কলকাতা, 26 মে: সারারাত অবস্থান বিক্ষোভ কলেজ স্কোয়্যারে ৷ বৃহস্পতিবার রাতে এসএফআই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি রাত জেগে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করে ৷ আজ, শুক্রবারও এই অবস্থান চলবে ৷ নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি বা এনইপি এবং ইউজিসির সাম্প্রতিক সার্কুলার, বাতিল-সহ শিক্ষাক্ষেত্রের উপর লাগাতার আক্রমণের বিরুদ্ধে এভাবেই প্রতিবাদে সামিল এই বাম ছাত্র সংগঠন ৷
বৃহস্পতিবার কলেজ স্কোয়্যারে এসএফআইয়ের অবস্থান শুরু হয় দুপুর 3টে নাগাদ ৷ ছাত্রদের মিছিল ওই এলাকা পরিক্রমা করে ৷ এরপর সেই বিক্ষোভে বিভিন্ন জেলার ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা সামিল হয় ৷ এদিন বাম ছাত্রসংগঠনের বিক্ষোভ মঞ্চে এসে পড়ুয়াদের পাশে থাকার বার্তা দেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সমাজকর্মী, গণআন্দলনের কর্মীরা ৷ অবস্থানে প্রথমে বক্তৃতা দেন অভিনেতা চন্দন সেন ৷ এরপর শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার, কবি মন্দাক্রান্তা সেন, শিক্ষাবিদ অম্বিকেশ মহাপাত্র, অভিনেতা দীপাঞ্জন ভট্টাচার্য প্রমুখ বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত হন ৷ ছিলেন এসএফআই নেতৃত্ব প্রতীকউর রহমান, সৃজন ভট্টাচার্য প্রমুখ ৷
অবস্থান মঞ্চে ছাত্রনেতৃত্বের বক্তব্যে উঠে এসেছে শিক্ষার সাম্প্রদায়িকীকরণ, লাগামহীন বেসরকারিকরণ, সিলেবাস বিকৃতি-সহ নানা প্রসঙ্গ ৷ এই মঞ্চ থেকে বিজেপি সরকারের চাপিয়ে দেওয়া এই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আগামী দিনে ছাত্র-গবেষক-শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-অভিভাবক-সহ সমাজের বৃহত্তর অংশকে ঐক্যবদ্ধ করার ডাক দিয়েছে এসএফআই ৷ আরও বৃহত্তর পরিসরে আন্দোলন গড়ে তোলার বার্তা দিয়েছে এসএফআইয়ের নেতৃত্ব ৷
এসএফআই স্পষ্ট জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের এই শিক্ষানীতি এবং ইউজিসির রাজ্য সরকারকে পাঠানো সার্কুলারের মধ্যে দিয়ে শিক্ষার বেসরকারিকরণ করা হচ্ছে ৷ লাভজনক সংস্থাগুলিকে সুযোগ পাইয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে ৷ এদিকে তৃণমূল সরকার এর বিরোধিতা না-করে আদতে সেই প্রচেষ্টাকেই বাস্তবায়িত করতে চাইছে ৷ তাদের দাবি, বিজেপি-বিরোধিতার প্রশ্নে সামনের সারিতে লড়াই করছেন বামপন্থীরাই ৷
এসএফআই-এর আরও অভিযোগ, বিজেপির বহু আগেই রাজ্য সরকার ডারউইনের তত্ত্ব-সহ বিভিন্ন বিজ্ঞানসম্মত এবং যুক্তিসিদ্ধ বিষয়গুলিকে সিলেবাস থেকে বাদ দিয়েছে ৷ রাজ্যজুড়ে পিপিপি মডেলকে কার্যকর করতে চাইছে ৷ তৃণমূল সরকারের উদ্যোগে এটা পরিষ্কার যে, তারা আদতে বিজেপির পরিকল্পনাকেই পরিপুষ্ট করছে ৷
শিক্ষাব্যবস্থাকে কর্পোরেট স্বার্থের অনুকূলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে ৷ শিক্ষাক্ষেত্রে অবাধ টেন্ডারবাজি, ছাত্রছাত্রীদের স্বাভাবিক লেখাপড়ার রুটিনকে ভেঙে দিয়ে অবৈজ্ঞানিক রুটিন এবং কারিকুলাম তৈরির চেষ্টা হচ্ছে ৷ নতুন পরীক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে ছেলেমেয়েদের উপর চাপ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে ৷
স্কুলশিক্ষা এবং প্রাথমিক শিক্ষার পরিকাঠামোকে ভেঙে দেওয়ার চক্রান্তের বিরুদ্ধে সরব হন এসএফআই নেতৃত্ব ৷ রাজ্যের 8 হাজার 207টি স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়া, মিড ডে মিল-সহ বিভিন্ন প্রকল্পে লাগামহীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে সমাজের সর্বস্তরে আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক দেন এসএফআই কর্মীরা ৷ বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যে দাবি নিয়ে এসএফআই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি এনইপি লাগুর বিরুদ্ধে লড়াই করে চলেছে, তাতে মুখ্য স্লোগান- 'বাংলার মাটি দূর্জয় ঘাঁটি লড়াই করেই বাঁচতে চাই, হীরকরাজের শিক্ষানীতির এই বাংলায় ঠাঁই নাই' ৷
আরও পড়ুন: ডিওয়াইএফআই-এসএফআইয়ের অভিযান ঘিরে ধুন্ধুমার কোচবিহারে