কলকাতা, ২৫ অগাস্ট : যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এগজ়িকিউটিভ কাউন্সিলে উচ্চশিক্ষা সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন যাদবপুরের ইংরেজির অধ্যাপক মনোজিৎ মণ্ডল । তাঁকে সেই পদ থেকে সরানো হয়েছে বলে আজ জানান শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় । তাঁর পরিবর্তে উচ্চশিক্ষা সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধি করা হয়েছে B.Ed বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়কে । শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য, এটা রুটিন পরিবর্তন । এর সঙ্গে মনোজিৎ মণ্ডলের স্ত্রী বৈশাখি বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক যোগের কোনও সম্পর্ক নেই । যদিও শিক্ষামন্ত্রীর এই যুক্তি মানতে নারাজ মনোজিৎ মণ্ডল । বৈশাখি বন্দ্যোপাধ্যায় BJP-তে যোগ দিয়েছেন বলেই তাঁকে সরানো হয়েছে বলে মনে করছেন । এই ঘটনায় তিনি অপমানিত ও মর্মাহত বলে মন্তব্য করেন ।
মনোজিৎ মণ্ডলকে নির্বাচিত প্রতিনিধি পদ থেকে সরানো নিয়ে প্রশ্ন করা হলে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "আমার যতদূর ধারণা দু'বছর হয়ে গেছিল তাঁর । আমার দপ্তর থেকে তো প্রত্যেক জায়গাতেই পরিবর্তন আনা হয়েছে । শুধু তাঁর পদে তো নয় । অন্য বিশ্ববিদ্যালয়তেও পরিবর্তন এনেছি । এটা রুটিন । মনোজিৎবাবু বলে এই পরিবর্তনটা হয়েছে এমন ভাবার কোনও কারণ নেই । অন্যদেরও তো সুযোগ দিতে হবে । এটা রুটিন, এর মধ্যে রং খোঁজার ব্যাপার নেই । উনি তো আমাদের সংগঠনেরই যাদবপুরের প্রধান । সুতরাং, তিনি অপমানিত হবেন এরকম কাজ হবে না । এর আগেও তো আরেকজন ছিলেন ৷ তিনিও তো চলে গেছেন ৷ তিনি চলে যাওযার পরই তো মনোজিৎ মণ্ডলকে ওই পদে আনা হয়েছিল । এখন মনোজিৎ মণ্ডলকে দীর্ঘসূত্রতার জন্য সরানো হয়েছে । নতুন যাঁকে দায়িত্বে আনা হয়েছে, তিনি তো আরও ভালো । একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য । অসুবিধা কী আছে ।"
এই সংক্রান্ত আরও খবর পড়ুন : "রত্না ষড়যন্ত্র করছেন", নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশ কমিশনারকে মেইল শোভনের
হঠাৎ করে তাঁকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এগজ়িকিউটিভ কাউন্সিলের উচ্চশিক্ষা সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধি পদ থেকে সরানো নিয়ে মনোজিৎ মণ্ডল বলেন, "হঠাৎ করে এটা বুঝলাম না । আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়নি । ব্যাপারটা খুবই অপমানজনক এবং দুঃখজনক । আমি তো এটা যেচে পড়ে নিইনি । আমাকে দেওয়া হয়েছিল পদটা । এখন এটা করা হয়েছে নিশ্চয়ই রাজনৈতিক কারণে । ভেবেছে আমি হয়ত BJP হয়ে গেছি, সেই কারণেই করেছে । সেটার জন্যই ডিপ্রেশন । সরাতেই পারেন ইচ্ছে করলে । কিন্তু, সরানো যখন হল, তখন লোকের কাছে এটা পরিষ্কার যে যেহেতু বৈশাখি বন্দ্যোপাধ্যায় গেছেন BJP-তে সেইজন্যেই এই পদক্ষেপ । আমি এক বছর আগে ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম ৷ তখন সরালে কোনও সমস্যা ছিল না । কিন্তু, এখন এটা এই জন্য অপমানজনক যে আমার স্ত্রী যা করবেন তার জন্য আমাকে সরাতে হবে । সরানোতে কিছু যায় আসে না । এটা তো মাইনে করা কোনও পোস্ট নয় । তাঁর যখন মনে হয়েছে আমি পছন্দের ছিলাম তখন ছিলাম । এখন অপছন্দ হচ্ছে কারণ যেহেতু বউ BJP-তে চলে গেছে । ঢাক ঢাক গুড় গুড় করে তো কোনও লাভ নেই । সরানোটা কোনও ফ্যাক্টর নয় ।"
সম্প্রতি শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখি বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে গিয়ে BJP-তে যোগ দিয়েছেন । সেই কারণেই কি বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বামীকে সরানো হল পদ থেকে? এই বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "বৈশাখি বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বামী কী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবী তা নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না । সেটা আমার দেখার কাজও নয় । আমার শিক্ষা দপ্তরের পরিবর্তনের রুটিন মাফিক ফাইল আসে, আমি সই করি । সুতরাং এইভাবে আমি কোনওদিন ভাবি না ।"
যদিও শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য মানতে নারাজ মনোজিৎ মণ্ডল । তিনি বলেন, "ওসব বলে তো লাভ নেই । তাহলে আমাকে এক বছর আগে সরানো না কেন? চার বছরের টার্ম তো । আমার সঙ্গে কথা বলেননি কেন একবার? বলতেই পারতেন, তুমি ছেড়ে দাও । আমি তো যেচে নিতে যাইনি পদটা । কী ভেবেছে যে আমরা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা সব চাকর নাকি? যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা কোনও সরকারের চাকর-বাকর হবে না কোনওদিন।"