কলকাতা, 15 অক্টোবর: সুদীপ-তাপস তরজা থামছে না, বরং বিতর্ক আরও বেড়ে চলেছে ৷ দুই প্রবীণ নেতার সমর্থনে তৃণমূল কংগ্রেসে এখন দু'টি ভাগ হয়ে গিয়েছে ৷ বৃহস্পতিবার দুপুরে ফের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে জোরালো আক্রমণ করেন তাপস রায় ৷ সন্ধ্যায় পাল্টা জবাব দেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় । ঘাসফুলের এই দ্বন্দ্ব থামাতে এখনও পর্যন্ত তৃণমূল সুপ্রিমো কোনও হস্তক্ষেপ করেছেন বলে জানা যায়নি ৷ তবে তাঁর পরিবারের সদস্য নাকি তাপস রায়ের পক্ষ নিয়েছেন বলে রাজনৈতিক মহলের একটা অংশের অভিমত (Tapas Roy and Sudip Banerjee attack and counter attack goes on) ৷
শুক্রবার ভোরে বউবাজারের মদন দত্ত লেনের একাধিক বাড়িতে ফাটল ধরে ৷ পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে প্রশাসন ৷ এদিকে দলের দুই শীর্ষ নেতা তথা বিধায়ক-সাংসদের মধ্যে তৈরি হওয়া ফাটল অস্বস্তিকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে । এই আক্রমণ এবং প্রতি-আক্রমণ কুৎসিত রূপ নিচ্ছে বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা ৷
এদিন সকালে তৃণমূল লোকসভা সাংসদ সুদীপকে নিশানা করে বিধায়ক তাপস বলেন,"আমি দুর্নীতিগ্রস্ত, হেফাজতে থাকা লোক নই । কোনও ব্ল্যাক স্পট নেই । আমরা সাদা হাতি, অনুত্পাদক নই । আমরা দলের ডোবারম্যান, গ্রে হাউন্ড, গ্রেট ডেন । আমরা দলকে সতর্ক করি ৷ শত্রু দেখলে তেড়ে যাই ।" এর জবাবে উত্তর কলকাতায় আয়োজিত একটি বিজয়া সম্মেলনের মঞ্চে সুদীপ উল্লেখ করেন ডোবারম্যান মানুষ নয় ৷ তিনি বলেন, "ডোবারম্যান তো আর মানুষ নয়, ডোবারম্যান কুকুরই হয় । 12 বছর ধরে সংসদীয় দলের নেতৃত্ব দিচ্ছি । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরে আমিই সংসদীয় দলের নেতৃত্বে রয়েছি । কার অনুমতি নিচ্ছি, না নিচ্ছি দল বুঝবে ।" তিনি আরও বলেন, "আমি ঠিক করেছি" ৷ নাম উল্লেখ না করে তিনি জানান, কলকাতার কোনও বিধানসভা কেন্দ্র থেকে পরপর অন্তত দু'বার জিতেছে, এরকম কেউ কিছু বললেই তার উত্তর দেবেন তিনি । এভাবেই দলে তাঁর অস্তিত্ব এবং গুরুত্ব বুঝিয়ে দেন সুদীপ, "তুলমূল্য বলে তো একটা ব্যাপার আছে । এর বাইরে বাকিরা আমার কাছে নন-এনটিটি ।"
আরও পড়ুন: Trinamool Congress: বিজেপি নেতার বাড়িতে কেন গিয়েছিলেন সুদীপ, প্রশ্ন তুললেন তৃণমূলের তাপস
তাপস-সুদীপ সংঘাতের সূত্রপাত উত্তর কলকাতার বিজেপি সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষের বাড়িতে যাওয়া নিয়ে ৷ তৃণমূল সাংসদ সুদীপ যখন বিজেপি নেতার বাড়িতে যান, সেখানে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী ও কল্যাণ চৌবে ৷ এ নিয়ে তাপস রায় তাঁর বাড়িতে সাংবাদিকদের ডেকে বলেন, "দলের উচিত এঁদের শনাক্ত করা এবং এঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ৷" তারপরে সুদীপ কিন্তু 'নো কমেন্টস' বলে চুপ করেছিলেন ৷ ড্যামেজ কন্ট্রোলে মাঠে নামেন কুণাল ঘোষ ৷ তিনি তাপস রায়ের বাড়ি গিয়ে দেখা করেন ৷ তাতেও সমাধান হয়নি ৷
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই মুহূর্তে দেশের বাইরে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কোন্দল থামাতে প্রকাশ্যে কোনও উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। অন্যদিকে এই ইস্যুতে মদন মিত্র, সৌগত রায় তাপস রায়কে সমর্থন করে সংবাদমাধ্যমে তাঁদের প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন । এমনকী কানাঘুষো শোনা গিয়েছে, তৃণমূল বিধায়ককে ফোন করে সমর্থনের কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ও । যদিও কার্তিক বা তাপস কেউই এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে কিছু বলেননি ।
আরও পড়ুন: Tapas vs Sudip: 'হাতি চলে বাজার'-এর পালটা, সুদীপকে 'সাদা হাতি' বলে আক্রমণ তাপসের
এ প্রসঙ্গে তাপস রায়কে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানিয়েছেন, তাঁকে অনেকেই ফোন করেন এবং অনেকেই করছেন । দলীয় বা ব্যক্তিগত কারণে কেউ ফোন করলে তা মিডিয়ার চর্চার বিষয় হতে পারে না। তবে কার্তিকের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, তিনি তাপস রায়কে ফোন করেছিলেন ৷ তাপসকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই এও জানিয়েছেন, ব্যানার্জি পরিবারের একটা বড় অংশ নাকি এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করে । তাতে তৃণমূল সুপ্রিমো রয়েছে কি না তা অবশ্য জানা যায়নি ।