তমলুক, 18 নভেম্বর : শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে জল্পনা চলছেই । এরই মাঝে একটি কল রেকর্ডিং সামনে এসেছে । তাতে যার একপ্রান্তে গলা শোনা যাচ্ছে তমলুকের পদুমপুর‑2 গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন তৃণমূল সভাপতি শৈলেন মাইতির ৷ অন্তত দাবি এমনটাই। আর অপর প্রান্তে সুব্রত বক্সি রয়েছেন বলে শৈলেন মাইতির দাবি । সেখানে শুভেন্দুর নাম না করে তাঁকে বলতে শোনা গেছে, "আমরা তাড়িয়ে দিলে ও শহিদ হয়ে যাবে ৷’’ ETV ভারত রেকর্ডিংটির সত্যতা যাচাই করেনি ৷ অপর প্রান্তে যিনি রয়েছেন, অডিও ক্লিপটির সত্যতা যাচাই করতে ETV ভারতের তরফে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু, তিনি কিছু বলতে চাননি।
শৈলেন মাইতির দাবি, গতকাল তিনি সুব্রতবাবুকে ফোন করেছিলেন ৷ পরে সেই কল রেকর্ডিংটি দলের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে শেয়ার করেন ৷ কী আছে ওই কথোপকথনে ? শৈলেনবাবু প্রথমে ফোন করে নিজেদের অসহায়তার কথা অপর প্রান্তে যিনি আছেন তাঁকে বলেন । এরপর অপর প্রান্ত থেকে জবাবে বলা হয়, ‘‘আপনারা সিম্বলের সঙ্গে থাকুন । একজোট হয়ে থাকুন । উনি সিম্বল ছেড়ে কথা বলুন, মন্ত্রিত্ব ছেড়ে কথা বলুন । আজ মন্ত্রীর স্ট্যাম্প আছে, হলদিয়া উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান, HRBC-র চেয়ারম্যান, বাড়িতে দু’জন সংসদ সদস্য রয়েছেন, পৌরসভার চেয়ারম্যান আছেন, দু'টি দপ্তরের দায়িত্ব নিয়ে আছেন । তারপরও লালন পালন করতে হবে? এটা তো ঠিক নয় । 1999 সালে যোগ দিয়েছে ৷ 2000 সালে পৌরসভা তোমাদের হয়ে গিয়েছে । তারপর থেকে চলতে চলতে এসেছে । 2001 সালে দু’খানা বিধায়ক । 2006 সালে দু’খানা বিধায়ক । 2009 সালে দু’খানা সাংসদ । কোথায় পাবে? দিদির হাত মাথায় ছিল বলে আজ ওই জায়গায় পৌঁছেছে ।’’
এরপর তমলুকের ওই তৃণমূল কর্মী বলেন, ‘‘স্যার আপনারা ওঁকে বাড়িয়েছেন ।’’ উত্তরে অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়, ‘‘আমি মানছি, আমরাই ওঁকে বাড়িয়েছি । তোমরা নিজেরা শুধু দল বেঁধে ধৈর্য ধরে থাকো ।’’ ওই কর্মী বলেন, ‘‘আমরা আছি স্যার । দলের সঙ্গে আছি । আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।’’ অপর প্রান্ত থেকে পালটা বলা হয়, ‘‘চ্যাপ্টার শেষ হলে আমি গিয়ে পৌঁছাব । নিশ্চিন্তে থাকো । আমরা সবরকম চেষ্টা চালাচ্ছি । তোমাকে রেখেই করব, তার মানে এই নয় তোমার কাছে দল বিক্রি করব । নন্দীগ্রামে মিটিংয়ের দিন চার ঘণ্টার নোটিসে আমাদের শক্তি পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে । এরপর যদি মমতাদি নন্দীগ্রামে দাঁড়ান সকলে তাঁর মিটিংয়ে হাজির হবে । তুমি একটি এলাকার বিধায়ক তথা মন্ত্রী । আমফানের পর ওই এলাকায় কে যাবে ? কলকাতা থেকে নেতারা যাবে না রাস্তার লোক যাবে ? তোমার তাহলে কাজ কী ? খালি মন্ত্রী হয়ে ঘুরে বেড়াবে ?’’
এরপর ওই তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘তমলুকের একটা ছেলেকেও উনি চাকরি দেননি । যা করেছেন সব নন্দীগ্রামে ।’’ তখন অপর প্রান্তের ব্যক্তি বলেন, ‘‘চাকরি বাদ দাও, যখন দল করেছে, তখন হলদিয়ায় আচমকা মিলনকে নিয়ে এল । মিলন যেই ওর কথা শুনল না, তাকে জেল খাটিয়ে দিল ।’’ তখন ওই তৃণমূল কর্মী বলেন, ‘‘আগামী দিনে ওই অবস্থা ওঁরও(শুভেন্দু অধিকারী) হবে, যা করছে ।’’ অপর প্রান্তের ব্যক্তি তাতে প্রথমে সম্মতি জানিয়ে, হ্যাঁ বলেন । পরেই বলেন, ‘‘যাই হোক আমি সেটা চাই না । আমরা ওঁকে "শহিদ" করব না । ও কতদূর চলে দেখা যাক । তারপর আমাদের হিসেব যা আছে তাই হবে । পথেঘাটে আলোচনা করুন, আর কত চায়!’’ এরপর ওই তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘কী বলুন তো বিরোধীরা কটাক্ষ করে । দিদির না দাদার ?’’ জবাবে সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘হ্যাঁ আমাদেরও খারাপ লাগে । মন্ত্রিত্ব রেখেই তো সব করছে ? এটা ওঁর নৈতিকতার বিষয় । আমি সংসারে আছি । বাবা ও মাকে রোজ লাথি, ঝাঁটা মারব ? যা-ই হোক আপনারা একসঙ্গে থাকুন । চায়ের দোকান, পানের দোকানে মানুষকে এককাট্টা করুন ।’’
তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় ETV ভারতের তরফে ৷ কিন্তু এই বিষয়ে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি ৷ একই সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় সাংসদ শিশির অধিকারীর সঙ্গেও ৷ তিনিও এই বিষয়ে কিছু বলতে রাজি ছিলেন না ৷ শুধু বলেন, ‘‘এটা ওঁর কথা উনি বলতে পারবেন ৷ আমি কিছু বলব না ৷’’