কলকাতা, 27 জুলাই : জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তা গ্রহণ না করতে আবেদন জানাল রাজ্য সরকার ৷ রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসাত্মক ঘটনার তদন্তে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের যে দল এসেছিল, তার সদস্যের কেউ কেউ বিজেপি-ঘনিষ্ঠ বলে রাজ্য সরকার তার হলফনামায় দাবি করেছে কলকাতা হাইকোর্টে ৷ একাধিক সদস্যের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে ওই হলফনামায় ৷
- রিপোর্টের প্রথমেই বলা হয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন-এর (National Human Rights Commission of India, NHRC) নিযুক্ত কমিটির একাধিক সদস্য ভারতীয় জনতা পার্টির (Bharatiya Janata Party, BJP) সরাসরি সদস্য অথবা ভারতীয় জনতা পার্টির সঙ্গে যুক্ত ।
- কেন্দ্রীয় স্তরে বা অন্যান্য রাজ্যে বিজেপি-র দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনও পদাধিকারীকে এই কমিটিতে নিয়োগ করা হয়েছে । স্বাভাবিকভাবে কমিটির প্রদত্ত রিপোর্টের নিরপেক্ষতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায় ।
- রিপোর্টে দেখানো হয়েছে এই কমিটির সদস্য রাজীব জৈন (Rajiv Jain) কেন্দ্রে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো-র (Intelligence Bureau) ডায়রেক্টর হিসেবে দায়িত্ব সামলেছেন ।
- পাশাপাশি 2005-08 সাল পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন সেখানে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো দফতরের দায়িত্বে ছিলেন ।
- আতিফ রশিদ (Atif Rasheed, Vice Chairperson, National Commission for Minorities) এবিভিপি (ABVP) ছাত্র ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ছিলেন । 2021-এ বিজেপি-র টিকিটে দিল্লিতে পুরসভার নির্বাচনে লড়েছিলেন ৷
- আরেক সদস্য রাজেলবেন দেশাই (Rajulben L. Desai) গুজরাত বিজেপি মহিলা মোর্চা সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ।
- এ ছাড়া হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নিযুক্ত কমিটির সদস্য আতিফ রশিদ (Atif Rasheed) রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তদন্তের সময় সংবাদমাধ্যমে একাধিক বার সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ৷ সেখানে রাজ্যের বিরুদ্ধে তিনি যা যা বলেছেন, সে সব মিথ্যে । আতিফ সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছিলেন, তদন্তে যাওয়া গ্রামগুলিতে নাকি তৃণমূল কর্মীরা আগেভাগে গ্রামের মহিলাদের মানবাধিকার কমিশনের কমিটির সদস্যদের উপর কী ভাবে ইট ছুড়তে হয়, সেই কৌশল শিখিয়েছে ।
যদিও বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর কিছু কিছু হিংসার ঘটনার কথা রাজ্য সরকার এই হলফনামায় স্বীকার করেছে । পাশাপাশি সরকার এই দাবিও করেছে যে, রাজ্য সরকারের উদ্যোগে 5 মে-র পর থেকে হিংসাত্মক ঘটনা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে গিয়েছিল ৷ তা সত্ত্বেও গোটা রিপোর্ট জুড়ে আগাগোড়া মিথ্যা অভিযোগ সাজানো হয়েছে । রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, সাধারণ মানুষ নাকি ভয়ে কথা বলতে পারছিলেন না । পুলিশের সম্পর্কে তাঁদের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে । কিন্তু পুলিশ বহু অভিযোগ গ্রহণ করেছে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে হলফনামায় দাবি করেছে রাজ্য সরকার । যদি এই তদন্ত নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিতে করা হত, তাহলে এটা সুস্পষ্ট হত যে, যাঁরা বিতাড়িত হয়েছিলেন, তাঁরা প্রত্যেকেই শান্তিতে ফিরেতে পেরেছেন আর ভালোভাবেই রয়েছেন ৷
হলফনামায় বলা হয়েছে, 18 জুন কলকাতা হাইকোর্ট কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছিল জনগণের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরেছে কি না সেটা দেখার জন্য। কোন কোন পুলিশ অফিসাররা নিষ্ক্রিয় রয়েছেন এখনো, সেগুলো খতিয়ে দেখার পাশাপাশি সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বলা হয় । জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সেই পরিপ্রেক্ষিতে সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করেছে । পাশাপাশি আক্রান্তদের অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য রাজ্যের বাইরে আদালত তৈরি করে বিচার করার সুপারিশ করেছে । মানবাধিকার কমিশন নিযুক্ত কমিটির এই অধিকার নেই । আসলে এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তিরা নতুন করে সমস্যার সম্মুখীন হবেন । নতুন করে তাদের সমস্যার মধ্যে ফেলা হবে। এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন রিপোর্টে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অত্যন্ত ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল। পুলিশ কার্যত কিছুই করেনি বলে অভিযোগ করা হয়েছিল রিপোর্টে। কিন্তু রাজ্যের তরফে যে হলফনামা দেওয়া হয়েছে আদালতে তাতে শতাধিক উদাহরণ তুলে দেখানো হয়েছে মানবাধিকার কমিশন রিপোর্টে যে সমস্ত তথ্য দিয়েছে তাতে বিস্তর গলদ রয়েছে । পাশাপাশি পুলিশ যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তার বিবরণ দেওয়া হয়েছে ।
হলফনামায় আরও বলা হয়েছে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টে রাজ্যের শাসকদল শুধুমাত্র ভোট-পরবর্তী হিংসার ঘটনা ঘটিয়েছে বলে যে উল্লেখ করা হয়েছে এর কোনও ভিত্তি নেই। যে সমস্ত আক্রান্তরা বিজেপির সদস্য, ভারতীয় জনতা পার্টির সাথে যুক্ত সেই সমস্ত ব্যক্তির বাড়িতে ভিজিট করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন নিযুক্ত কমিটির সদস্যরা । অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সদস্যরাও যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের সাথে সদস্যরা দেখা করেনি । অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে তাই বলতেই হচ্ছে যে এই কমিটি সম্পুর্ণ ভারতীয় জনতা পার্টির এজেন্ট ছাড়া আর কিছু নয় ।