কলকাতা, 25 সেপ্টেম্বর : কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি বিলের বিরোধিতা করে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিলেন বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী এবং বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান । সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার সংসদের বাদল অধিবেশনে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন সংশোধন-সহ দেশের শ্রমজীবী, কৃষিজীবী মানুষের স্বার্থ বিরোধী বেশ কয়েকটি বিল যেভাবে পাস করিয়েছে, তা দেশের জন্য বিপদজনক বলে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে জানিয়েছেন বিরোধীরা । এই বিলগুলিকে আইনে পরিণত করার মধ্যে দিয়ে দেশের কৃষি ক্ষেত্রকে কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেওয়া, শ্রমজীবী জনগণের অধিকার কেড়ে নেওয়া এবং খাদ্যশস্য, ডাল চিনি ভোজ্যতেল আলু পেঁয়াজের মতো অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য সামগ্রীকে মজুতদার কালোবাজারিদের হাতে তুলে দেবার পথ প্রশস্ত করা হচ্ছে বলে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন বিরোধীরা ।
কেন্দ্রীয় সরকারের এই মানসিকতার মধ্যে দিয়ে সামগ্রিকভাবে মানুষের খাদ্যের অধিকারের উপর চরম আঘাত নেমে আসতে চলেছে বলে মন্তব্য করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান । এর বিরুদ্ধে দেশব্যাপী মানুষের বিক্ষোভ স্বাভাবিকভাবেই বাড়ছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে । যেভাবে আলোচনার সুযোগ না দিয়ে এবং মতামত যাচাই করার ব্যবস্থা অস্বীকার করে জবরদস্তি এই বিল পাস করানো হল তা এককথায় অবৈধ । সাংসদদের এবং সংসদের অধিকার ও দায়িত্ব কেড়ে নেবার সমান । বিরোধী-শূন্য রাজনীতির বিপজ্জনক প্রবণতা দেশের সংসদীয় রাজনীতিতে যেভাবে ক্রমশই স্বৈরাচারের প্রকাশ ঘটাচ্ছে, অভিযোগ সুজনের ।
এই বিলগুলির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল দেশের প্রায় সমস্ত বিরোধী দল । কেন্দ্রীয় সরকারের সমর্থক দলগুলিও অনেকাংশেই এতে শামিল হয়েছে । রাজ্যসভায় সংখ্যালঘু হলেও কেন্দ্রীয় সরকার এই বিল পাসে যে পথ অবলম্বন করেছে তা নজিরবিহীন এবং সংসদীয় গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার সমান । বস্তুত, জনবিরোধী এই বিলের বিরুদ্ধে সংসদে কংগ্রেস এবং বামপন্থীদের পাশাপাশি অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তৃণমূল প্রতিবাদে সামিল থেকেছে । বিলগুলির বিষয়সমূহ মুখ্যত সংবিধানের রাজ্য অথবা যুগ্ম তালিকাভুক্ত । এই অবস্থায় এই বিলগুলি পশ্চিমবঙ্গে কার্যকরী করা হবে না-এই মর্মে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি বলে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন বিরোধীরা ।
বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান বলেন, "আমাদের নির্দিষ্ট প্রস্তাব, দ্রুত বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করার ব্যবস্থা করা হোক । আলোচ্য বিষয় সমূহে কেন্দ্র বিরোধি নির্দিষ্ট প্রস্তাব আমরা উত্থাপন এবং আলোচনা করতে চাই । এমনকি, যদি রাজ্য সরকার একই মর্মে বিধানসভায় প্রস্তাব আনে, জনস্বার্থে তাতে আমরা শামিল হব ।"
বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন," যে কোনও মূল্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের জনস্বার্থ বিরোধী এই পদক্ষেপগুলিকে রুখতে হবে । প্রসঙ্গত কেন্দ্রীয় সরকারের জনস্বার্থ বিরোধী প্রকল্প পরিকল্পনার বিরুদ্ধে, GST, NRC, রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রকে দুর্বল করা-সহ বিভিন্ন প্রসঙ্গের বিরোধিতা করে রাজ্য বিধানসভায় একাধিকবার আমরা প্রস্তাব গ্রহণ করেছি । এখনকার সময়ে জরুরিভিত্তিতেই কেন্দ্রীয় সরকারের সর্বনাশা পদক্ষেপগুলি বিরুদ্ধে পদক্ষেপ জরুরি ।"