কলকাতা, 5 জুন: বালাসোরের বাহানাগা বাজারের কাছে যে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার সাক্ষী রইল গোটা ভারত তার স্মৃতি দেশবাসী হয়তো কোনওদিনও ভুলতে পারবে না। ঘটনার কমবেশি 50 ঘণ্টার মধ্যে ওই অংশের আপ ও ডাউন লাইনে আবারও শুরু হয়েছে ট্রেন চলাচল। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে যে গতকাল রাত 4টে 30 মিনিটের পর থেকে এখনও পর্যন্ত আপ ও ডাউন লাইন মিলিয়ে যাতায়াত করছে 19টি ট্রেন, যার বেশিরভাগই পণ্যবাহী ট্রেন ।
তবে এখন সবার মনেই একটা প্রশ্ন, কী কারণে হল এহেন ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা। যদিও এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থল পৌঁছে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে কমিশনার ওফ রেলওয়ে সেফটি (CRS)-এর একটি দল। অন্যদিকে এই ঘটনার পেছনে সিগন্যালিং ব্যবস্থা এবং লাইন সুইচিং ব্যবস্থার ত্রুটি ছাড়াও নাশকতার কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে কি না, সেই বিষয়ে বিস্তারিত জানতেই গতকাল ঘটনাস্থল থেকেই সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করেছেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।
তবে এই বিষয় 'ক্রিমিনাল অ্যাক্ট'-এর বিষয়টি একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না বলে মনে করেন বন্দে ভারতের স্রষ্টা সুধাংশু মানি। টেলিফোনে তিনি ইটিভি ভারতকে জানান, প্রথমদিকে কী হয়েছিল এবং কী কারণে এই ঘটনা ঘটল, এই বিষয়টি পরিষ্কারভাবে জানা না-গেলেও সময় যত কেটেছে ততই তা স্পষ্ট হয়েছে ৷ ইলেকট্রনিক ইন্টারলকিং এর ক্ষেত্রে 'মানুষের হস্তক্ষেপ' বাড়ছে। বিশেষ করে যাদের এই ধরনের কাজ করার কোনও অনুমতি নেই তারা এই ব্যবস্থাপনার সঙ্গে নানাভাবে যুক্ত হয়ে পড়ছে। যেটা বিপদের কারণ হলেও হতে পারে বলে মনে হয়। কারণ এই ইন্টারলকিং ব্যবস্থাটি এমনভাবে তৈরি যে লাইনে কোনও ত্রুটি দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে এই ব্যবস্থা 'সেফ' মোডে চলে যায়। তাই সেইদিন যদি লাইনে কোন সমস্যা দেখা দিতে তাহলে ইন্টারলকিং ব্যবস্থা তা চিহ্নিত করে রেড সিগনাল দিয়ে সেফ মোডে চলে যেত। এমনটা হলে হয়তো সেইদিন ওই দুর্ঘটনা এড়ানো যেতে পারতো।
আপাতত যেটুকু বোঝা গিয়েছে, এমনকি রেলওয়ে মন্ত্রকও মনে করছে তা হল যে সেদিন কোনওভাবে মানুষের হস্তক্ষেপ হয়েছিল। অর্থাৎ, কেউ অপরাধের মানসিকতা নিয়ে এই ইন্টারলকিং ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করেছে অথবা এমন কেউ যার হয়তো অপরাধ করার মানসিকতা ছিল না কিন্তু সেই ব্যক্তি রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে এতটাই গাফিলতি দেখিয়েছে যে, এমন একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে। এই কারণগুলি একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, "যদিও মন্ত্রক এই বিষয় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। তাই মন্ত্রকের কাছে হয়তো এমন কোনও তথ্য উঠে এসেছে যার থেকে মনে করা হচ্ছে যে হয়তো নাশকতা করার মানসিকতা থেকেই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তাই সিবিআই-র তদন্তের রিপোর্ট আসা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।"
বারে বারে রেল কর্মী থেকে শুরু করে আধিকারিকরা রেলে কর্মীর অভাব বলে প্রতিবাদে সরব হয়েছে। তাই কিছু সংখ্যক রেল কর্মীদের উপরে বাড়তি চাপ পড়ে যাওয়ার ফলেই তড়িঘড়ি কাজ সারার প্রবণতা থেকে যাচ্ছে কর্মীদের মধ্যে। এই বিষয় সুধাংশু মানি মনে করছেন, কর্মী সংখ্যা কম সেটা কারণ নয় কিন্তু ট্র্যাকের অবস্থা তেমন ভালো নয় ৷ কিন্তু পরের ট্রেনটিকে দ্রুত চালাবার জন্য লাইনের কাজ খুব তাড়াতাড়ি করতে হচ্ছে এবং কর্মীরা খুব তাড়াহুড়ো করছে। এর ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
আরও পড়ুন: আইসিইউ থেকে সাধারণ বেডে করমণ্ডলের চালক, মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার সহকারী চালকের
তিনি বলেন, "আমি বুঝতে পারছি যে কর্মী এবং আধিকারিকদের উপরে অনেক চাপ থাকে কিন্তু যাত্রী সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে ট্র্যাক রক্ষণাবেক্ষণের কাজ সুনিশ্চিত করতে হবে। তবে আমার মনে হয় এটা একেবারে একটা স্বতন্ত্র ঘটনা যেখানে দায়সারা ভাবে কাজ শেষ করার চেষ্টা করা হয়েছে। তাই এই ধরনের দুর্ঘটনা যাতে না হয় সেদিকে সকলকে নজর দিতে হবে এবং কোনও ত্রুটি নজরে এলে তার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করাতে হবে।"