কলকাতা, 16 অগাস্ট : শিক্ষামন্ত্রী তথা বিধানসভার পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে CBI তলব ও তাঁর CGO কমপ্লেক্সে হাজিরা দুর্ভাগ্যজনক ও লজ্জার । মনে করেন বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী । তাঁর মতে, এসব কারণে পশ্চিমবঙ্গের মান ভ্রূলুণ্ঠিত হচ্ছে । রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী CBI দপ্তরে নিজের কৃতকর্মের জবাব দিতে গেছেন । বামফ্রন্ট সরকারের 34 বছরের জমানায় এমন ঘটনা ঘটেনি । তাই শাসকদলের এই হেভিওয়েট নেতার CBI দপ্তরে হাজিরার ঘটনা মোটেই ভালো চোখে দেখছে না বিরোধীরা ।
বামনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, "এই সরকার যেভাবে চলছে তাতে নেতা-মন্ত্রীদের কোনও মান সম্মান নেই । মুখ্যমন্ত্রী বলছেন কাটমানি, তাতেই অভ্যস্ত সবাই । সারদা, রোজ়ভ্যালি বা নারদ কেলেঙ্কারিতে যুক্ত মন্ত্রীরা ।" অতীতে পশ্চিমবঙ্গে এই ঘটনা কখনও ঘটেনি বলেই দাবি করেছেন বর্ষীয়ান এই বামনেতা । তাঁর দাবি, "শত চেষ্টা করেও CBI বা ED বামফ্রন্ট সরকারকে কিছু করতে পারেনি । এই সরকারের নেতা-মন্ত্রীরা যে যতটা প্রভাবশালী, সে ততটাই দুর্নীতিযুক্ত ।"
আজ CBI দপ্তরে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাজিরার ঘটনাকে ন্যক্কারজনক বলে দাবি করেন সুজনবাবু । পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিশানা করে তিনি বলেন, "আজ হাজার হাজার শিক্ষক তাঁদের নিয়োগ ও বেতনবৃদ্ধির দাবি না জানাতে পেরে ফিরে গেলেন । কেন? কারণ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী CBI দপ্তরে বসে আছেন ।" তৃণমূলকে কটাক্ষ করে সুজনবাবু বলেন, "এর আগে কোন কোন নেতা-মন্ত্রী জেলে ছিলেন তা আমাদের সকলেরই জানা । অপদার্থ সরকার । এরাই রাজ্যের মান সম্মান শেষ করে দিল । খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা । CBI আধিকারিকরাও ভাবছেন যে তাঁরা কোন রাজ্যে এসে পড়লেন ।" তিনি আরও বলেন, "গত আট বছরে এমন ঘটনা অনেক ঘটেছে । কিন্তু রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী CBI দপ্তরে জেরার জন্য হাজির, এই ঘটনা নজিরবিহীন ।"
মুখ্যমন্ত্রীর অতীতের বক্তব্যের সমালোচনা করে সুজন চক্রবর্তী বলেন, "ইতিহাসে কোথাও নেই যেখানে মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে বলছেন যে তিনি চোর । তাঁর দলের অন্যতম সৈনিক, যিনি আবার এখন BJP-র নেতা, সেই মুকুল রায় চোর । দলের অনেক নেতা-মন্ত্রীর নাম ধরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন যে তাঁরা চোর । এই ঘটনা কোনওদিন এই রাজ্যে ঘটেনি ।"
পাশাপাশি তৃণমূল ছেড়ে একাধিক হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রীদের BJP-তে যোগদান প্রসঙ্গে সুজন চক্রবর্তী বলেন, "যাহা BJP, তাহাই তৃণমূল । কে কোথায় যোগদান করল তা গুরুত্বপূর্ণ নয় ।" সুজনবাবুর দাবি, "পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস তৈরিই হয়েছে BJP-র বদান্যতায় । BJP-র বড় বড় নেতারাই আজ তৃণমূলের নেতা হয়েছেন । যেমন পরশ দত্ত, কর্নেল সব্যসাচী বাগচী । এরা এক সময় BJP-র গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন । আজ তাঁরা তৃণমূলে এসেছেন দলকে অক্সিজেন দিতে ।" অকপট সুজনবাবুর বক্তব্য, "BJP-র থেকে ধার নিয়ে তৃণমূল গড়ে উঠেছে । এখন বাংলায় BJP তৈরি হচ্ছে তৃণমূল থেকে নেতা ধার নিয়ে । তৃণমূল-কংগ্রেস ও BJP একই দলের A টিম ও B টিম ।"
বর্তমান রাজনীতির তীব্র সমালোচনা করে সুজন চক্রবর্তী বলেন, "মানুষের নিত্য সমস্যা থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিতেই অপরাধীরা কেবল দলবদল করছে । সকালে তৃণমূল । বিকেলে BJP । এরা দুটি দলই রাজ্যে একে অপরের পরিপূরক । এখন তৃণমূল আছে বলেই BJP রয়েছে । আর সেদিন BJP ছিল বলেই আজ সরকারে তৃণমূল রয়েছে ।"