কলকাতা, 15 ডিসেম্বর: সংসদে স্মোক বোমা অ্যাটাক। এই ঘটনায় অভিযুক্তের সঙ্গে আবার বাংলা যোগ। ঘটনার পর থেকেই বিরোধী শিবির সরব হয়েছে। সরব রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসও। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও বিষয় নিয়েই মুখ খোলেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এই নিয়েই এবার প্রশ্ন তুলে দিয়েছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। ললিত ঝা'র বাংলা যোগকে সামনে রেখে উলটে বিজেপির আক্রমণের লক্ষ্য বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। আর এই অবস্থায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীরবতা নিয়েই তারা প্রশ্ন তুলছেন।
এদিন সংসদের স্মোক অ্য়াটাক থেকে শুরু করে, অভিযুক্তদের বাংলা যোগ সব নিয়েই এ রাজ্যের বিরোধীরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ শানিয়েছেন। কংগ্রেস-সিপিএম অথবা বিজেপি তারা রীতিমত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীরবতা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন। এদিন সিপিএম নেতা শমীক লাহিড়ী বলেন, "আরএসএসের অঙ্গুলী হেলনে চলছেন তৃণমূল নেত্রী। আর তাই চুপ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংসদে এত বড় ঘটনা ঘটে গেল একটি শব্দ খরচ করেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিছুই বলেননি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৷ একইভাবে তাঁর দল সরব হলেও মুখ খোলেননি মমতা।" এখানেই মোদি-শাহের পাশাপাশি মমতাও যে আরএসএস-এর অঙ্গুলি হেলানে চলছে, এমনটাই বলেছেন বলছেন এই সিপিএম নেতা। এদিন তিনি বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আরএসএস-এর যোগ সকলেই জানে। তিনি আরএসএস-এর নির্দেশে চলেন, ফলে অমিত শাহও চুপ, নরেন্দ্র মোদিও চুপ। চুপ মমতাও। পার্লামেন্টের নতুন বিল্ডিং-এর সুরক্ষা যে কিছুই নেই তা তো বোঝা গেল। আটটা কনস্টেবল সাসপেন্ড হয়েছেন। কিন্তু সিকিউরিটি ইনচার্জ কী করছিল ?"
এদিন একইভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেস নেতা সৌম্য আইচ রায়। তিনি বলেন, "সারা ভারতবর্ষে এই ঘটনায় যেখানে নিন্দা জানানোর কোনও ভাষা নেই। দলমত নির্বিশেষে সব দল এর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেছে। ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক চরম ব্যর্থ। সাত স্তরীয় সিকিউরিটি লঙ্ঘন হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গেও তার যোগসূত্র পাওয়া যাচ্ছে। ভৌগোলিক কারণে পশ্চিমবঙ্গকে এখন ট্রানজিট স্ট্যান্ড হিসাবে দেখছেন উগ্রবাদীরা। তাহলে কি এদের সঙ্গে কোনও যোগ আছে ? আমরা দেখছি সমস্ত দলের নেতা-নেত্রীরা নিন্দা করছেন। আগের মতো করে প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু একটা জিনিস দেখা যাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো কিন্তু একটি কথাও বলছেন না। তাহলে এটা ধরে নিতে হবে 20 তারিখে যে আলোচনা হবে তার আগে তিনি দিল্লির দাদাদের চটাতে চাইছেন না। তাহলে ধরে নিতে হবে সেটিং এর পূর্ণাঙ্গ ছবি। আসলে কস্টিক সিমড্রমে ভুগছেন মুখ্যমন্ত্রী। একদিকে তিনি যখন বলেন জাতীয় ক্ষেত্রে ইন্ডিয়া জোটে আমিই নেতা আমিই মুখ। তাহলে এখন কেন চুপ !"
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীরবতা নিয়ে তাঁকে আক্রমণ করতে ছাড়েনি বিজেপিও। বিজেপি নেতা অমিত মালব্য সরাসরি সংসদে অনুপ্রবেশে বাংলা যোগে মমতার নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সোশাল মিডিয়ায় তিনি লিখেছেন, "আমাদের সংসদে হামলার মাস্টারমাইন্ড ললিত ঝা। সে তৃণমূল নেতা তাপস রায়ের ঘনিষ্ঠ। দীর্ঘদিন তাদের দু'জনের মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে। তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য এই প্রমাণ কী যথেষ্ট নয় ! ললিত ঝা'র সঙ্গে তৃণমূল নেতা তাপস রায়ের যোগাযোগ রয়েছে। এনিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চুপ করে থাকতে পারেন না।"
এর পালটা জবাব দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষও। তিনি বলেন, "বিজেপি নেতা অমিত মালব্য তাদের সাংসদ প্রতাপ সিম্বাকে অহেতুক বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। বিজেপি কতটা নীচে নামলে এ ধরনের কাজ করতে পারে বলছেন তিনি।" তিনি আরও বলেন, "জাতীয় নিরাপত্তাকে উপেক্ষা করার জন্য বিরোধীরা যেভাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে সরব হয়েছেন সেই ভয় থেকেই এসব করছে বিজেপি। জবাবদিহি এড়াতে প্রতিহিংসার রাজনীতি চরিতার্থ করতে আর কত নীচে নামবে বিজেপি !"
আরও পড়ুন
সংসদ হামলার 'মাস্টার মাইন্ড' ললিতের সঙ্গে তাপস রায়ের ছবি ! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিবৃতি দাবি মালব্যর
সুপ্রিম কোর্টে পিছিয়ে গেল মহুয়া মামলার শুনানি, আগামী বছর মামলা শুনবে শীর্ষ আদালত
যৌন হেনস্তার অভিযোগ, স্বেচ্ছামৃত্যু চেয়ে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি মহিলা বিচারকের