কলকাতা, 5 এপ্রিল : আজ রাত ন'টায় নয় মিনিটের জন্য ঘরের সব আলো বন্ধ করে প্রদীপ-মোমবাতি জ্বালানোর আবেদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । তাঁর এই আবেদন অবৈজ্ঞানিক । এই মর্মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ই-মেল করল SFI-র যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় লোকাল কমিটি । পাশাপাশি, কোরোনা মোকাবিলায় একাধিক দাবিও জানানো হয় মেল করা এই চিঠিতে ।
প্রদীপ-মোমবাতি জ্বালানোর আবেদনের অবৈজ্ঞানিকতা নিয়ে SFI-র যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় লোকাল কমিটির সম্পাদক দেবরাজ দেবনাথ বলেন, "গত পরশু আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী আজ পাঁচ তারিখ রাত ন'টায় নয় মিনিটের জন্য ঘরের আলো বন্ধ করে প্রদীপ-মোমবাতি জ্বালিয়ে এমন একটি বাতাবরণ তৈরি করার কথা বলেন যাতে কিনা আমাদের সবার আত্মবিশ্বাস বাড়বে । কোরোনা ভাইরাস মোকাবিলায় এটা খুব অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বলে গোটা দেশের একটা বড় অংশ প্রধানমন্ত্রীর এই ভিডিয়োবার্তার পর মনে করছেন । আমরা এর আগেও দেখেছি কীভাবে জনতা কারফিউর দিন প্রধানমন্ত্রী বিকেল পাঁচটার সময় থালা-বাসন, কাঁসর বাজানোর আহ্বানের মধ্য দিয়ে কী বাজে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল । তাতে এটা স্পষ্ট যে কোনওভাবেই কোরোনা ভাইরাসের মোকাবিলায় কোনও বৈজ্ঞানিক বা কুসংস্কারমূলক পদ্ধতি কাজে আসতে পারে না । সামাজিক দূরত্ব এবং লকডাউনকে সব দিক থেকে সফল করার মধ্য দিয়েই একমাত্র কোরোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে মানব প্রজাতির লড়াইকে আমরা চালিয়ে নিয়ে যেতে পারব । গোটা দেশের চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানীরা বারবার করে এই কথাই বলছেন ।"
দেবরাজ দেবনাথ আরও বলেন, "সরকারের পাশে সরকারকে সাহায্য করার জন্য আমরা প্রথম থেকেই আছি । তবে, বৈজ্ঞানিক পদক্ষেপের সঙ্গে । কোনও অবৈজ্ঞানিক পদক্ষেপের সঙ্গে আমরা নেই । তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি, কোনওরকম অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি চাপিয়ে দিয়ে গোটা দেশকে একটা বাজে পরিস্থিতির মধ্যে না ফেলে দেওয়া হয় ৷" এছাড়া, কোরোনা মোকাবিলায় লকডাউনের কারণে দেশের অর্থনীতির দুরবস্থা, গরিবদের অবস্থা, চিকিৎসক-নার্সদের সুরক্ষায় ঘাটতির অভিযোগও তুলে ধরা হয় ই-মেলে । তিনি বলেন, "এটা আমাদের চোখে অবশ্যই পড়ছে যে কীভাবে এই অপরিকল্পিত লকডাউনের কারণে প্রতিশ্রুতির পরও দেশের অর্থনীতি ভয়ানক সেটব্যাকের মধ্যে পড়েছে এবং তার মধ্যে দিয়ে দেশের একটা বড় অংশের গরিব, দুস্থ মানুষ, দিনমজুর, খেটে খাওয়া লোক ভয়ানক বিপদের মধ্যে পড়েছে । 21 দিনের থাকা-খাওয়ার সংস্থান তাঁরা ক্রমশ হারাচ্ছে । এই সমস্ত তা মাথায় রেখে কোরোনা ভাইরাসের মোকাবিলায় গোটা দেশের চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসা পরিষেবা সঙ্গে যুক্ত মানুষজনই আমাদের সব থেকে বড় ভরসা । তাঁদের সুরক্ষার কিট অপর্যাপ্ত পরিমাণে আছে । তাঁদের সুরক্ষার ব্যবস্থা সব জায়গায় ভালোভাবে হচ্ছে না । তা সত্ত্বেও আমাদের দেশ থেকে প্রয়োজনীয় স্যানিটাইজ়ার, মাস্ক বাইরে রপ্তানি করা হচ্ছে ।"
এইসব অভিযোগের ভিত্তিতে SFI-এর তরফে জানানো হয়েছে, বেশ কয়েকটি দাবি । এই দাবিগুলি নিয়ে দেবরাজ দেবনাথ বলেন, "আমাদের কিছু স্পষ্ট দাবি আছে । সেই দাবিগুলো আমরা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে মেল করেছি । প্রথমত, যারা দুস্থ, যারা গরিব তাঁদের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করতে হবে । থাকা, খাওয়া, জলের মতো সুবিধা যাতে এই অংশের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায় সরকারের তরফে সেই ব্যবস্থা করতে হবেই । দ্বিতীয়ত, চিকিৎসক, নার্স এবং চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত যে মানুষ আছে, যারা দিনরাত এক করে পরিশ্রম করছে কোরোনা রোগীদের সেবায় এবং এই ভয়ানক পরিস্থিতির মোকাবিলায়, তাঁদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে । তৃতীয়ত, রোজ যে কোরোনার পরীক্ষা হচ্ছে সেই পরীক্ষার পরিমাণ অপর্যাপ্ত । আমরা অন্যান্য দেশের সঙ্গে মিলিয়ে দেখলেই বুঝতে পারব সেটা । সেখানে আমাদের দাবিটা স্পষ্ট যে, টেস্টের পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে । তার জন্য প্রয়োজনীয় কিট সরকারের তরফে ব্যবস্থা করতে হবে । চতুর্থত, কোরোনার টেস্টিং বিনামূল্যে করতে হবে । বেশিরভাগ দেশেই এটা বিনামূল্যে করা হচ্ছে । ভারতের মতো দেশে সরকারের এটা কর্তব্য যে এই টেস্টটাকে বিনামূল্যে করার ।"