কলকাতা, 7 অগস্ট: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প স্বাস্থ্যসাথী। গোটা দেশ যখন আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের সুবিধে নিচ্ছে, সেই সময় স্রোতের উলটো দিকে হেঁটে স্বাস্থ্যসাথী চালু করেছিল রাজ্য। রাজ্যে কেন্দ্রীয় প্রকল্প চালু না করা এবং নিজস্ব প্রকল্প স্বাস্থ্যসাথীর জন্য বিরোধীদের কম সমালোচনার মুখে পড়তে হয়নি শাসক শিবিরকে। কিন্তু সরকারি তথ্য বলছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত স্বাস্থ্যসাথীর মাধ্যমে 2017 সালের জানুয়ারি মাস থেকে এ বছর জুলাই মাস পর্যন্ত গত 6 বছরে সম্পূর্ণ বিনা খরচে চিকিৎসা পেয়েছেন প্রায় 60 লক্ষ মানুষ । আর এর জন্য খরচ হয়েছে প্রায় 9 হাজার কোটি টাকা। রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, এই পরিসংখ্যান থেকেই প্রকল্পের সাফল্য প্রমাণিত হচ্ছে।
এই বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, রাজ্যের এই প্রকল্প নিয়ে কম সমালোচনা হয়নি। বহু ক্ষেত্রে অভিযোগ ছিল যে হাসপাতালগুলি স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিতে চাইছে না । ফলে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গেলেও মিলছে না সুবিধা। রাজ্য সরকার বিষয়টি নিয়ে বারংবার হাসপাতালগুলির সঙ্গে কথা বলে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছে। আর তার ফলেই এত বিপুলসংখ্যক মানুষ এই প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছে।
আসলে বিগত সময়ে ক্যানসার ও হার্ট-সহ বিভিন্ন অসুখের চিকিৎসা ক্রমেই মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছিল । সেখান থেকে সরকারি এই প্রকল্প সাধারণ মানুষের জন্য ভরসার জায়গা হয়েছে বিগত সময়ে । এই কার্ডের মাধ্যমে চিকিৎসা পেয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ । ভুলে গেলে চলবে না দুয়ারে সরকারের কল্যাণে বর্তমানে এই কার্ড হাতে পেয়েছেন 9 কোটি মানুষ । আর উপকৃত হয়েছেন 2 কোটি 43 লক্ষ পরিবার ।
রাজ্য সরকারের তরফ থেকে স্বাস্থ্যসাথী সম্পর্কিত যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাতে জানা গিয়েছে এখনও পর্যন্ত এই স্বাস্থ্যসাথীর মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ক্যানসার কেয়ারে খরচ হয়েছে । 9 হাজার কোটির মধ্যে দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে শুধুমাত্র ক্যানসার চিকিৎসায় । এরপরেই রয়েছে হৃদযন্ত্রের চিকিৎসা । এখানেও প্রায় হাজার কোটির কাছাকাছি খরচ হয়েছে । এছাড়াও স্নায়ু চিকিৎসা, ডায়ালিসিস ও অন্যান্য একাধিক ক্ষেত্র তো রয়েছেই । যত সময় যাচ্ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে স্বাস্থ্যসাথী ৷ তাই রাজ্য সরকারের তরফ থেকেও স্বাস্থ্যসাথীর বরাদ্দ আরও বৃদ্ধি করা হচ্ছে ।
সরকারি তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে 2022-23 অর্থবর্ষ পর্যন্ত প্রতিমাসে দেড় লক্ষ রোগীর বিল মেটাতো রাজ্য সরকার ৷ এর জন্য প্রায় খরচ হত 200 কোটি টাকার মতো । সামগ্রিকভাবে 12 মাসের খরচ 2 হাজার 400 কোটি হলেও বাজেট বরাদ্দ ছিল 2 হাজার 500 কোটি টাকা । কিন্তু প্রত্যেকদিনই এই প্রকল্পের উপভোক্তার সংখ্যা বাড়ছে । আর সে কারণেই বাড়ানো হচ্ছে বার্ষিক খরচও ৷ স্বাস্থ্য ভবন মনে করছে বছরের শেষে এই খাতে খরচ প্রায় তিন হাজার কোটির কাছাকাছি চলে যেতে পারে ।
আরও পড়ুন : স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় কেবল অপারেটররা, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর