় । শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে তিনি ভার্চুয়ালি নেতাজি ইনডোরের দলীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিলেও সেখানে কিছুই বলেননি তিনি ৷ এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, সুকান্ত মজুমদার বিদ্রুপের সুরে বলেন যে, "এখন দুজনের মধ্যে একটু টানাটানি চলছে । নতুনরা সামলাবে না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুরনো সৈনিকরা সামলাবে । এই নিয়ে দলের এবং পরিবারের মধ্যে একটি টানাটানি চলছে । মুখ্যমন্ত্রী চেষ্টা করছেন দলটাকে ফিরে পাওয়ার কিন্তু ভাইপো তো দলটাকে 'হাইজ্যাক' করে নিয়েছে । এখন দলটা দুই ভাগে আড়াআড়ি ভাবে ভাগ হয়েছে । আগামীদিনে কে প্রার্থী হবেন সেটা আইপ্যাক ঠিক করে দেবে । এখানে আবার বৈঠক কীসের । ওই দলে তো একটাই পোস্ট আর ভাইপো হাফ পোস্ট । বাকি সব তো ল্যাম্প পোস্ট ।"
এ দিকে, 2020 সালের 8 অক্টোবর বিজেপির যুব মোর্চার পক্ষ থেকে নবান্ন অভিযান কর্মসূচিতে যে কর্মী-সমর্থকেরা আহত হয়েছিলেন, তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন । আজ রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার জানান যে, এই ঘটনায় যাঁরা মার খেয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন । কমিশনের পক্ষ থেকে তদন্তের পর জানানো হয়েছে যে, ওইদিন একাধিক কর্মীর উপরে পুলিশ বর্বর নির্যাতন করেছিল । এই নিয়ে রাজ্য সরকার এবং পুলিশকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন তিনি এবং আহত মহিলাদের এক লক্ষ টাকা এবং পুরুষদের 50 হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সুকান্ত ৷
এই প্রসঙ্গে তিনি দাবি করেন যে, এই প্রথম রাজ্য বিজেপি রাজ্য সরকার এবং পুলিশকে বাধ্য করল ক্ষতিপূরণ দিতে । আর তার বিরোধিতা করে যদি রাজ্য সরকার আদালতে যায়, তাহলে বিজেপিও আদালতে যাবে । তঁবু তারা ক্ষতিপূরণ নিয়েই ছাড়বে ।
আদানিদের জমি দেওয়া নিয়ে বিজেপি রাজ্য সভাপতি বলেন যে, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জমি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন । আদানিরা 1700 একর জমি চেয়েছে, সেটা রাজ্য সরকার দিতে পারছে না কারণ রাজ্য সরকারের কোনও ল্যান্ড পলিসি নেই । কোন ল্যান্ড ব্যাক নেই। স্বাভাবিকভাবেই শিল্প হচ্ছে না । আগামীদিনেও আসবে না । যদি ক্ষমতা থাকে তাহলে 1700 একর জমি দিন উনি ।"
মুদ্রাহীন অর্থনীতি কখনও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে না । বেঙ্গল বিজনেস সামিটে এই কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এই বিষয়ে সুকান্ত মজুমদার বলেন যে, "মুখ্যমন্ত্রীর পয়সা লাগে না । আমকেরিকাতে যদি মুদ্রহীন অর্থনীতি রয়েছে, তার মানে আমেরিকাতে কর্মসংস্থান নেই ? কিংবা সিঙ্গাপুরেই বা এটা কী করে সম্ভব হচ্ছে ? আসলে মুখ্যমন্ত্রীকে বুদ্ধি দেন কিছু বামপন্থী অর্থনীতিবিদ আর তিনি এর উলটোপালটা কিছু কথা বলেন । তিনি নিজে অর্থনীতির কিছুই বোঝেন না ।"
বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন নিয়ে সুকান্ত মজুমদারের কটাক্ষ, আগের বছরেও এ রকম একটা বড় অঙ্ক সবাই শুনেছিল । গত একবছর সেইসব বিনিয়োগের একটিরও ফিতে কেটেছেন, এমন একটা ছবিও কি মুখ্যমন্ত্রী দেখাতে পারবেন ? বিজিবিএস এখন বিরিয়ানি খাওয়ানোর জায়গা হয়ে গিয়েছে । আর রাজ্যে যে ভাবে বোমা বিস্ফোরণ হচ্ছে তাতে রাজ্যে বোমা শিল্প চলছে । এই রাজ্যে বোমা এবং কাটমানি শিল্প ছাড়া আর কিছু চলবে বলে মনে হয় না। আসলে লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যে মানুষকে একটা লেবেঞ্চুষ খাওয়ানো হচ্ছে ।"
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল বলেছেন, শিল্পপতিদের গলা টিপে ধরা হচ্ছে । বিনিয়োগ চলে যাচ্ছে । এই নিয়ে সুকান্ত আজ বলেন যে, "তিনি যদি তাঁর ভাইপোকে শিল্পপতি বলে মনে করেন, তাহলে তো চোর শিল্পপতি গলা টিপে ধরবেই । কেন্দ্রীয় এজেন্সির কাজ তারা করছে । রাজ্য সরকার তো করবে না তাই কেন্দ্র সরকার করছে । ভারতের অন্যান্য কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তো এ রকম কোনও কথা বলছেন না । কোথাও তো বিনিয়োগের অভাব নেই । কিন্তু এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর এমনটা মনে হচ্ছে কারণ তাঁর পরিবারের গলা টিপে ধরা হচ্ছে । তাঁর পরিবার যদি চুরি না করে, তাহলে তো তাঁর কোনও ভয় নেই ।
বিজেপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, যে মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী 100 দিনের টাকা যে পাচ্ছেন না সেই কথা বলেছেন, এর থেকেই রাজ্যের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক মহলে নষ্ট হয়েছে এবং বোঝা গিয়েছে রাজ্য কত দেউলিয়া ।
আরও পড়ুন: