কলকাতা, 26 ফেব্রুয়ারি : আজ শেষ হল মাধ্যমিকের মূল বিষয়গুলির পরীক্ষা ৷ আগামীকাল ঐচ্ছিক বিষয়ের পরীক্ষা থাকলেও, রাজ্যের অধিকাংশ পরীক্ষার্থীর জন্য আজই ছিল শেষ পরীক্ষা ৷ তাই পরীক্ষা শেষে তৃপ্তির হাসি নিয়ে বের হতে দেখা গেল তাদের ৷ পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে একে অপরকে আলিঙ্গন করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করল তারা ।
পরীক্ষার্থীদের চোখে-মুখে তৃপ্তির হাসি দেখা গেলেও পরীক্ষার শেষ দিনে শেষ রক্ষা হল না মধ্যশিক্ষা পর্ষদের । পরীক্ষার প্রথম দিনের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে শেষ দিনেও পরীক্ষা চলাকালীন সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ল প্রশ্নপত্র । মোবাইল ফোন নিয়ে একাধিক নিষেধাজ্ঞা, মোবাইলের ব্যবহার আটকাতে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের মতো একাধিক পদক্ষেপ সত্ত্বেও কী করে আজও প্রশ্নপত্র বেরিয়ে গেল সোশাল মিডিয়ায়? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে । এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিনে বাংলা ভাষার প্রশ্নপত্র পরীক্ষা চলাকালীন ছড়িয়ে পড়ে সোশাল মিডিয়ায় । পরীক্ষা শেষে দেখা যায়, সেই প্রশ্নপত্র মিলে গেছে আসল প্রশ্নপত্রের সঙ্গে । তারপরই মোবাইল নিয়ে আরও কড়া অবস্থান নেয় মধ্যশিক্ষা পর্ষদ । মোবাইল নিয়ে কোনও পরীক্ষার্থী পরীক্ষাকেন্দ্রে ধরা পড়লে শুধু তার সেই দিনের পরীক্ষা বাতিল নয়, বাকি পরীক্ষাগুলিতেও বসতে না পারবে না বলে জানিয়ে দেয় মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ।
এত কড়াকড়ির পরও প্রতিদিন মোবাইল সহ পরীক্ষাকেন্দ্রে ধরা পড়ছিল একাধিক পরীক্ষার্থী । মধ্যশিক্ষা পর্ষদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ভাষার পরীক্ষার দিন পশ্চিম মেদিনীপুর ও শিলিগুড়িতে দু'জন পরীক্ষার্থী মোবাইল সহ ধরা পড়ে । তাদের মধ্যে একজনের কাছ থেকে 19টি মোবাইল ফোন পাওয়া গেছিল । দ্বিতীয় ভাষার পরীক্ষার দিন উত্তর 24 পরগনা ও মালদা থেকে মোট পাঁচজন পরীক্ষার্থী ধরা পড়েছিল মোবাইল সহ । ভূগোল পরীক্ষার দিন হাওড়া, কলকাতা ও পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে তিনজন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে মোবাইল ফোন পাওয়া যায় । ইতিহাস পরীক্ষার দিন পশ্চিম বর্ধমান, উত্তর 24 পরগনা, কোচবিহার ও মালদা থেকে চারজন পরীক্ষার্থী মোবাইলসহ ধরা পড়ে । ইতিহাস পরীক্ষার দিন দার্জিলিংয়ের একটি পরীক্ষাকেন্দ্রে একজন পার্শ্বশিক্ষক পরীক্ষাকেন্দ্রে মোবাইল ব্যবহার করতে গিয়ে ধরা পড়েন । অঙ্ক পরীক্ষার দিন জলপাইগুড়ি ও উত্তর দিনাজপুর থেকে চারজন ধরা পড়ে । গতকাল ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষাতেও মোবাইল সহ ধরা পড়ে চার পরীক্ষার্থী । হুগলি, কোচবিহার ও দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে ধরা পড়ে তারা । আজ জীবনবিজ্ঞান পরীক্ষার দিনও কলকাতার বেলেঘাটা শান্তি সংঘ বিদ্যায়তন ফর বয়েজ়ের পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে একজন ও হুগলির চুঁচুড়া বালিকা বিদ্যামন্দির পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে দু'জন পরীক্ষার্থী মোবাইল সহ ধরা পড়েছে ।
পরীক্ষার শেষ দিন অর্থাৎ আজ আবার পরীক্ষা চলাকালীন বাইরে ছড়িয়ে পড়ে প্রশ্নপত্র । যা মিলে যায় আসল প্রশ্নপত্রের সঙ্গে । এত পদক্ষেপ, এত কড়াকড়ি, তারপরও পরীক্ষাকেন্দ্রে মোবাইল নিয়ে যাওয়ার পিছনে আসলে সচেতনতার অভাব নয়, অপরাধ প্রবণতাই দায়ি বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার । তিনি পরীক্ষাকেন্দ্রে মোবাইল নিয়ে ধরা পড়া ও পরীক্ষার প্রথম ও শেষ দিনে প্রশ্নপত্র সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে বলেন, " আসলে প্রযুক্তির ব্যাপারটা এত সহজ হয়ে গেছে সকলের কাছে যে, তারা এটা ব্যবহার করতে দ্বিধা করছে না, তাদের বিবেকে লাগছে না । পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন নিয়ে যাওয়া অন্যায় এবং নিষেধও করা হয়েছে সরকারিভাবে । কিন্তু, কথা কেউ যখন শুনছে না তখন তার উপযুক্ত প্রতিবিধান করার ব্যবস্থা থাকা উচিত ছিল । কারণ, অনেক সময় কোনও নির্দেশ এলে সেটা অমান্য করার ইচ্ছা হয় । সেটা যাতে ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণ করা যেত সেই ব্যবস্থাটা থাকা উচিত ছিল । এত কড়া ব্যবস্থা হয়ত করা সম্ভব হয়নি । দুর্ভাগ্যজনক । সবাই তো নয়, যে কয়েকজন ছেলে-মেয়ে এই সুযোগটা নিয়েছে, এটা অনুচিত করেছে বলে আমি মনে করি । এর পিছনে সচেতনতার অভাব রয়েছে বলে আমি বলব না । আমি বলব, ইচ্ছাকৃতভাবে অমান্য করার ব্যাপারটা । তারা জানে এটা অন্যায় । তবু, জেনেশুনে করছে । আমি বলব এর পিছনে একটা অপরাধ প্রবণতা কাজ করছে । "
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ভূমিকা নিয়ে পবিত্র সরকার বলেন, "আমি জানি না এর উপর কীভাবে খবরদারি করা যেতে পারে । আশা করি, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ আরও নিখুঁত খবরদারির ব্যবস্থা তৈরি করবে । " আজকে পরীক্ষা চলাকালীন প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা নিয়ে জানতে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি । মাধ্যমিকের প্রতিটি পরীক্ষার শেষে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে একটি বিবৃতি দেওয়া হচ্ছিল । প্রতিদিনের মতোই আজকেও দেওয়া হয়েছে সেই বিবৃতি । যেখানে বলা হয়েছে, " আজ জীবনবিজ্ঞান পরীক্ষা রাজ্যের সব জায়গায় নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়েছে । পরীক্ষা চলাকালীন কোনও প্রশ্ন হোয়াটসঅ্যাপ মারফত ফাঁস হয়নি । "